কর্মস্থল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সকল ধরনের সহিংসতা ও নির্যাতন প্রতিরোধে “যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন” প্রণয়ন এবং আইএলও কনভেনশন-১৯০ “ইলেমিনেশন অব ভায়োলেন্স এন্ড হেরাসমেন্ট ইন দি ওয়ার্ল্ড অব ওয়ার্ক” অনুসমর্থনের আহ্বান জানিয়েছেন শ্রম অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনের জোট জেন্ডার প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ। আজ ৮ ডিসেম্বর ২০২১ (বুধবার) জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ২০২১ উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
জেন্ডার প্লাটফর্ম বাংলাদেশ এর সচিবালয় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিলস্ পরিচালক নাজমা ইয়াসমীন এর সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে জেন্ডার প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ লেবার ফাউন্ডেশন এর নির্বাহী পরিচালক আশরাফ উদ্দিন মুকুট। তিনি বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি, কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ অনেক বেড়েছে। পুরুষের পাশাপাশি এগিয়ে যাচ্ছে নারীরাও। সরকারি-বেসরকারি চাকরি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব জায়গায় এখন নারীরা কর্মরত। পাশাপাশি নানা ধরনের সমস্যায়ও তারা পড়ছেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারা এখনো বৈষম্যের শিকার। উল্লেখযোগ্য সমস্যা হলো যৌন হয়রানি। শারীরিক, মানসিক, মৌখিক, বিভিন্নভাবে নারীরা যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। নারীর নিরাপত্তার বৈষম্য খুবই প্রকট। দিনে দিনে নারীদের প্রতি যৌন হয়রানির মাত্রা বেড়েই চলেছে এবং বর্তমানে তা এক ভয়াবহ রূপ ধারন করেছে।
তিনি উল্লেখ করেন, কর্মক্ষেত্রে যে কোন ধরণের যৌন হয়রানি প্রতিকূল অবস্থার সৃষ্টি করে যা মানবাধিকারের সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি অন্যতম প্রতিবন্ধকতা। তাই কর্মস্থল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সকল ধরনের সহিংসতা ও যৌন নির্যাতন প্রতিরোধে “যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন” প্রণয়ন করা খুবই জরুরি।
এসময় তিনি আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) কর্তৃক প্রণীত কনভেশন ১৯০ “ইলেমিনেশন অব ভায়োলেন্স এন্ড হেরাসমেন্ট ইন দি ওয়ার্ল্ড অব ওয়ার্ক” অনুসমর্থনের দাবি জানিয়ে বলেন, কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি বন্ধে এই কনভেশনটি বাংলাদেশ কর্তৃক গৃহীত হলে তা বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতিকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সুদৃঢ় করবে, তেমনি বাংলাদেশ সরকারের ভাবমূর্তি আরো উজ্জ্বল করবে। একইসাথে ভয়াবহতার চিত্র পাল্টাতে ও সর্বক্ষেত্রে যৌন হয়রানি বন্ধে অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, নারীরা দেশে এবং দেশের বাইরে পুরুষের সাথে সমানভাবে শ্রম দিচ্ছে। নারীর ক্ষমতায়ন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতি প্রশংসাজনক। কিন্তু নারীরা এখনো সকল ক্ষেত্রে নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। বক্তারা বলেন, কর্মক্ষেত্র এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্যাতন ও হয়রানি প্রতিরোধে সংবাদিক’সহ সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। এক্ষেত্রে কর্মক্ষেত্রের সংজ্ঞাগত পরিধিকে বিস্তৃত করে সরকারের আরো জোরালো ভূমিকা রাখতে পারে বলে তারা অভিমত ব্যক্ত করেন।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি’র ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যাড. সীমা জহুর, আওয়াজ ফাউন্ডেশন এর নির্বাহী পরিচালক নাজমা আক্তার, মনডিয়াল এফএনভি’র বাংলাদেশ পরামর্শক মোঃ শাহীনুর রহমান, কর্মজীবী নারী’র সমন্বয়ক কাজী গুলশান আরা দিপা, ফেয়ারওয়্যার ফাউন্ডেশন প্রতিনিধি, গবেষক, আইনজীবী এবং সাংবাদিকবৃন্দ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে ৬টি সুনির্দিষ্ট দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হলো; যৌন হয়রানি মুক্ত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে “কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ আইন” প্রণয়ন করা; কর্মক্ষেত্রে সহিংসতা ও হয়রানি নিরসন বিষয়ক আইএলও কনভেনশন ১৯০ অনুসমর্থন করা; যৌন হয়রানি প্রতিরোধে ২০০৯ সালে প্রদানকৃত হাইকোর্টের নির্দেশনার যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা, এবং কর্মস্থলে যাতায়াতের পথে ও সমাজে নারী শ্রমিকের যৌন হয়রানি থেকে সুরক্ষা প্রদান নিশ্চিত করা; আদালতের নির্দেশনা যাতে সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়, সে জন্য সরকারি উদ্যোগে একটি তদারকি কমিটি গঠন করা; যৌন হয়রানি প্রতিরোধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা, এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নারী ও শিশু নির্যাতনের বিচার নিষ্পত্তি করা ও বৈষম্যমূলক আইন সংশোধন করা; এবং নারীর প্রতি সহিংসতামুক্ত সংস্কৃতি চর্চা করা।