আশাহত হবেন না , আন্দোলনে জয়ী হবো — নেতাকর্মীদের বললেন মীর্জা ফখরুল

আপডেট: জুন ৮, ২০২১
0

আন্দোলনে ‘জয়ী হবো’ উল্লেখ করে দলীয় নেতা-কর্মীদের ‘আশাহত’ না হতে বললেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মঙ্গলবার বিকালে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ‘‘ আমাদের মধ্যে অনেকে বলে, কী ভাই কিছু হবে? এটা যখনই মনে করবেন তখনই বুঝবেন যে, আপনি শেষ। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাহেব একটা শ্লোগান দিচ্ছেন না যে, যদি তুমি ভয় পাও তাহলে তুমি শেষ আর তুমি যদি রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশ।”
‘‘ একজন মানুষ মরে যায় কখন? সে যখন আশা হারায়। হোপস, এই হোপস নিয়ে আমাদের থাকতে হবে। একটি সত্য আপনাদের মনে রাখতে হবে যে, এই দেশের শতকরা ৯০ জন মানুষ আপনাদের পক্ষে আছে, যেখানেই যাবেন দেখবেন ..।একটা কথা আমি বলতে পারি, আমরা জয়ী হবোই। আমাদেরকে সামনের দিকে এগুতে হবে।”

নিজের মোবাইল টেলিফোন দেখিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ অনেক সময় নাই, আমি আপনাদের দেখাতে পারতাম যে, একজন রিকশাওয়ালা কি বলছে? একজন ঠেলা গাড়ি চালায় সে কী বলছে? গাইবান্দাতে একজন সবজী বিক্রি করে সে কী বলছে? এগুলো কোনো কিছু বানানো নয়, তাদের মনের কথাগুলো তারা বলছে যে, এই সরকার আমাদের কী দেখবে? নিজের দেখেই তো কুল কিনারা পায় না। আমাদের তো দেখে না কেউ?”
আজকে হাজার হাজার কোটি টাকার মেগা প্রজেক্ট করতেছেন, মেগা প্রজেক্টে পাঠাচ্ছেন। এই যে মহাখালীতে সাতলাবস্তি পুঁড়ে গেলো- তাদের জন্য কোনো প্রজেক্ট তৈরি করে না।

তিনি বলেন, ‘‘ উত্তর মহানগরকে আমি অনুরোধ করতে চাই, শুধু পদ-পদবীর জন্য দৌঁড়াবেন না। কমিটি হয়ে গেলো হারিয়ে যাবেন না, হারিয়ে যেন আমরা না যাই এবং এবার আমরা যেন চেষ্টাটা করি, সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টাটা করি। বাকী তো উনার হাতে, সব উপরওয়ালার হাতে।”

আমরা বিশ্বাস করি যে, আমরা সঠিক পথে থাকলে, ঠিক পথে থাকলে বিজয় আমাদের অনিবারয।আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য খন্ডন করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ গণতন্ত্রকে হত্যা করছে কারা? আওয়ামী লীগই গণতন্ত্রকে বার বার হত্যা করছে। যে সংবিধান ১৯৭২ সালে আপনাদের দ্বারা তৈরি, সেই সংবিধানকে কেটে ছিঁড়ে সব কিছু শেষ করে দিয়েছে কে? আওয়ামী লীগ আপনারা। যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আপনারা ১৭৩দিন হরতাল করলেন, লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষকে মারলেন, বুকের উপরে উঠে নাচলেন, সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে কে সরালো? আওয়ামী লীগ, এই শেখ হাসিনা, প্রধানমন্ত্রী। মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিলেন আপনারা।

‘‘ জনগন ভোটের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক উপায়ে সরকার নির্বাচন করবে-সেই অধিকারই তো এখন নাই। এখন কী হচ্ছে? শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। আমি তাদের আবারো বলছি যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান আবার আনুন। শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের পথ রুদ্ধ হয়ে গেছে, সেই পথ রুদ্ধ করবেন না। তার পরিণতি গোটা বিশ্বের জানা। গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগনের ভোটের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হতে হবে। তা না হলে এর ফল খুব খারাপ।”দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে ‘বাতিঘর’ উল্লেখ করে তার আদর্শ অনুসরণ করার জন্য দলীয় নেতা-কর্মীদের পরামর্শ দেন তিনি।

আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্ রায় বলেন, ‘‘ এখন সবাই নেতা, সবাই স্টেজে বক্তৃতা করতে চায়। কেউ কর্মী হতে চায় না। মিছিলের শেষে কেউ থাকতে চায় না। সবাই যদি নেতা হয়, মাঠের কর্মী হবে কে? বিএনপিতে শতকরা ৮০ জন নেতা। ২০ আছে কর্মী।”

‘‘ এরকম হলে আন্দোলনে আপনি সফল হবেন কিভাবে? যেদিন বিএনপিতে সবাই কর্মী হবে, একজন নেতা সামনে থাকবে সেইদিন গণতন্ত্র মুক্তি পাবে, সেইদিন বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পাবে, সেইদিন তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারবেন। সেজন্য বলছি, আসেন আমরা সবাই কর্মী হই, জিয়ার মতো হাটি রাস্তায়। দেখি কতক্ষন সরকার থাকে। আর সবাই যদি নেতা হই তাহলে কিছুই হবে না।”

জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির উদ্যোগে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৪০তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়।

উত্তরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুন্সি বজলুল বাসিত আনজুর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল আলিম নকির সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, শহীদুল ইসলাম বাবুল, যুব দলের সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, মহানগর উত্তরের আতিকুল ইসলাম মতিন, জিএম শামসুল হক, এবিএমএ রাজ্জাক প্রমূখ বক্তব্য রাথেন।