ইতিহাসকে খন্ডিতকরণ, দলীয়করণ না করার আহবান রাশেদ খান মেননের

আপডেট: মার্চ ১, ২০২২
0

১৯৭১ সালের ১লা মার্চ জেনারেল ইয়াহিয়া খান সংসদ অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করার সাথে সাথেই ছাত্র-জনতার ‘স্বাধীন কর, স্বাধীন কর-বাংলাদেশ স্বাধীন কর’ শ্লোগান দিয়ে ঢাকার রাজপথ দখল, ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কলাভবন-বটতলায় স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ-এর ছাত্র-জনসভায় স্বাধীনতা পতাকা প্রদর্শন ও পতাকা উত্তোলণ, ৩ মার্চ ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ছাত্র-জনভায় বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতিতে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ, ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের মধ্যে দিয়ে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের ডাক, ৯ মার্চ পল্টনে স্বাধীনতার প্রশ্নে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব ও সংগ্রামের প্রতি মাওলানা ভাসানীর নিঃশর্ত সমর্থন ঘোষণা, ১০ মার্চ নিউমার্কেট এলাকায় জনসভায় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের প্রতি অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদের সমর্থন জ্ঞাপন, ১৯ মার্চ জয়দেবপুর ক্যান্টমেন্টের বাঙালি অফিসার ও সৈনিকদের বিদ্রোহ, ২৩ মার্চ ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানে ও সারা দেশে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ কর্তৃক আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন ও স্বাধীন বাংলা ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দ কর্তৃক স্বাধীনতার পতাকাবাহী কুঁচকাওয়াজ থেকে অভিবাদন গ্রহণ, স্বাধীনতার পতাকা নিয়ে ঢাকা নগরীর রাজপথে সামরিক কায়দায় কুচকাওয়াজ করে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে গিয়ে বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীনতার পতাকা হস্তান্তর ও বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন, স্বাধীনতার লক্ষ্যে উত্থিত জাতিকে দমন ও ধবংস করতে ২৫ মার্চ রাতে পাক হানাদার বাহিনীর পোড়ামাটি নীতিতে ক্র্যাকডাউন ও নির্বিচার গণহত্যার সূত্রপাত, ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক স্বাধীনতা ঘোষণাসহ ১৯৭১ সালের অগ্নিঝরা মার্চের ঐতিহাসিক বীরত্বপূর্ণ ও বিয়োগাত্মক ঘটনাবলীর স্মরণে ‘অগ্নিঝরা মার্চ’ হিসাবে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে আজ ১লা মার্চ ২০২২ মঙ্গলবার বিকাল ৪ টায় নগরীর শহীদ কর্নেল তাহের মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমন্বয়ক, আওয়ামী লীগ এর উপদেষ্টামণ্ডলির সদস্য, সাবেক মন্ত্রী, স্বাধীনতা সংগ্রামী মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক প্রবীন জননেতা জনাব আমীর হোসেন আমু এমপি; কেন্দ্রীয় ১৪ দলের অন্যতম শীর্ষ নেতা বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি, সাবেক মন্ত্রী, স্বাধীনতা সংগ্রামী ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, প্রবীন জননেতা জনাব রাশেদ খান মেনন এমপি; জাসদের সাধারণ সম্পাদক সংগ্রামী জননেতা জনাব শিরীন আখতার এমপি; জাসদ স্থায়ী কমিটির সদস্য, স্বাধীনতা সংগ্রামী বীরমুক্তিযোদ্ধা, সাবেক সংসদ সদস্য, প্রবীন জননেতা জনাব মোশাররফ হোসেন; জাসদের সহ-সভাপতি নুরুল আকতার, বীরমুক্তিযোদ্ধা শফি উদ্দিন মোল্লা, জাসদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাদের চৌধুরী, অধ্যাপক মোখলেছুর রহমান মুক্তাদির, শওকত রায়হান, রোকনুজ্জামান রোকন, মো: মোহসীন, ওবায়দুর রহমান চুন্নু, মীর্জা মো: আনোয়ারুল হক, জাতীয় শ্রমিক জোট-বাংলাদেশ এর সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা সাইফুজ্জামান বাদশা, জাতীয় কৃষক জোটের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান ফসি, জাতীয় যুব জোটের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল কবির স্বপন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (ন-মা) কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি রাশিদুল হক ননী প্রমূখ।

