একটাই দাবি শেখ হাসিনার পদত্যাগ : মির্জা ফখরুল

আপডেট: জুন ১৯, ২০২৩
0
fakhrul

এই সরকার ক্ষমতাচ্যুত করতে ‘দড়ি ধরে টান মারার’ জন্য সকলকে সংগঠিত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সোমবার বিকালে বগুড়ায় এক সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব এই আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ‘‘ এই সরকার এবছরের জন্য বাজেট দিয়েছে। তাদের দলের লোকেরা বলছে যে, এই বাজেট হচ্ছে শুধু বড় লোককে বড় করার জন্য। জাতীয় পার্টি তাদের সঙ্গে ছিলো। তাদের নেতা কাদের সাহেব(জিএম কাদের)গতকাল বলেছেন, এখন দেশের অবস্থা ভয়াবহ। দেশ এখন খাদের কিনার থেকে খাদের কিনারে চলে গেছে। আরেকটু ধাক্কা দিলে দেশ শেষ হয়ে যাবে।”

‘‘ আমি কথাটা একটু ঘুরিয়ে বলতে চাই, আপনারা সত্যজিত রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ একটা সিনেমা দেখেছেন কি? … এক বছর প্রতাপশালী এই আওয়ামী লীগের মতো সরকার তার ইচ্ছামতো দেশ চালাতো, যেমন খুশি তেমন খুশি তেমন দেশ চালাতো….। শেষে মানুষ বিদ্রোহ করলো, বিদ্রোহ করে মানুষ কি বলতে শুরু করলো জানেন। তারা একটা স্ট্যাচু বানিয়েছিলো.. মূর্তি ওই রাজার। ওই মূর্তি উদ্বোধন করবে যেদিন সেদিন হাজার হাজার লোক এসে গেলো। স্ট্যাচুতে একটা দড়ি লাগিয়ে মানুষ বললো, দড়ি ধরে মারো টান, রাজা হবে খান খান। আজকে এই দড়ি ধরে টান মারতে হবে। আর রাজাকে খান খান করতে হবে।”

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘‘ এরা এমন খেয়েছে যে আকাংখা, লোভটা শেষ হয় না। আপনারা দেখেন নাই, আমরা যখন ছাত্র ছিলাম তখন মুনতাসীর মামুন নামে একজন বিখ্যাত নাট্যকার ছিলেন। তার একটা নাটক ছিলো যার চরিত্র ছিলো শুধু খিদা। সব খেয়ে ফেলে, সব খেয়ে ফেলে, যা পায় তা-ই খায়,শেষে কাগজ খাওয়া শুরু করলো, টেবিল-চেয়ার সব খাওয়া শুরু করলো।”

‘‘ এদের অবস্থা হয়েছে এরকম। এখন তারা পুরো দেশটা খেয়ে ফেলেছে।”

তিনি বলেন, ‘‘ এখন তারা আবোল-তাবোল বলতে শুরু করে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন কারো ভয়ে নাকী তিনি ভীত না। ভীত যদি না হবেন তাহলে বিদেশ থেকে ফিরে এসে একথা বললেন কেনো জনগনের সামনে যে, আমাকে তারা সরায় দিতে চায়। কারা সরাতে দিতে চায়? কেনো সরাতে চায়?। আপনি ভয় পান না। আবার বলেন যে, অনেক শক্তিশালী সেই দেশ…. আমাকে দুই মিনিটে শেষ করে দিতে পারে।”

‘‘ আবার ওদের সাধারণ সম্পাদক(ওবায়দুল কাদের) বলছেন, ভিসানীতিতে তারা ভয় পান না, তারা নাকী নতুন ভিসানীতি তৈরি করবেন। এখন জনগন কি বলবে? জনগন হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারছে না…. এদের কথা শুনলে ঘোড়াও হাসে।”

ফখরুল বলেন, ‘‘ এরা(সরকার) অগোছালো হয়ে গেছে। প্রতিদিনই এরা কি বলছেন নিজেরাই জানে না। আমাদের কথা খুব পরিস্কার করে বলেছি, আমরা বাংলাদেশের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের হারানো অধিকার ভোটের অধিকার ফেরত পেতে চাই, আমরা স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করতে চাই, আমরা এই লুট বন্ধ করতে চাই, আমরা মানুষের অধিকারগুলো ফেরত পেতে চাই।”

উত্তরাঞ্চলের তিস্তা নদীর ন্যায্য হিতসা এই সরকার ১২ বছরেও আনতে পারেনি বলে সরকারের ব্যর্থতার কঠোর সমালোচনা করে বলেন, ‘‘ আপনি কি করেছেন। অনেক কথা বলেন, এই বাংলাদেশের জন্য যা করেছেন তা নাকী কেউ কোনোদিন করেনি। আরে এই রংপুরের মানুষ বিশেষ করে লারমনিহাট-কুড়িগ্রাম-রংপুরের তিস্তা নদীর সবচেয়ে বড় এদিককার মানুষের জন্য প্রয়োজন সেই তিস্তার পানি আজকে ভারত সব গেটগুলো খুলে দেওয়ার কারণে অনেক অঞ্চল ডুবে গেছে আবার বন্যা হবে। তাহলে তিস্তা নদীর বন্টনই তো আপনি করতে পারেননি। আজকে ১০/১২ বছর হয়ে গেলো তিস্তার চুক্তি করতে পারেন নাই, সীমান্ত হত্যা বন্ধ করতে পারেন নাই, বিভিন্ন নদীগুলো ন্যায্য হিতসা আনতে পারেন নাই।”

