এই সরকার ক্ষমতায় থাকলে পরিস্থিতি আরও ভয়ংকর হবে: মান্না

আপডেট: নভেম্বর ৯, ২০২১
0

বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে জনগণের কল্যাণের জন্য কোনো দাবি জানানো অর্থহীন বলে মন্তব্য করেছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেছেন, বোধগম্য কারণেই জ্বালানি তেলের মূল্য কিংবা বাস ভাড়া কমানোর দাবি আমরা করছি না।

দেশবাসীর কাছে আমরা বলতে চাই, এমন সরকার ক্ষমতায় থাকলে পরিস্থিতি আরও ভয়ংকর পর্যায়ে চলে যাবে। এমন লুটেরা একটি সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামানোর জন্য শপথ এবং চেষ্টা করাই হোক আমাদের যাবতীয় ক্ষোভের সবচেয়ে কার্যকর বহিঃপ্রকাশ।

মঙ্গলবার (৯ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে নাগরিক ঐক্য আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, করোনার ভয়ংকর সংকটে দীর্ঘকাল কাটিয়েছে এই দেশের মানুষ। এই চরম সংকটের সময় মানুষ সরকারকে তার পাশে পায়নি। করোনার সংকট শেষ হয়েছে তা বলা যায় না। কিন্তু এই মুহূর্তে কিছুটা সহনশীল পরিবেশ থাকার কারণে চরম সংকটাপন্ন মানুষ তার নিজের মতো করে আবার বেঁচে থাকার চেষ্টা করতে শুরু করেছিল। কিন্তু সেটার পথেও বিরাট বাধা তৈরি করলো সরকার, জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি করার মাধ্যমে। হ্যাঁ, ‘এটা ভাত দেবার মুরোদ নেই, কিল মারার গোঁসাই সরকার’।

তিনি বলেন, এই দেশের কিছু লুটেরা ব্যবসায়ী সরকারের যোগসাজশে জনগণের পকেট কেটেছে সব সময়। ভোজ্যতেলের মত পণ্যের মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে বৃদ্ধি পেয়েছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে মুহূর্তেই দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়। যদিও নতুন মূল্যের পণ্য বাংলাদেশে আমদানি করে বাজারজাত হতে দুই মাসের বেশি সময় লাগে।

আবার সেই পণ্যের দাম যখন কমে যায়, তখন কমানো হয় না সেই দাম কিংবা খুব সামান্যই সমন্বয় করা হয়। এই দেশের সেসব লুটেরা ব্যবসায়ীদের মত আচরণ করছে সরকার। বিশ্ববাজারে মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে মুহূর্তেই মূল্যবৃদ্ধি করছে, কিন্তু যখন মূল্য কম থাকে বছরের পর বছর তখন তার মূল্য কমায়নি।

সুতরাং আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সমন্বয় করে মূল্য বাড়ানো কমানো অর্থাৎ তেলের দাম এই দেশে কখনো ভাসমান ছিল না। তাহলে এখন কেন আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির অজুহাত দেয়া হচ্ছে?

সরকারের মন্ত্রীরা উদ্ভট কথা বলছেন মন্তব্য করে মান্না বলেন, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির জন্য আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধি, এই কারনে ভারতে জ্বালানি তেল পাচার হবে এই অজুহাত দেয়া হচ্ছে। সরকারের মতে, সেখানকার দাম আমাদের চাইতে বেশি, তাই এটা হবে। জ্বালানির মত একটি তরল বস্তু একটি দেশে পাচার হতে পারে এরকম উদ্ভট কথা মন্ত্রীরা বলছেন। তর্কের খাতিরে তাদের কথা সঠিক বলে যদি ধরেও নেই তবুও জরুরি প্রশ্ন হচ্ছে— কেন তাহলে আমরা জনগণের অর্থ খরচ করে একটি সীমান্তরক্ষী বাহিনী, বিজিবি কেন পুষছি?

ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সব সময় যা হয়, হয়েছে সেটাই। যে পরিমাণ ভাড়া বৃদ্ধির ঘোষণা দেয়া হয়েছিল, ভাড়া বেড়ে গেছে তার চাইতে অনেক বেশি। ঢাকা শহরের ভেতরে এবং আন্তঃজেলা পরিবহন গুলোতে ভাড়া বৃদ্ধির হার ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত হয়েছে। এই ভাড়া বৃদ্ধির মাধ্যমে সরকার জনগণের উপরে প্রচন্ড আর্থিক চাপ তৈরি করেছে। সরকার কিংবা মালিক সংগঠন কেউ তার কথা রাখেনি, এই সরকার এবং সংগঠনগুলোর চরিত্র এবং অতীত কর্মকান্ত দেখে জনগণ অবশ্য জানে, এদের কথা ভাবার কথা না। জ্বালানির দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ভারতের তুলনা দেয়া হলেও দেখা যায় ভারতে ডিজেলের দাম বাংলাদেশের চেয়ে বেশি। কিন্তু সেখানে পরিবহনের খরচ বাংলাদেশের তুলনায় অনেক কম।

বাজার ব্যবস্থা নিশ্চিতের কথা জানিয়ে মান্না বলেন, টিসিবির ২০২০ সালের ১ মার্চ ও গত বৃহস্পতিবারের বাজার দরের তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সে সময়ের তুলনায় এখন মোটা চালের গড় দাম সাড়ে ৩১ শতাংশ, খোলা আটার ২০ শতাংশ, খোলা ময়দার ৩০ শতাংশ, এক লিটারের সয়াবিন তেলের বোতল ৪৩ শতাংশ, চিনি ১৬ শতাংশ, মোটা দানার মসুর ডাল ৩০ শতাংশ ও গুড়ো দুধ ১৩ শতাংশ বেশি। এসব নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। দ্রুত ব্যবস্থার জন্য শুল্ক কমানোর পরামর্শ এসেছিল, কিন্তু করা হয়নি। মজুতদারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত কর হয়নি।

সরকার ভর্তুকি দিয়ে সংকট সমাধান করা যেত, এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমরা জেনে গেছি গত সাত বছরে জ্বালানি তেলের মূল্যের নিম্নমুখী প্রবণতা আর করোনার সময়ে প্রায় শূন্যে নেমে যাওয়ায় সরকার এই বাবদ ৪৩ হাজার কোটি টাকার বেশি মুনাফা করেছে। সরকার এখন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনকে নগদ টাকা দিতে পারতো ঘাটতি পুষিয়ে নিতে অথবা পারতো বিপিসির উপরে করভার (প্রতি লিটার ডিজেলে কর ১৯ টাকা) কমিয়ে দিতে। অর্থাৎ যে কোনো ফর্মেই হোক, ভর্তুকি দেওয়া জরুরি ছিল।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন নাগরিক ঐক্যের সমন্বয়ক শহীদুল্লাহ্ কায়সার, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মুক্তিযোদ্ধা মমিনুল ইসলাম, ডা. জাহেদুর রহমান প্রমুখ।