কোভিড-১৯ -এর উৎপত্তি-সন্ধান ঘিরে দেখা দিয়েছে সংশয়, জোরালো হচ্ছে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি

আপডেট: সেপ্টেম্বর ১২, ২০২১
0
(Please credit : The Frederick News-Post/Sam Yu) A simple sign designates the U.S. Army Medical Research Institute of Infectious Diseases or USAMRIID at Fort Detrick. The facility was established in January 1969. This photo was taken April 4, 2006.

সাম্প্রতিক সময়ে, ড. রালফ বারিক ও তার নর্থ ক্যারোলাইনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইউএনসি) টিম দ্বারা পরিচালিত করোনাভাইরাসের গবেষণা কাজ নিয়ে বিভিন্ন মহলে গুরুতর প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। বর্তমানে, আমরা যে বৈশ্বিক মহামারির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, সেটি কি সংক্রামক রোগগুলির জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনা মেডিকেল গবেষণা ইনস্টিটিউট (ইউএসএএমআরআইআইডি) সাথে উক্ত গবেষণা দলের সহযোগিতার গুরুতর পরিণতি কিনা, তা নিয়েও দেখা দিয়েছে নানা সংশয়।

কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের সাথে ল্যাব (ইউএসএএমআরআইআইডি) এর সম্পৃক্ততার বিভিন্ন সন্দেহজনক দিক এবং ২০১৯ সালে অসংখ্য নিয়ম ভঙ্গের ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় জনস্বাস্থ্য সংস্থা সিডিসি’র (দ্য সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন) ল্যাবটি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত, যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক এ ল্যাবের কার্যকলাপকে আরও সন্দেহজনক ও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

ড. রালফ বারিক ও তাঁর ইউএনসি’র গবেষণা দল বেশ কিছুদিন যাবৎ করোনাভাইরাস-সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এর মধ্যে একটি হল গেইন-অব-ফাংশন (জিওএফ) গবেষণা, যা করোনাভাইরাস জিনোমের ম্যানিপুলেশন ও মডিফিকেশনের জন্য খুব সহজেই প্রয়োগ করা যায় এমন সিন্থেটিক জীববিজ্ঞান কৌশল ধারণের জায়গা তৈরি করে।

উল্লেখিত ল্যাব থেকে বা দুর্ঘটনামূলকভাবে ড. রালফ বারিক ও তাঁর গবেষণা দল থেকে করোনাভাইরাসের নতুন স্ট্রেন ছড়িয়েছে কিনা এমন সম্ভাবনার সন্দেহটি তাদের বিস্তৃত গবেষণা ও এ কাজের সাথে সম্পর্কিত পেটেন্ট দ্বারা আরও শক্তিশালী হয়।

২০০৩ সালে একটি গবেষণাপত্রে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে জানা যায় ড. রালফ বারিকের গবেষণা দল ইউএসএএমআরআইআইডি’র সাথে অংশীদারিত্ব করেছিল এবং দুই মাসের মধ্যে পূর্ণদৈর্ঘ্য সিডিএনএ তৈরি করেছিল। এটি স্পষ্টভাবেই ইঙ্গিত করে, ২০০৩ সালেও এই প্রতিষ্ঠানের সার্স-সম্পর্কিত করোনাভাইরাস রূপান্তরিত করার জন্য প্রয়োজনীয় সার্স ভাইরাসের আরএনএ সম্পর্কে উন্নত সক্ষমতা ও বিস্তারিত জানাশোনা ছিল।

২০০৮ সালে আরেকটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে ড. রালফ বারিক একটি প্রাণি থেকে ভাইরাস পুনর্গঠনে তাঁর সাফল্যের কথা উল্লেখ করেছিলেন; এর জিনোম ব্যাকবোন বাদুড় সার্স- জাতীয় করোনাভাইরাস থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল। ২০১৫ সালে প্রকাশিত ‘এ সার্স-লাইক ক্লাস্টার অব সার্কুলেটিং ব্যাট করোনাভাইরাস শো পটেনশিয়াল ফর হিউম্যান ইমার্জেন্স’ শিরোনামের একটি গবেষণাপত্রে দাবি করা হয়েছিল যে, ইঁদুর-অভিযোজিত সার্স-কোভ ভাইরাস থেকে জিনোম ব্যাকবোন দিয়ে একটি করোনাভাইরাস তৈরি করা হয়েছিল।

এছাড়াও, ড. রালফ বারিক ও তাঁর দল ইউএসএএমআরআইআইডি’র সাথে কাজ করেছেন এবং তাদের বিভিন্ন পেটেন্টের মালিকানা রয়েছে, যার অধিকাংশই করোনাভাইরাস জিনোমের ম্যানিপুলেশনের সাথে সম্পর্কিত।
একইসাথে, ইউএসএএমআরআইআইডি ল্যাবের বিরুদ্ধে নীতি লঙ্ঘনের বিভিন্ন অভিযোগ এই ল্যাব থেকে করোনাভাইরাস ছড়ানোর সম্ভাবনার দাবিকে আরও দৃঢ় করে। ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসি এ ল্যাবের নীতি লঙ্ঘনের অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখতে ল্যাব পরিদর্শনে গিয়েছিল এবং জানতে পেরেছিল যে, ল্যাব কর্তৃপক্ষ ও এর কর্মীরা জৈব নিরাপত্তা ও নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি মেনে চলতে ব্যর্থ হয়েছে।

এ পরিপ্রেক্ষিতে অনেকেই এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং ফোর্ট ডেট্রিক-এ অবস্থিত এ ল্যাবের কার্যকলাপের একটি নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য ও সার্স-কোভ-২ এ ব্যাট করোনাভাইরাস মিউটেশনের সম্ভাব্যতা সম্পর্কে সত্য উদঘাটন করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রত্যেকের এখন নিজের দায়িত্ব নিজের পালন করা উচিৎ। অর্থনৈতিকভাবে অগ্রসরমান দেশগুলোর উচিৎ দ্রুত সময়ের মধ্যে কোভিড-১৯ এর উৎপত্তি খুঁজে বের করা, যেনো বিজ্ঞানীরা লক্ষ লক্ষ জীবন বাঁচাতে সমাধানের জন্য তাদের কাছে সহজে তথ্য পেতে পারেন। এজন্য দল, মত সকল পার্থক্য নির্বিশেষে সব দেশের যূথবদ্ধভাবে এ সমস্যা সমাধানে কাজ করতে হবে।