ইনসাফ ভিত্তিক মজুরি ও চাকুরির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ করতে হবে : অধ্যাপক মুজিবুর রহমান

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২২
0

শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের উপজেলা, থানা ও পৌরসভা কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সম্মেলন’২০২২ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, আমাদের দেশে শ্রমিকরা কঠোর পরিশ্রম করা সত্তে¡ও ন্যায্য ও ইনসাফ ভিত্তিক মজুরি কাঠামো থেকে বঞ্চিত। একজন শ্রমিকের বেঁচে থাকার জন্য ন্যূনতম যা মজুরি দেওয়া দরকার মালিকরা তা দেন না। বিভিন্ন কৌশল ছলনার আশ্রয় নিয়ে শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করা হয়। শ্রমিকরা ন্যায্য মজুরির পক্ষে দাবি তুললে তাদেরকে চাকুরিচ্যূত করা হয়। ফলে শ্রমিকরা পেটের দায়ে সব অন্যায় অবিচার মুখ বুঝে সহ্য করে। এই অন্যায় অবিচারের বিপক্ষে আমাদেরকে লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। ইনসাফ ভিত্তিক মজুরি ও চাকুরির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।

তিনি আজ বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কর্তৃক ভার্চুয়ালি আয়োজিত “উপজেলা, থানা ও পৌরসভার কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সম্মেলন-২০২২” এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যাপক হারুনুর রশিদ খানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আতিকুর রহমানের সঞ্চালনায় এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা মাওলানা এটিএম মাসুম, সাবেক এমপি এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আব্দুল হালিম, অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক। মূল মঞ্চ ও ভার্চুয়ালি সংযুক্ত ছিলেন ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি গোলাম রব্বানী, মাস্টার শফিকুল আলম, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের খান, লস্কর মুহাম্মদ তসলিম, কবির আহমেদ, মুজিবুর রহমান ভূইয়া, মনসুর রহমান, সহ-সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আলমগীর হোসেন, আব্দুস সালাম, মো. মহিব্বুল্লাহ, এস এম লুৎফর রহমান, কোষাধ্যক্ষ আজহারুল ইসলাম, দপ্তর সম্পাদক নুরুল আমিন প্রমুখ।

অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, আমাদের সমাজে শ্রমিকরা পদে পদে অবহেলিত ও অসম্মানিত। অথচ আমাদের প্রিয় নবী (সা.) শ্রমজীবী মানুষদের প্রাণভরে ভালোবাসতেন। তিনি একজন শ্রমিকের শক্ত হাত দেখে তাকে জিজ্ঞেস করলেন, “তোমার হাত এত কঠিন কেন ? এত দাগ পড়েছে কেন ? শ্রমিক উত্তর দিল আমি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই হাত দিয়ে পাথর ভাঙি। তাই এত শক্ত হয়ে গেছে। রাসূল (সা.) শ্রমিকের এই শক্ত হাত এত পছন্দ করলেন যে তিনি শ্রমিকের শক্ত হাতে তার পবিত্র মুখ দিয়ে চুমু খেয়েছেন। তিনি শ্রমিকের অধিকার আদায়ের ব্যাপারে সচেষ্ঠ ছিলেন। তিনি শ্রমিকের ঘাম শুকানোর পূর্বে তার মজুরি পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছেন। মালিককে বলেছেন তুমি যা খাবে যা পড়বে একই খাবার ও পোশাক শ্রমিককে দিবে। এই অনুপম দৃষ্টান্ত পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। আল্লাহর রাসূলের সাহাবীরা শ্রমজীবীদের অন্তর দিয়ে ভালোবাসতেন। হযরত আবু যার (রা.) একই কাপড়ের এক প্রান্ত নিজের জন্য ও অপর প্রান্ত দিয়ে তার শ্রমিকের জন্য জামা তৈরি করতেন।

