‘করোনাকালে বাংলাদেশে তথ্য অধিকারের নজিরবিহীন সংকোচন ঘটেছে’

আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২১
0

বাংলাদেশে কোভিড-১৯ মহামারীর গত ১৮ মাসে জনগণের তথ্য অধিকারের ক্রমাগত লঙ্ঘন ও সংকোচনের নজিরবিহীন প্রবণতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আর্টিকেল নাইনটিন। আন্তর্জাতিক অধিকার সংস্থাটির পর্যবেক্ষণ বলছে, মহামারীর প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে একইরকম সমন্বয়হীনতা, কর্মপরিকল্পনায় অস্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার তীব্র অভাব বাংলাদেশে এই সঙ্কটকে গভীরতর করেছে। একই সঙ্গে রাষ্ট্রের বিভিন্ন যন্ত্রের হাতে তথ্যের অধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা দমন-পীড়নের শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত, যা সরকার প্রতিশ্রুত টেকসই, স্থিতিশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ বিনির্মাণের পরিপন্থী।

আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস-২০২১ উপলক্ষে সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে আর্টিকেল নাইনটিন দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ফারুখ ফয়সল বলেন, করোনাকালে সরকার নানা অজুহাত দেখিয়ে তথ্য পাওয়ার অধিকার ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করেছে। এমনকি করোনা ব্যবস্থাপনা, স্বাস্থ্য সেবা ও টিকা বিষয়ে সরকার অনেক সময় ভুল ও অসংগতিপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। স্বাস্থ্যখাতের চিহ্নিত অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে সরকার উল্টো সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকদের ওপরই খড়গহস্ত হয়েছে। এজন্য ২০১৮ সালের নিবর্তনমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ শতবছরের পুরনো দাপ্তরিক গোপনীয়তা আইনের অপব্যবহার হচ্ছে।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, আর্টিকেল নাইনটিন গণমাধ্যমে প্রকাশিত মতপ্রকাশজনিত অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা নিয়মিতভাবে পর্যবেক্ষণ ও রেকর্ড করে। সংস্থাটি ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের হওয়া ১৭২টি মামলার ঘটনা রেকর্ড করেছে।

বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ৩০৮ জন ব্যক্তি এসব মামলায় অভিযুক্ত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৪১ জন সাংবাদিক। অভিযুক্তদের মধ্যে ১১৪ জনকে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের অনেকেই এখনো জামিনের অপেক্ষায় আছেন। ২০২০ সালে ৩৬৮ জন ব্যক্তির বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া ১৯৭টি মামলার তথ্য রেকর্ড করা হয়। এর আগে ২০১৯ ও ২০১৮ সালে রেকর্ডকৃত মামলার সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৬৩টি ও ৩৪টি। বিচার প্রক্রিয়া নিষ্পন্ন না হওয়ায় এসব মামলার ভুক্তভোগীদের বেশিরভাগ এখনো গ্রেপ্তার-হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

বিবৃতিতে ফারুখ ফয়সল বলেন, তথ্য পাওয়া নাগরিকের মৌলিক মানবাধিকার। একইভাবে ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা ও গোপনীয়তার সমান অধিকারও নাগরিকের রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে প্রায়ই ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে আড়ি পাতা এবং গোপন ফোনালাপ ফাঁস হয়ে যাওয়ার মতো উদ্বেগজনক ঘটনা ঘটছে। এরই মধ্যে প্রস্তাবিত ‘ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা আইন’ ব্যক্তিতথ্য সুরক্ষার নামে বিরুদ্ধ মত নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হবে ও স্বাধীন মতপ্রকাশ আরও বাধাগ্রস্ত করবে বলে জনমনে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের (এসডিজি) অন্যতম লক্ষ্যমাত্রা ১৬ (শান্তি, ন্যয়বিচার ও শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান) অর্জনে তথ্য অধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিতের কোন বিকল্প নেই উল্লেখ করে ফারুখ ফয়সল বলেন, বাংলাদেশের সংবিধান জনসাধারণের তথ্য অধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতার সুরক্ষা দেয়। বাংলাদেশ জাতিসংঘের সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্র (ইউডিএইচআর) এবং নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের আন্তর্জাতিক চুক্তিরও (আইসিসিপিআর) অন্যতম অনুস্বাক্ষরকারী দেশ। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশের করা এই অঙ্গীকারগুলো প্রতিপালনে সরকারকে সচেষ্ট হওয়ার আহবান জানানো হয়েছে বিবৃতিতে।