আ’ লীগ ক্ষমতায় একদিন থাকলেও দেশের ক্ষতি— মীর্জা ফখরুল

আপডেট: মে ২৯, ২০২২
0

ক্ষমতাসীনরা যত সমালোচনাই করুক জিয়াউর রহমানকে ইতিহাস থেকে কখনো মুছে ফেলতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

রোববার বিকালে ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকী আলোচনা সভায় দলের মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ‘‘ আমরা ঢাকার বাইরে যাচ্ছি, আমরা বিভিন্ন জেলাগুলোতে সম্মেলন করতে যাচ্ছি- আমরা দেখছি মানুষের কী আকুতি, কী আবেগ। কালকে যখন আমি যশোর থেকে ঝিনাইদাহ যাচ্ছি-পথে পথে মানুষ চতুর্দিকে দাঁড়িয়ে আছে। মানুষে সেই পুরনো অবস্থায় ফিরে যেতে চায় যেন মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়।”

‘‘ আজকে জিয়াউর রহমান সাহেবকে যে যত ইচ্ছা বলুক, তাকে খলনায়ক বলুক, পাকিস্তানি চর বলুক আর তাকে সামরিক জান্তা থেকে উঠে আসার কথা বলুক তাতে কিচ্ছু যায় আসে না। কারণ এই দেশের মানুষের হৃদয়ের মধ্যে তিনি প্রতিথ হয়ে গেছেন।জিয়াউর রহমানকে ইতিহাস ধারণ করেছে, তাকে কখনো মুছে ফেলা যাবে না।”

নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান হচ্ছেন আমাদের সেই আলোকবর্তিকা। যার দিতে তাঁকিয়ে আমরা কথা বলব। তার তো ব্যর্থতা নেই। তিনি শহীদ হয়ে গেছেন।কিন্তু তার আদর্শ তো ফুরিয়ে যায়নি। তিনি যে দর্শন দিয়ে গিয়েছিলেন বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ, তিনি যে দর্শন দিয়েছিলেন আমাদের উন্নয়নের রাজনীতি, তিনি যে দর্শন দিয়েছিলেন যে, মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হবে, আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোনোদিন আমরা আপোষ করব না সেই রাজনীতি তো টিকে আছে।শুধু টিকে নাই চেষ্টা করেছিলো..।”

‘‘ সেখানে আবার আমাদের আরেকজন নেতা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কথাটা আমার প্রায় মনে হয় যে, তিনি যদি সেই পতাকাটা হাতে তুলে নিয়েছিলেন যেই পতাকা শহীদ জিয়ার পতাকা ছিলো-স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র আর উন্নয়নের পতাকা ছিল। ওই পতাকা নিয়ে দেশনেত্রী ৯ বছর সংগ্রাম করেছেন, দীর্ঘ সংগ্রাম। রাস্তায়, পথে-প্রান্তরে, আমাদের এই নেতাদেরকে সঙ্গে নিয়ে, ছাত্র-জনতাকে সঙ্গে নিয়ে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন, সংগ্রাম করেছেন এবং সফল হয়েছেন ১৯৯০ সালের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে এনেছিলেন।”

‘তারেক সফল হবেন’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আজকে আবার যখন আমাদের সবচেয়ে বড় সংকট আমাদের দেশেরগণতন্ত্র ধবংস হয়ে গেছে, আমাদের সমস্ত অধিকারগুলোকে কেড়ে নিয়ে গেছে, আমাদের সব কিছু উলট-পালট হয়ে যাচ্ছে, ম্লান হয়ে যাচ্ছে তখন আবার আমাদের সামনে এসে আবির্ভুত হয়েছেন তারই যোগ্য উত্তরসূরী তারেক রহমান যিনি আমাদেরকে সুদূর থেকে পথে দিশা আমরা পাচ্ছি। আওয়াম লীগের সাধারণ সম্পাদক গতকাল না পরশু প্রশ্ন তুলেছেন যে, এনি সেই টেইমসনদীর পার থেকে বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুণঃপ্রতিষ্ঠা করবেন-এটা কী সম্ভব হবে?

‘‘ ওবায়দুল কাদের সাহেব অবশ্যই সম্ভব হবে, অবশ্যই সম্ভব হবে। কারণ তারেক রহমান সাহেব সেই রাজনীতি ধারণ করেছেন সেই রাজনীতি সারাদেশের মানুষের রাজনীতি।এখন মানুষ যা চায়, এখন মানুষ যে মুক্তি চায়, এখন মানুষ যে তার হারানো অধিকার ফিরে পেতে চায়, এখন মানুষ যে একটা স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে চায়, এই হত্যা-ধর্ষন-খুন-জখমের মধ্য থেকে বেরিয়ে আনতে চায় তখন ওই দর্শন, জিয়া্উর রহমানের দর্শন ধারণ যা তারেক রহমান সাহেব ধারণ করে আছেন সেটা অবশ্যই এখানে সফল হবে।”