অধ্যাপক মুজিব বলেন, আমাদের দেশে শাসকদের দ্বারা শ্রমিকরা সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত। ইতিহাস সাক্ষী দেয় ইসলামের সোনালী যুগের শাসকরা ছিলেন শ্রমিক বান্ধব। আজ আমাদের একজন উমরের মত শাসক প্রয়োজন। যিনি বলেছেন, ফোরাত নদীর তীরে একটি কুকুর যদিও না খেয়ে মরে তাহলে তাকে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। অথচ আজকের এই দিনে যে শ্রমিক অপরের জন্য খাবার তৈরি করছে সে শ্রমিক না খেয়ে থাকে। যে শ্রমিক গৃহ নিমার্ণ করে দেয় যে শ্রমিকের থাকার জন্য ঘর নেই। যে শ্রমিক অপরের জন্য বস্ত্র তৈরি করে আজ তার নিজেরই বস্ত্র নেই। প্রিন্টিং পেপার মিলে অসংখ্য শ্রমিক কাজ করে কিন্তু দেখা যাচ্ছে গরিব শ্রমিকের সন্তানরা খাতা কলমের অভাবে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। কিন্তু এই নিয়ে মালিক কিংবা সরকারের কোন মাথা ব্যাথা নেই। শ্রমিকের দুঃখ দুর্দশা দূর করতে আমাদেরকে একদল আল্লাহ ভীরু লোকদেরকে ক্ষমতায় বসাতে হবে। যারা আল্লাহর ভয়ে ও আখেরাতে জবাবদিহীর অনুভূতি নিয়ে দেশ শাসন করবে।

তিনি সমবেত শ্রমজীবী মানুষের উদ্দেশ্যে বলেন, একটি সুখি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে হলে ইসলামী শ্রমনীতির বাস্তবায়ন করতে হবে। যে শ্রমনীতি সকল শ্রমিকের অধিকার নিশ্চিত করবে। শ্রমিকের চাকুরির নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। মালিক ও শ্রমিকের মাঝে ইনসাফ কায়েম করবে। যে নীতি বাস্তবায়িত হলে কোন মানুষ না খেয়ে থাকবে না। অসুস্থ হয়ে বিনা চিকিৎসায় কোন শ্রমিক মারা যাবে না। শ্রমিকের সন্তানরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবে না। আজকের করোনা মহামারীতে আমরা প্রত্যক্ষ করেছি অসংখ্য শ্রমিক কর্ম হারিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করতে বাধ্য হয়েছে। আমি সরকারের উদ্দেশ্য বলতে চাই যে সকল শ্রমিকরা এই কঠিন দুর্যোগে কর্ম হারিয়েছে, তাদেরকে কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা আপনাদের দায়িত্ব। শ্রমিকদের পাশে এসে দাঁড়াতে আমি সরকারের প্রতি আহবান জানাচ্ছি। একই সাথে আমি মালিক ভাইদের প্রতি শ্রমিকদের প্রতি ভালোবাসা নিয়ে এগিয়ে আসার আহবান জানাচ্ছি। আপনারা শ্রমিকের বকেয়া বেতন পরিশোধ করে দিন। তাদের ন্যায্য মজুরি দিন। নারী ও পুরুষ শ্রমিকদের মধ্যকার বেতন বৈষম্য দূর করুন। শ্রমিকের মৌলিক প্রয়োজন পূরণ করে দিন। দেখবেন শ্রমিক অসন্তোষ তৈরি হবে না। শ্রমিকরা হৃদয় উজাড় করে আপনাদের জন্য কাজ করবে। আপনাদের ব্যবসা বাণ্যিজের উন্নতি হবে।

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক হারুনুর রশিদ খান বলেন, শ্রমজীবী মানুষরা ছাড়া একটি সফল বিপ্লব সম্ভব না। তাই দেশের শ্রমজীবী মানুষের কাছে আমাদের ইসলামী শ্রমনীতির দাওয়াত পৌঁছে দিতে হবে। তাদের সংঘবদ্ধ করতে হবে। শ্রমিকদেরকে আমরা আজ পর্যন্ত কাক্সিক্ষত মর্যাদা দিতে পারিনি। আমরা যদি শ্রমিকদের প্রাপ্য মর্যাদা দিতে পারতাম তাহলে আজকে দেশের সকল শ্রমিকরা শ্রমিক কল্যাণের পতাকা তলে সমাবেত হতো। তাই আমি শ্রমিক কল্যাণের প্রতিটি কর্মী উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আপনারা প্রতিটি শ্রমিকের কাছে ইসলামের সুমহান বাণী নিয়ে চলে যাবেন। তাদেরকে ভালোবাসা ও মর্যাদা দিয়ে শ্রমিকের আদায়ের মঞ্চে নিয়ে আসবেন। আমরা সকল শ্রমিকদের নিয়ে এই দেশের মাটিতে ইসলামী শ্রমনীতির বাস্তবায়নের আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাবে।