কৃষিতে বিপ্লব ঘটিয়ে যার স্বপ্নরা এখন বাতাসে দোল খায়

আপডেট: মে ৬, ২০২১
0

রেজাউল বারী বাবুল,গাজীপুর ঃ

কৃষক মানেই নোংরা কাপড় পরিহিত গ্রামের কোন অশিক্ষিত গরীব লোক নয়। একজন মাস্টার্স ডিগ্রীধারী ব্যাক্তিও কৃষি কাজ করতে পারে।আধুনিক চাষাবাদ ও লাগসই প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটানো সম্ভভ। এই চিন্তা চেতনা থেকে একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে এলেন গাজীপুর মহানগরের ছোট দেওড়া এলাকার ইশতিয়াক মুনিম ও কৃষিবিদ শাহাদাত হোসেনসহ তার বন্ধুরা। বৃক্ষের প্রতি ভালবাসা নিয়ে কৃষিতে মাস্টার্স ডিগ্রীধারী ইশতিয়াক মুনিম তার বাড়িতে গড়ে তুলেছিলেন বিভিন্ন ফুল,ফল ও ক্যাকটাসের বাগান। বৃক্ষপ্রেমিক সেই ইশতিয়াক মুনিম এখন সফল উদ্যোক্তা।

‘বায়ো গ্রীন এগ্রো ফার্ম’ নামে তার বন্ধুদের নিয়ে বাড়ির পাশে সাড়ে ৪বিঘা জমিতে সে শুরু করে ফল ও সবজির চাষাবাদ। শুরুর প্রথমে অনেকে নাক ছিটকালেও এখন প্রতিদিন লোকজন ভীড় করছে তাদের কৃষিফার্ম দেখার জন্য। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় তাদের উদ্যোগের সফলতা স্থান পেয়েছে।তাদের এই সাফল্যে অনুপ্রানিত হয়ে কৃষিকাজে আগ্রহ দেখাচ্ছে অনেক তরুন তরুনী। ইশতিয়াক মুনিমের পিতা হাফেজ মজিবুর রহমানের মৃত্যুর পর সে করোনাকালীন সময়ে ঘরে বসে না থেকে তার পৈত্রিক সম্পত্তিতে আধুনিক ও লাগসই প্রযুক্তি ব্যাবহারে মাধ্যমে কোনরকম বিষাক্ত কিটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহার না করে একটি কৃষিফার্ম করার পরিকল্পনা নেন।এতে তার স্ত্রী কৃষি উপসহকারী কর্মকর্তা শারমিন আকতার ও কৃষিবিদ বন্ধু শাহাদাত হোসেন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন।
গত জানুয়ারির শেষের দিকে তারা সামনের রমজান মাসকে টার্গেট করে সাড়ে ৪বিঘা জমিতে শসা, বেগুন ও হলুদ তরমুজ, পাশাপাশি লাউ, মিষ্টিকুমড়া, চিচিঙ্গা, ঝিঙা, ঢ্যাঁড়শ, করলা, উচ্ছে, পেঁপে, ডাঁটাসহ বিভিন্ন সবজির বীজ ভপন করেন।

প্রশিক্ষিত কৃষক সমাজ প্রতিষ্ঠা করে কৃষিতে বিপ্লব ঘটানো মুনিমের স্বপ্ন

মাত্র আড়াই মাসেই শসা, বেগুন ও তরমুজে সাফল্য আসে। তাদের স্বপ্নগুলো যেন হলুদ তরমুজ আর শশা বেগুনের সাথে বাতাসে দোল খায়। সাত শতক জমিতে চাষ করা শসা থেকে তারা ৩০ হাজার টাকার বেশি আয় করেন।বর্তমানে প্রতিদিন বেগুন নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বাজারে। এতে দৈনিক হাজার টাকার উপরে আসছে। এছাড়া অন্য সবজিরও বাম্পার ফলন হয়েছে । তবে সবচেয়ে তাক লাগানো সাফল্য এসেছে হলুদ তরমুজে। মাচাভর্তি ঝুলে আছে শত শত তরমুজ। পাশাপাশি কাল তুরমুজেরও ভাল ফলন হয়েছে।তারা গোল্ডেন ব্রাউন প্রজাতির তৃপ্তি ও ব্লাকবেবি জাতের তরমুজের চাষ করেছেন। গত ৫ মে থেকে তারা গাছ থেকে তরমুজ সংগ্রহ করতে শুরু করেছেন।পর্যায়ক্রমে বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য ফল ও সবজির পরিচর্যা চলছে নিয়মিত।


গাজীপুরের ইশতিয়াক মুনিমের স্বপ্নরা বাতাসে দোলখায়ঃ

কৃষিবিদ শাহাদাত হোসেন বলেন, কৃষি বিষয়ে মাস্টার্স করার পর তিন বছর আগে একটি বিদেশি উন্নয়ন সংস্থায় চাকরি নেন তিনি। করোনার কারণে অফিস বন্ধ থাকায় চাষবাসের বিষয়টি মাথায় আসে। তারা আধুনিক ‘মালচিং’ পদ্ধতিতে চাষাবাদ করেছেন। এ পদ্ধতিতে চাষাবাদের জন্য বেড তৈরি করে মাটি এক ধরনের বিশেষ প্লাস্টিকের কাগজ দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। নির্দিষ্ট দূরত্বে কাগজ ফুটো করে চারা লাগানো হয়।

বিশেষ এ কাগজ মাটির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ও গুণগতমান ঠিক রাখে। আগাছা জন্মায় না। জৈব সারের সক্ষমতা ধরে রাখে বহুদিন। খামারে তারা কোনো ধরনের রাসায়নিক সার বা কীটনাশক ব্যবহার করেননি। সার-কীটনাশক সব জৈব। পোকামাকড় মারতে ব্যবহার করেন সেক্স ফেরোমিন ফাঁদ প্রযুক্তি ও আটাযুক্ত টেপ।বর্তমানে বিষমুক্ত সবজির চাহিদা ব্যাপক।তাই ফার্মেই তাদের সব সবজি বিক্রি হয়ে যায়।

পাশাপাশি কৃষি ফার্মে নিয়মিত কাজ পেয়ে অনেক খুশি স্থানীয় মুনসুর মিয়া ও আব্দুস সাত্তার। এছাড়া মুনিম তার বন্ধু রাসেল,হাসানও শাহাদাত নিয়মিত ফার্মটিতেনিরলস ভাবে কাজ কর যাচ্ছেন। তাদের স্বপ্ন ভবিষ্যতে একটি ‘কৃষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন’ করা। চাকরির পিছনে না ঘুরে শিক্ষিত তরুন সমাজকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সফল উদ্যোক্তা তৈরীর মাধ্যমে একটি প্রশিক্ষিত কৃষক সমাজ প্রতিষ্ঠা করে কৃষিতে বিপ্লব ঘটানো।
###
মোঃ রেজাউল বারী বাবুল
গাজীপুর।