বগুড়ার সেন্ট্রাল হাই স্কুল মাঠে সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে এই তারণ্যে সমাবেশ হয় যুব দল-স্বেচ্ছাসেবক দল-ছাত্র দলের যৌথ উদ্যোগে। এই সমাবেশে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের তিনটি অঙ্গসংগঠনের হাজার হাজার নেতা-কর্মীরা অংশ নেন। প্রধান অতিথি বিএনপি মহাসচিব যখন বিকাল ৬টায় বক্তব্য দিচ্ছিলেন তখনও যুব দল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্র দলের মিছিল সমাবেশস্থলে প্রবেশ করতে দেখা গেছে।

সমাবেশে আসার পরিবহন বন্ধ করে দেয়ার অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ এই সরকার এতো ভীতু, এতো কাপুরুষ যে, গাড়ি-ঘোড়া বন্ধ করে দিয়েছে। গাড়ি-ঘোড়া চলতে দেয় তাহলে বগুড়া শহরে জায়গা দিতে পারবে না এই কারণে গাড়ি বন্ধ করে দিয়েছে।

‘ঋণের বোঝা’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ এই সরকার ঋণের বোঝা আমাদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে। ঋণ তো বুঝেন সবাই কর্জ ধার। লম্বা লম্বা মেগা প্রজেক্ট করছে, সেই প্রজেক্টে যা খরচ হয় সেটা তিনগুন চার গুন টাকা নিয়ে আসছে, সেই টাকা আবার আমাদের পকেট থেকে কেটে নেয়া হচ্ছে।”

‘‘ প্রতিদিন পকেট কাটছে। আপনি যে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে না সেই মোবাইল ফোন টাকা ভরলে দেখবে … ১০০ টাকা ভরলে ৩০ টাকা নাই। কোথায় যায়,ওই আওয়ামী লীগের পকেটে। বিদ্যুতের বিলে দেখবেন একই অবস্থা। আমরা ঢাকায় যারা কার্ডে বিল দেই ১০০০ টাকা ভরলে ৩০০ টাকা নাই। এখন এতো বিদ্যুত উতপাদন করছে যে, বিদ্যুত থাকে না… কিছুক্ষন আগে এই সমাবেশের মাইক বিদ্যুতের না থাকার কারণে বন্ধ হয়ে গেলো। তাহলে গেলো কোথায়? এরা ওই টাকা খেয়ে ফেলেছে। এদের লোভটা শেষ হয় না।”

যুবকদের আন্দোলনের সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান করে তিনি বলেন, ‘‘ আজকে সময় আপনাদের, সময় হচ্ছে তরুনদের। এখন যুদ্ধে যাওয়া সময় যুবকদের। এই তরুণরা সমাজ পাল্টিয়ে, তাদের অধিকার আদায় করেছে ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন করে ভাষার অধিকার নিয়ে এসেছে, তারা ৭১ সালে যুদ্ধ করে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছে। ৯০ সালে আন্দোলন করে তারা গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছে।”

‘‘ আজকে সেই তরুন সমাজের ওপর দায়িত্ব এসেছে এই গণতন্ত্রকে রক্ষা করবার, তাদের অধিকারকে রক্ষা করবার, ভোটের অধিকারকে রক্ষা করবার। আমার এই ভাইয়ের চাকুরি পাওয়ার অধিকারকে রক্ষা করবার, স্বাস্থ্য সেবা পাওয়ার অধিকারকে রক্ষা করবার, শিক্ষার অধিকারকে রক্ষা করবার, মোটা ভাত, মোটা কাপড় পাওয়ার অধিকারকে রক্ষা করবার। আজকে সেই লক্ষ্যে আমাদের লড়াই করছি। এই লড়াই বিএনপির লড়াই নয়, এই লড়াই জনগনের লড়াই। এই লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারুণ্যে প্রতীক হিসেবে আপনারা সবাই জানেন, দেশ নায়েক তারেক রহমান তিনি বলেছেন, আমাদের দাবি একটাই আমাদের ভোটাধিকার ফেরত দিতে হবে, পদত্যাগ করো, সংসদ বিলুপ্ত করো এবং একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার হাতে ক্ষমতা তুলে দাও।”

সমাবেশের মঞ্চে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবিসহ দুইটি চেয়ার সংরক্ষিত রাখা হয়।

স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানীর সভাপতিত্বে ও যুব দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান ও ছাত্র দলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, আসাদুল হাবিব ‍দুলু, ছাত্র দলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, জেলা বিএনপি সভাপতি রেজাউল করিম বাদশাসহ তিনটি অঙ্গসংগঠনের জেলা নেতৃবৃন্দ।

সমাবেশে ফুটবলার মাকসুদ আলম বুলবুল, চাকুরি না পাওয়া সুজাউল ইসলাম সুমন, মওদুদ আহমেদ, ভোটার দিতে না পারা ফারজানা ই্য়াসমিন টুসি ও সরকারি চাকুরিচ্যুত এইচ এম ফজলে রাব্বি বক্তব্য রাখেন।