জনাব আমির হোসেন আমু এমপি বলেন, জিয়ার ২৭ মার্চের রেডিও ঘোষণা যদি স্বাধীনতার ঘোষনা হয় তাহলে ১৯ মার্চ জয়দেবপুর ক্যান্টনমেন্টে বাঙালি-অফিসার-সৈনিকরা বিদ্রোহ করেছিলেন কার আহ্বানে? তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা স্বাধীনতা আন্দোলনের গতিপথ সুনির্দিষ্ট করে দিয়েছিল। তিনি বলেন, স্বাধীনতার শত্রুরা এখনো সক্রীয় আছে। তিনি স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে ধৈর্য্য ধরে বিচক্ষণতার সাথে ঐক্যবদ্ধভাবে আগানোর আহ্বান জানান।

সভাপতির ভাষণে জনাব হাসানুল হক ইনু এমপি তার ভাষণে ১৯৭১ সালের ‘অগ্নিঝরা মার্চ’ এর ঐতিহাসিক বীরত্বপূর্ণ ঘটনাবলীর মহানায়ক, নায়ক, বীর এবং সংগ্রামী জনতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের অগ্নিঝরা মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা, স্বাধীনতার পতাকা, জাতীয় সঙ্গীত, জাতির পিতা, সমাজতন্ত্রসহ রাষ্ট্রের মৌলিক নীতি-আদর্শ-চরিত্র এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্রের শত্রু-মিত্র নির্ধারণ করে দিয়েছিল। তিনি বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামে, অগ্নিঝরা মার্চে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে যাদের ভূমিকা নাই, যারা সেদিন বাঙালি ও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল তারা আজও বাংলাদেশ ও বাঙালির এগিয়ে যাওয়া মেনে নিতে পারছে না। তারা বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার পথে বাঁধা তৈরি করে চলেছে। বাঙালি ও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিচ্ছে। জনাব ইনু বলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের চিরশত্রু স্বাধীনতা বিরোধী ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক জঙ্গিবাদী পাকিস্তানপন্থী গোষ্ঠী বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এখনও যুদ্ধ করছে। জনাব ইনু বলেন, সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো বিকল্প নাই। কিন্তু শুধু ক্ষমতা ও নির্বাচনকে নিয়ে রাজনীতির মাঠে হৈচৈ করে রাষ্ট্রের চিরশত্রুদের আড়াল ও হালাল করার রাজনীতি চলছে। জনাব ইনু বলেন, বাংলাদেশের চিরশত্রু ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক জঙ্গিবাদী পাকিস্তানপন্থীদের বগলের নিচে রেখে নির্বাচন করে দেশ শান্তি ও উন্নয়নের পথে অতীতে আগায়নি, ভবিষ্যতেও আগাবে না। জনাব ইনু বলেন, অগ্নিঝরা মার্চের শিক্ষা ও চেতনাকে ধারণ করে বাংলাদেশের চিরশত্রুদের দমন করার পাশাপাশি বাংলাদেশের নতুন শত্রু দুর্নীতিবাজ-লুটেরাগোষ্ঠীকে দমন এবং বৈষম্য-বঞ্চনার অবসান করে সমাজতন্ত্রের পথে এগিয়ে যেতে হবে।

জনাব রাশেদ খান মেনন এমপি বলেন, জাতীয় জাগরণের মাস ১৯৭১ সালের অগ্নিঝরা মার্চের ঐতিহাসিক ঘটনাবলীকে খন্ডিতকরণ, দলীয়করণ না করে সামগ্রিক বস্তুনিষ্ঠভাবে উপস্থাপন করার জন্য জাসদকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ১৯৪৮ সাল থেকে ধাপে ধাপে বাঙালি জেগে উঠছিল। অগ্নিঝরা মার্চ হঠাৎ করে ঘটেনি কিংবা ইয়াহিয়ার ভাষণের প্রতিক্রিয়ায় ঘটেনি। বাঙালি জাতি স্বাধীনতার লক্ষ্যে উত্থিত হয়েছিল। ১লা মার্চ ছাত্র-জনতা ‘স্বাধীন কর, স্বাধীন কর-বাংলাদেশ স্বাধীন কর’ শ্লোগান দিয়ে কার্যত স্বাধীনতার সুনির্দিষ্ট পথ রচনা করে এবং ৭ মার্চ ঐতিহাসিক ভাষণের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশের শাসন কর্তৃত্বভার গ্রহণ করেন।

জনাব শিরীন আখতার এমপি বলেন, ১৯৭১ সালে ‘অগ্নিঝরা মার্চ’ জাতীয় জাগরণের মাস, জাতীয় বীরত্বের মাস। তিনি অগ্নিঝরা মার্চের চেতনাকে ধারণ করে সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদ মোকাবেলা এবং শোষণ-বৈষম্যমূলক রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পরিবর্তন করে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য জাতীয় জাগরণ ঘটানোর আহ্বান জানান।