আ’লীগ দেশের মানুষের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করছে— মীর্জা ফখরুল

আপডেট: নভেম্বর ৫, ২০২১
0

ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ানোর পেছনে সরকারের যুক্তি ‘গ্রহনযোগ্য নয়’ বলে মন্তব্য মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শুক্রবার বিকালে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ‘‘এই সরকার কতটা দায়িত্ব জ্ঞানহীন হলে, কতটা জনগনের সঙ্গে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হলে তারা এই রকম অমানবিক একটা( ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য বৃদ্ধি) সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। একদিকে বাংলাদেশে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ানো হলো। আর পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে পাঁচ টাকা কমিয়ে দেয়া হয়েছে।”

‘‘ যুক্তিটা কী দিয়েছে? আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়েছে। আর আন্তর্জাতিক বাজারে যখন তেলের দাম কমে গিয়েছিলো তখন তুমি তেলের দাম বেশি নিয়েছো কেনো? তখন তো কম নাও নাই। তখন ওই টাকা চুরি করেছো তোমরা। এখন আবার যেটা করছো তাতে আমাদের(জনগন) পকেট কেটে তোমাদের পকেট ভরাচ্ছো।”

দেশের বর্তমান অবস্থাকে ‘দুঃশাসন’ এর নমুনা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আজকে দেখুন এমন একটা দুঃশাসনের কবলে পড়েছি যে, আপনি যদি আজকের খবরের কাগজ খু্লে দেখেন, কতগুলো খবর দেখবেন- ডিজেল ও কেরোসিনের দাম এক রাত্রে হঠাত করেই ১৫ টাকা বাড়িয়ে দেয়া হলো। যেখানে ছিলো ৬৫ টাকা সেটা করা হলো ৮০ টাকা, যেটা ছিলো ৫৫ টাকা সেটা করা হয়েছে ৮০ টাকা।”

‘‘ এলপিজির দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আর প্রতি কেজি বছর বিদ্যুতের দাম তিন বার চার বার করে লাফিয়ে লাফিয়ে উঠে। বাজারে যাবেন কোনো কিছু কেনার জো নেই। প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়ে গেছে।”

জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে পরিবহন ধর্মঘটের প্রসঙ্গে টেনে তিনি বলেন, ‘‘ ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়িয়ে দিয়ে কী করল…। আজ থেকে স্টাইক হচ্ছে। ট্রাক ও বাস বন্ধ। কাল থেকে দেখবেন ওই বাস মালিকরা বলবে যে, ভাড়া বাড়াও, ভাড়া না বাড়ালে আমরা গাড়ি চালাতে পারবো না। ট্রাকওয়ালা বলতে আমাদের আরো বেশি করে ভাড়া দিতে হবে না হলে আমরা ট্রাক চালাতে পারবো না।”

‘‘ অর্থাত আপনার যে কাঁচা বাজার, আপনার যে চাল-ডাল-চিনি-তেল-লবন আছে সমস্ত কিছুর দাম বাড়তে থাকবে। এই সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ধবংস করছে, বাংলাদেশের রাজনীতিকে ধ্বংস করেছে। এখন তারা মানুষের ভবিষ্যতকে ধবংস করছে।”

স্থানীয় সরকারের ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনী সহিংসতার কথা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ এই যে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হচ্ছে। সেখানে তো বিরোধী দল মাঠে কেউ নাই। তারা তারাই। যেখানে নিজেরাই মারামারিতে ৮৭ জন মৃত্যু বরণ করেছে। নির্বাচন ব্যবস্থাকে তারা ধবংস করেছে।”

প্রয়াত নেতা সাদেক হোসেন খোকাকে ‘আপাদমস্তক একজন দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদ’ অভিহিত করে তার মতো নেতা হিসেবে গড়ে উঠার জন্য তার জীবন-দর্শন অনুসরণ করতে দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রতি আহবান জানান বিএনপি মহাসচিব।

রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিন বিএনপির যৌথ উদ্যোগে ঢাকার সাবেক মেয়র প্রয়াত সাদেক হোসেন খোকার দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়।

২০১৯ সালের ৪ নভেম্বার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে স্লোয়ান ক্যাটারিং ক্যানসার সেন্টারে চিকিতসাধীন অবস্থায় মারা যান সাদেক হোসেন খোকা। ৭ নভেম্বর তার মরদেহ দেশে এনে জুরাইন কবরাস্থানে সমাহিত করা হয়।

সাদেক হোসেন খোকা একান্তরের মুক্তিযুদ্ধের রনাঙ্গনে ক্র্যাক প্লাটুনের সদস্য গেরিলা যোদ্ধা ছিলেন। তিনি চার দলীয় জোট সরকারের মন্ত্রী, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান, ঢাকা মহানগর বিএনপির সভাপতি ছিলেন।

মহানগর দক্ষিনের আহবায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, হাবিবুর রহমান হাবিব, যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন, খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, জাগপার একাংশের সভাপতি খন্দকার লুতফুর রহমান, যুব দলের সাইফুল আলম নিবর, মুক্তিযোদ্ধা দলের শহিদুল ইসলাম চৌধুরী মিলন, স্বেচ্ছাসেবক দলের মোস্তাফিজুর রহমান, কৃষক দলের শহিদুল ইসলাম বাবুল, শ্রমিক দলের মোস্তাফিজুল করীম মজুমদার, মতস্যজীবী দলের আবদুর রহিম ও প্রয়াত সাদেক হোসেন খোকার ছেলে প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন বক্তব্য রাখেন।