একটি হুইল ভ্যানে শুয়ে রহম আলী পার করলেন জীবনের ৩৮ টি বছর

আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২১
0

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি :
রহম আলী। বয়স ৫২। বারো বছর বয়সে অসুস্থতায় সে হয়ে যায় শারীরিক প্রতিবন্ধী। একটি নিথর, নিস্তেজ দেহ তার, হাত সামান্য নড়াচারা করতে পারলেও পা দুটি অচল। পা দু’টো সংকোচিত হয়ে মনে হয় কোমরের সাথে এক হয়ে যাচ্ছে। কেউ প্রথমে দেখলে তার মনে প্রশ্ন জাগবে লোকটি জীবিত নাকি মৃত! শারীরিক অক্ষমতা থাকলেও রহম আলী কথা বলেন স্পষ্ট করে। দীর্ঘ ৩৮ বছর ধরে একটানা ৩ ফুট লম্বা একটি পিঁড়ি ও একটি হুইল ভ্যানে শুয়ে জীবনের ৩৮ টি বছর পার করছেন রহম আলী।
কুড়িগ্রামের নদী বিছিন্ন উপজেলা রাজীবপুর-রৌমারী ডিসি সড়কের চাকতাবাড়ি নামক স্থানে সড়কের একপাশে হুইল ভ্যানে ছোট কাঠি হাতে শুয়ে থাকা রহম আলীকে প্রায় প্রতিদিনই দেখা যায়। সেখানে রাস্তার পাশেই তার বাড়ী। এ পথে যারা নিয়মিত চলাচল করে তাদের অনেকেই চেনেন শারীরিক প্রতিবন্ধি এই মানুষটিকে।
হাতের ছোট কাঠি দিয়ে তিনি মূলত শরীরে মাছি বা পতঙ্গ জাতীয় কিছু বসলে তাড়িয়ে দেওয়ার কাজে ব্যবহার করেন তিনি। অন্যের সাহায্য ছাড়া কোন কিছুই করতে পারেন না রহম আলী।
থার মা বাবা মারা গেছেন অনেক আগেই।দুই বোন সোনাবানু বেগম ও রওশনারা বেগম নামের দরিদ্র দুই বোনের সহযোগিতায় জীবনযাপন করছেন রহম আলী। সোনাবানু বেগমের সাথে কথা বলে জানা গেছে তার ভাইয়ের বয়স যখন ১২ বছর তখন জ্বর হয়েছিল। গ্রামের মানুষ বলত ‘বাতাস’ লাগছে। দরিদ্র হওয়ায় উন্নত চিকিৎসা করাতে পারেনি স্থানীয় ভাবে।কবিরাজি চিকিৎসা এবং ঝাঁড় ফুক করা হয়েছিল কিন্তু সুস্থ হতে পারে নি। প্তআস্তে আস্তে শরীরের নিচের অংশ অবশ হয়ে যায়।
রহম আলীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, তার দুই বোনের স্বামীর সংসারে ঠাঁই হয় নি। সড়কে মাটি কেটে জীবিকা নির্বাহ করে তারা। সামান্য কিছু আয় দিয়ে কোনরকমে দিন যাপন করছে করছি আমরা। নিজস্ব জমি না থাকায় সড়কের পাশেই ঘর তুলে বসবাস করি। প্রতিদিন সকালে রহম আলীকে বহনকারী হুইল ভ্যানটি সড়কের পাশে রাখা হয় স্থানীয় ও সড়কে চলাচলকারী পথচারীরা আর্থিক ভাবে সাহায্য করে। দুই বোনের শ্রমিক হিসেবে কাজ করে পাওয়া মজুরি ও বিভিন্ন ব্যাক্তির কাছে পাওয়া আর্থিক সাহায্য এবং প্রতিবন্ধি হিসেবে তিনমাস পর পর পাওয়া ২১০০ টাকা দিয়েই জীবনযাপন করছে বোনদের সাথে।
সরকারী কোন সহয়তা পান কিনা জানতে চাইলে রহম আলী বলেন, শুধু প্রতিবন্ধি ভাতা ছাড়া আর তেমন কোন সাহায্য পাই না। জীবনের কোন ইচ্ছে আছে কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, কারও সাহায্য ছাড়া চলাফেরা করতে পারি না যদি যদি নিজে নিজে চলাফেরা করতে পারতাম তাহলে খুব শান্তি পাইতাম।
এবিষয়ে রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল ইমরান বলেন, ওই প্রতিবন্ধী ব্যাক্তি আমার কাছে আবেদন দিলে তা আমি যাচাই করে সহায়তার ব্যবস্থা করব।
###