‘তা না হলে এই যে আমাদের ছাত্র দলের ছেলেরা প্রায় ৩৫ জন হাসপাতালে পড়ে আছেন? কেনো আছে তারা ? কী পাচ্ছেন তারা, কী পাচ্ছে? একটা আদর্শ, তারা যেটা বিশ্বাস করে- যে আমাদের এদেশকে মুক্ত করতে হবে, তারেক রহমান সাহেবের নির্দেশে এখান থেকে তারা ঝাঁপিয়ে পড়েছে।’-বলেন বিএনপি মহাসচিব।

দলের প্র্রতিষ্ঠাতার এই দিনটি বিএনপি শাহাদাত বার্ষিকী হিসেবে পালন করে। ৪১ তম এই শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপি ১০ দিনের যে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে এই আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে তা শুরু হলো।

১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে সেনাবাহিনীর একদল বিপদগামী সদস্যের অভ্যুত্থানে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হন।

জিয়াউর রহমান জীবনের সবচেয়ে বড় দুইটি দিক তুলে ধরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘ একটা হচ্ছে যে, জিয়া্উর রহমান জাতির সবচেয়ে দুঃসময়ে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে জাতিকে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। দ্বিতীয়টি হচ্ছে যে, তিনি ১৯৭৫ সালে যখন জাতি প্রায় দিশেহারা-কোন দিকে যাবে বুঝতে পারছে না তখন আবার তিনি ওই সিপাহী-জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে জনগনের সামনে এসে দাঁড়িয়ে ফেইস করে, চ্যালেঞ্জ করে মুখোমুখি দাঁড়িয়েছিলেন এবং তিনি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এই দুটার মধ্য দিয়ে তিনি পরিচিতি যে, আমরা বাংলাদেশী, আমাদের এই ভুখন্ডে আমাদের একটা স্বতন্ত্র পরিচিতি আছে-সেটাই তিনি দিয়েছিলেন।”

‘‘ তিনি আমাদের স্বপ্নদ্রষ্টা। যেখানেই যেতেন উতসাহ দিতে উদ্দিপনা দিতেন-একটা আম গাছ লাগাও, নিজেকে স্বাবলম্বি করার চেষ্টা করোও। নিজে খাল কাটতেন, মাইলের পর মাইল পায়ে হেটেছেন…।”

‘‘ এটাইকে বলে পথ প্রদর্শক, এটাই বলে ফিলোসফার, এটাই বলে লীডার। তাই যে যা বলতে চেষ্টা করুক কোনো মতেই তারা শহীদ জিয়াকে মুছে ফেলতে পারবেনা, বিলীন করতে পারবে না।”

‘আওায়ামী লীগ একদিন থাকলেও ক্ষতি’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ পত্রিকায় দেখলাম এই যে পাঁচার করা অর্থ তারা নাকী ফিরিয়ে আনবে আবার। আরেক শয়তানি শুরু করবে আবার। অর্থাত নিজেরা এই টাকা পাঁচার করেছে এটাকে ফিরিয়ে এনে জায়েজ করবে। তারা দেশের সম্পদ লুট করা সম্পদ ফিরিয়ে নিয়ে এসে আবারোও লুটপাটের সুযোগ করে দেবে।”

‘‘ এদেরকে কোনো মতেই বিশ্বাস করা যায় না।ওরা বরাবরই প্রতারক। এমন একটা সময় ছিলো না-আওয়ামী লীগকে আপনারা দেখেননি আমরা দেখেছি। বরাবরই প্রতারনা করেছে। সেই আওয়ামী লীগকে কোনো মতেই আর ক্ষমতায় থাকতে দেয়া যায় না। একদিন থাকলেও আমাদের ক্ষতি।”

প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘‘ আজকে আমরা অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হয়, মুক্তিযুদ্ধের সকল চেতনা, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সকল আদর্শ, সকল কর্মসূচি আওয়ামী লীগ যারা সম্প্রসারণবাদ, আধিপত্যবাদের এজেন্ট তারা আজকে বাংলাদেশকে ধবংসের মুখে নিয়ে গেছে। আজকে গণতন্ত্র নাই, মানুষের অধিকার নাই, ভোটের অধিকার নাই, মানবাধিকার নাই, দ্রব্যমূল্যের ঊধর্বগতিতে মানুষে নিষ্পেষিত…।”

‘‘ এই অবস্থা থেকে উত্তরণে আজকে সময় এসেছে, এই সরকারকে একটা ধাক্কা দিতে হবে। তারা অত্যন্ত দূর্বল। এখন দরকার একটা ধাক্কা দেয়া। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেছেন, রাজপথে ফয়সালা হবে। আজকে এই দিনে আমাদেরকে একটাই শপথ নিতে হবে আমরা সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একটা ধাক্কা দিয়ে এই সরকারকে হটিয়ে একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করব।”

বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, অধ্যাপক সাহিদা রফিক, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন বক্তব্য রাখেন।

এছাড়া যুব দলের সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের মোস্তাফিজুর রহমান, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসেইন, মহানগর দক্ষিনের রফিকুল আলম মজনু, কৃষক দলের শহিদুল ইসলাম বাবুল, মহিলা দলের হেলেন জেরিন খান, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, মতস্যজীবী দলের রফিকুল ইসলাম মাহতাব আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন।