কুরবানীর বিনিময়ে হলেও জুলুমবাজ সরকারের মোকাবেলা করে বিজয়ী হতে হবে : মুজিবুর রহমান

আপডেট: আগস্ট ২৫, ২০২৩
0

ভারপ্রাপ্ত আমিরে জামায়াত ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, ‘আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ আজ এক কঠিন সময় অতিবাহিত করছে। দেশে আজ গণতন্ত্র নেই, জনগণের কথা বলার অধিকার নেই, এমনকি মানুষের জান ও মালেরও কোনো নিরাপত্তা নেই। সরকার তার সামগ্রিক ব্যর্থতায় দেশকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। এমতাবস্থায় রুকন (সদস্য) ভাইদের পেছনে থাকার কোনো সুযোগ নেই।

দেশের এই ক্রান্তিকাল উত্তরণে সাহাবায়ে কেরামের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে জামায়াতে ইসলামীর প্রত্যেক রুকনকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। সংগঠনের আহ্বানে ভয়-ভীতির তোয়াক্কা না করে ইকামতে দ্বীনের কাজকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। জামায়াত সবসময় অন্যায় ও জুলুমের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করছে। এখন সময় এসেছে, জান-মালের কুরবানীর বিনিময়ে হলেও জুলুমবাজ সরকারের সাথে মোকাবেলা করে বিজয়ী হতে হবে।’

তিনি আজ শুক্রবার সকালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে আয়োজিত রুকন (সদস্য) সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন।

কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য প্রদান করেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও প্রচার সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ।

আরো বক্তব্য প্রদান করেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির যথাক্রমে আব্দুস সবুর ফকির ও অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন।

উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি যথাক্রমে দেলওয়ার হোসাইন, কামাল হোসাইন, ড. আব্দুল মান্নান। কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের মজলিশে শূরা সদস্য যথাক্রমে অধ্যাপক মোকাররম হোসাইন, ফরিদ হোসাইন, মাওলানা আবু ফাহিম, ইঞ্জিনিয়ার শেখ আল আমিন, আবু সাদিক, অ্যাডভোকেট এস এম কামাল উদ্দিন, ড. মোবারক হোসাইন সহ মহানগরীর কর্মপরিষদ ও মজলিসে শূরার সদস্যরা।

অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসূল সা: প্রদর্শিত একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান ইসলাম। শুধুমাত্র ইসলামই জনগণকে তার প্রকৃত নাগরিক অধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করে। এমতাবস্থায় দেশের মানুষের মুক্তির জন্য ইসলামের সু-মহান আদর্শের ভিত্তিতে একটি ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণ করতে হবে।

তিনি বলেন, রোকনদেরকে সাধারণ জনগণের সামনে এবং সংগঠনের অধঃস্তন কর্মীদের কাছে অনুকরণীয় হতে হবে। নিজেদের আমলিয়াত এবং কথা ও কাজের মাধ্যমে ইসলামের সৌন্দর্যকে সকলের সামনে ফুটিয়ে তুলতে হবে। সেই সাথে সৎ কাজের আদেশ ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করতে হবে। রাসুল সা: সিরাত থেকে জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে সাহাবায়ে আজমাইনের মতো আন্দোলনে আরো অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে।

তিনি আরো বলেন, আমাদের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে হত্যা করে কুচক্রী মহল ভেবেছিল জামায়াত শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু মহান আল্লাহর মেহেরবানিতে জামায়াত আরো শক্তি সঞ্চার করে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। একইভাবে সরকার রাষ্ট্রীয় শক্তি প্রয়োগ করে ফ্যাসিস্ট কায়দায় আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর জানাজা রাজধানীতে করতে না দিয়ে এ দেশের তৌহিদী জনতার অন্তরে আঘাত হেনেছে, যা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং ধর্মীয় ও সাংবিধানিক অধিকারের পরিপন্থী।

অপর দিকে আমিরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানসহ জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতারা জুলুমের শিকার হয়ে কারাগারে বন্দী রয়েছেন। অবিলম্বে আমরা তাদের মুক্তির দাবি করছি। আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব হচ্ছে জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অথচ তারা সরকারের পেটুয়া বাহিনী হিসেবে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের উপর জুলুম নির্যাতন চালাচ্ছে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যেকোনো নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনে বাঁধা ও নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করে বর্বরোচিত নির্যাতনের ঘটনা চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। জেল-জুলুম, মামলা-হামলা, নির্যাতন ও হত্যার ভয় দেখিয়ে জামায়াতকে দমিয়ে রাখা যাবে না। একইসাথে জনগণের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনকেও বন্ধ করা যাবে না। তিনি নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে এই জুলুমবাজ সরকারকে বিদায় জানানোর জন্য সকলের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।

মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, জামায়াতের রুকন হিসেবে আমরা আল্লাহ তায়ালার দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য বাইয়াত বা শপথ গ্রহণ করেছি। এই শপথের কর্মী হিসেবে আমাদের দুই জন সাবেক আমিরে জামায়াত সহ শীর্ষ নেতাদের মজলুম অবস্থায় শাহাদাতের মর্যাদা নিয়ে দুনিয়া থেকে চলে গেছেন। এভাবে অসংখ্য শাহাদাতের নজির আমাদের সামনে রয়েছে। তাই দ্বীন কায়েমের প্রচেষ্টায় জামায়াতের রুকনদের আরো ত্যাগ ও কুরবানীর নজরানা পেশ করে ময়দানে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে হবে। জামায়াতের সর্বস্তরের জনশক্তিদের মজবুত ঈমানের বলে বলিয়ান করে সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য ইলমি যোগ্যতা অর্জন করতে হবে।

অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, আল্লাহর রাসূল সা:-এর যুগেও দ্বীন ইসলাম প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে পরিপূর্ণভাবে নির্মূল করে দেয়ার জন্য নানামুখী ষড়যন্ত্র অব্যাহত ছিল। বাইয়াতবদ্ধ একদল লোকের দ্বারা দীর্ঘ ১৩ বছরের ক্রান্তিকালীন পরিস্থিতি মোকাবেলা করা সম্ভব হয়েছিল। আজকে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী পার্শ্ববর্তী দেশে গিয়ে আবদার করছে বাংলাদেশে ধর্ম বিশ্বাসী মহলকে ঠেকাতে হবে। সুতরাং এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে যে দেশ ও বিদেশের কুচক্রী মহলের মূল টার্গেট হচ্ছে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী মূল্যবোধকে দমিয়ে রাখা। জামায়াতে ইসলামীর রুকনদের এ বিষয়ে সজাগ ও সচেতন থেকে ভূমিকা পালন করতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে জামায়াতে ইসলামীর গণভিত্তি রচনার জন্য সংগঠনের রুকনেরাই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এজন্য টার্গেটভিত্তিক সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিদেরকে জামায়াতে শামিল করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। ব্যাপক ভিত্তিক সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। মানুষের বিপদ-আপদে পাশে থেকে মানবতার সেবা করতে হবে। এ লক্ষ্যে সংগঠনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে রুকনদের আরো তৎপর হতে হবে। নিয়মিত অধ্যয়নের মাধ্যমে জ্ঞানার্জন ও অন্তরের খোরাক যোগাতে হবে। সমাজের সকল সেক্টরে সৎ, যোগ্য ও দক্ষ লোক তৈরী করতে হবে। সামাজিক নেতৃত্ব তৈরি করতে হবে। সার্বিকভাবে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সাহায্য কামনা করতে হবে।

তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের প্রিয় জন্মভূমি এক গভীর সঙ্কটের মধ্যে রয়েছে। দেশের অর্থনীতি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে, তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জনগণের নাভিশ্বাস উঠছে, জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার হরণ করা হয়েছে। এই ক্রান্তিকালে দেশ ও জাতির প্রয়োজনে সকল আন্দোলন সংগ্রামে রুকনদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।