ইরান হচ্ছে শত্রু আর পাকিস্তান, তুরস্ক ও ইসরাইল আমাদের বন্ধু: আজারবাইজান

আপডেট: অক্টোবর ৩, ২০২১
0

আজারবাইজান সরকার যখন সরল ও নিশ্চিন্ত মনে আর্মেনিয়ার কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে তখন বাকু সরকারের এক শ্রেণীর কর্মকর্তারা গণমাধ্যমগুলোতে ইরান বিরোধী প্রচারণায় লিপ্ত।

আজারবাইজানের গণমাধ্যমগুলোর ইরান বিরোধী প্রচারণা থেকে বোঝা যায় প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে আজারবাইজানের সম্পর্কের ব্যাপারে ওই দেশটির এলহাম আলিয়েভ সরকার ও জনগণের মধ্যে দৃষ্টিভঙ্গিগত বিরাট পার্থক্য রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, আজারবাইজানের কোনো কোনো কর্মকর্তা এবং ওই দেশটিতে বাইরের বিভিন্ন দেশের প্রভাব ইরান বিরোধী তৎপরতায় ভূমিকা রাখছে।

উদাহরণ স্বরূপ প্রভাবশালী জামেয়া দ্বীনি আজারবাইজানের ধর্মীয় নেতা হাজ ইলকার ইব্রাহিম ওগলুসহ দেশটির অন্যান্য ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতা মনে করেন, সরকারের কোনো কোনো সংবাদ ও রাজনৈতিক মহল ইরান বিরোধী প্রচারণা এবং তেহরান ও বাকুর মধ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনার অজুহাতে আজারবাইজানে ইসলাম আতঙ্ক সৃষ্টির যে চেষ্টা চালাচ্ছে তা একেবারেই অনর্থক।

আজারবাইজানের এইসব ব্যক্তিরা সরাসরি সম্প্রচারিত টিভি সাক্ষাতকারে বলেছেন, আজারবাইজানের মুসলিম জনগণ ৭০ বছর ধরে কমিউনিস্ট শাসনের অধীনে থাকলেও তারা নিজেদের ধর্মকে হেফাজত করেছে এবং কোনো শক্তিই তাদেরকে ইসলাম থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারেনি। ধর্মীয় সংগঠন জামেয়া দ্বীনি আজারবাইজান নেতা হাজ ইলকার ইব্রাহিম ওগলু ইরানের বিরুদ্ধে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক হুমকির কথা উল্লেখ করে বলেছেন, বর্ণবাদী ও দখলদার ওই শক্তির পক্ষে ইরানের বিরুদ্ধে দেয়া হুমকি বাস্তবায়নের কোনো ক্ষমতা নেই।

সম্প্রতি আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ আর্মেনিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শুরুর প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষে দেয়া বাণীতে নজিরবিহীন ও বিস্ময়করভাবে আজারবাইজানের বাইরের শত্রু হিসেবে আর্মেনিয়ার পরিবর্তে ইরানকে চিহ্নিত করেন। তাই এতে কোনো সন্দেহ নেই যে ইরানের বিরুদ্ধে আজারবাইজানের প্রেসিডেন্টের এ বক্তব্যের পেছনে বাকুতে ইসরাইলি কূটনীতিক ও তাদের সমর্থক কিছু রাজনীতিবিদের ইন্ধন রয়েছে। কিন্তু দেশটির সরকারের এটা জেনে রাখা উচিত যে ইরান বিরোধী অবস্থান নিয়ে তাদের কোনো লাভ হবে না। দেশটির প্রভাবশালী ধর্মীয় নেতা হাজ ইলকার ইব্রাহিম ওগলুও এ কথাই বলছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমরা বহুবার সতর্ক করে বলেছি আমাদের মাটিতে বসে ইসরাইল ইরানের বিরুদ্ধে কোনো বার্তা, হুমকি বা তৎপরতা চালাতে পারেনা। এটা খোদ আজারবাইজানের জন্যই ক্ষতিকর।’

যাইহোক, ইসরাইল ইরানের উত্তরাঞ্চলীয় আজারবাইজানে বেশ তৎপর রয়েছে এবং ধারণা করা হচ্ছে ইরানের সরকার ও জনগণের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও অপপ্রচার ছড়িয়ে ইসরাইল আসলে এ অঞ্চলে তাদের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করছে। এরই অংশ হিসেবে ইলহাম আলিয়েভ সরকারের অনুগত কিছু গণমাধ্যম এটা তুলে ধরার চেষ্টা করছে যে তুরস্ক, পাকিস্তান ও ইসরাইল হচ্ছে আজারবাইজানের মুসলিম জনগণের প্রকৃত বন্ধু যা কিনা গতবছর দ্বিতীয় কারাবাখ যুদ্ধে প্রমাণিত হয়েছে।

এদিকে, আজারবাইজানের সরকারি ও নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তারাও বাকুর তথাকথিত মিত্র দেশের পতাকা উত্তোলন করতে সেদেশের মুসলিম জনগণকে বাধ্য করছে যাতে জনমনে ইরান বিরোধ মনোভাব জাগিয়ে তোলা যায়। এ ছাড়া আজারবাইজানে ইরানের সাহায্য পাঠানো বন্ধের বিষয়েও কথাবার্তা চলছে।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, আজারবাইজানে ইরান বিরোধী তৎপরতার ফলে কেবল দখলদার ইসরাইল লাভবান হবে এবং এ অঞ্চলের মুসলমানরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই ইরানের ব্যাপারে কথা বলার সময় সতর্ক হয়ে কথা বলা উচিত। #