ইউএনওকে আঘাত করা প্রধানমন্ত্রীকে অপমানের শামিল– ডিসি বরিশাল

আপডেট: আগস্ট ৩০, ২০২১
0

বরিশাল সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবন চত্বরে ঘটে যাওয়া ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ ঘটনার অন্তত ১০ দিন পর এ বিষয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুললেন জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার।

তিনি বলেছেন, বরিশাল জেলার সবাই কর্মকর্তা-কর্মচারী। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি শুধু আমি (জেলা প্রশাসক) এবং সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মুনিবুর রহমান।
ইউএনওর গায়ে আঘাত করা প্রধানমন্ত্রীকে অপমান করার শামিল।

রোববার সকালে বরিশাল সদর উপজেলার চরমোনাই ইউনিয়নের গিলাতলী আশ্রয়ণ প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের মাঝে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক এমপির উদ্যোগে সেলাই মেশিন বিতরণ অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

জেলা প্রশাসক আরও বলেন, যিনি রাষ্ট্রের জন্য এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন, তাকে সম্মান জানাতে হবে সবার। অবশ্যই সবার সম্মান জানাতে হবে। তিনি শুধু প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী নন, রাষ্ট্রের প্রতিনিধি। তাকে তার কাজ করতে দিতে হবে।

বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনিবুর রহমানের বদলির আদেশের বিষয়ে জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার বলেন, অনেকে বলে তাকে (মুনিবুর রহমান) বদলি করা হয়েছে। তিনি তো ১০ আগস্ট বদলি হয়েছেন। এখানে যতদিন ইউএনও হিসেবে কাজ করতে চান, ততদিন তিনি থাকবেন।

এ সময় জেলা প্রশাসক অনুষ্ঠানে উপস্থিতদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা কি চান তিনি (মুনিবুর রহমান) আরও থাকবেন? জেলা প্রশাসকের প্রশ্নের জবাবে সবাই সমস্বরে ‘জ্বি’ বলে সমর্থন জানান। এ সময়ে জেলা প্রশাসক বলেন, শুনে ভালো লাগলো।

জেলা প্রশাসক হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, আন্তরিকতা, ভালোবাসাকে কেউ দুর্বলতা মনে করবেন না। আমরা কিন্তু রাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করি, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধিত্ব করি। আমরা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী, আপনাদের সেবা করতে এসেছি। আমরা কারো সঙ্গে শত্রুতা করতে আসিনি। আমরা কারো অন্যায় কোনো কাজের সমর্থন করতে আসিনি।

জসীম উদ্দিন হায়দার বলেন, সিটি করপোরেশনের কাজও আমার হাত দিয়ে গেছে। যেহেতু আমি রাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করি। আমার মনে হয় প্রায় দুইশ’ মেট্রিক টন চাল এবং এক কোটি টাকার বেশি গিয়েছে। কিন্তু আমি জানি না, আমার কাউন্সিলর মহোদয়রা কতটুকু বরাদ্দ পেয়েছেন।

এর পরপরই প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা দেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য জাহিদ ফারুক শামীম।

১৮ আগস্ট রাতে বরিশাল উপজেলা পরিষদ চত্বরে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর ব্যানার অপসারণে যান সিটি করপোরেশনের কর্মচারীরা। তাতে আপত্তি জানান ইউএনও মুনিবুর রহমান। এ নিয়ে বিরোধ দেখা দিলে মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সেখানে গিয়ে ইউএনওর বাসায় প্রবেশের চেষ্টা চালান।

তখন ইউএনও ও এবং তার নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসার সদস্যরা গুলি চালান। ঘটনাস্থলে মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ উপস্থিত হন। ঘটনার এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন নেতাকর্মীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে।

ঘটনার পর রাতেই ইউএনওর বাসায় যান বিভাগীয় কমিশনার সাইফুল হাসান বাদল, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান, রেঞ্জ ডিআইজি এসএম আক্তারুজ্জামান, জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার। সেই রাতে এ নিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলেন জেলা প্রশাসক। এরপর এ পর্যন্ত আর কোন কথা বলেননি। তবে রোববার পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তৃতায় সেই ঘটনাকে ইঙ্গিত করে কিছু কথা বললেন।