ক্যান্সার প্রতিরোধে ও ত্বকের যত্নে সহায়ক চেরি টমেটোর চারটি দেশীয় জাত উদ্ভাবন বশেমুরকৃবির

আপডেট: জুন ৬, ২০২১
0

গাজীপুর সংবাদদাতাঃ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যান্সার প্রতিরোধে ও ত্বকের যত্নে সহায়ক চেরি টমেটোর চারটি নতুন দেশীয় জাত উদ্ভাবন করেছে। নতুন উদ্ভাবিত বিউ চেরি টমেটো ২, বিউ চেরি টমেটো ৩, বিউ চেরি টমেটো ৪ ও বিউ চেরি টমেটো ৫ নামের জাত তিনটি মাসে জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক বানিজ্যিকভাবে কৃষক পযার্য়ে চাষাবাদের জন্য অনুমোদন লাভ করেছে। চেরি টমেটোর এ জাতগুলোর উদ্ভাবন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের অধ্যাপক ও পরিচালক (গবেষনা) প্রফেসর ড. এ. কে. এম আমিনুল ইসলাম।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ গিয়াসউদ্দীন মিয়া জানান, আমাদের দেশের কৃষক এবং ভোক্তা পর্যায়ে প্রমান সাইজের দেশীয় টমেটোর পর চেরি টমেটো নতুন করে জনপ্রিয় হয়ে উঠায় এর চাহিদাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এদের প্রায় বেশির ভাগই বিদেশী কোন জাতকে দেশী আবহাওয়ায় উপযোগী করে চাষ করা হচ্ছে। এই জাতগুলোই দেশে প্রথম বিদেশী জাতের চেরি টমেটোর সঙ্গে দেশীয় টমেটোর সংকরায়ন এবং পরবর্তীতে পিউর লাইন নির্বাচনের মাধ্যমে প্রাপ্ত একেবারেই নতুন জাত হিসাবে উদ্ভাবন করা হয়েছে। দেশীয় স্বাদকে অক্ষুন্ন রেখে চেরি সাইজ আনতে গবেষককে অপেক্ষা করতে হয়েছে ৭ থেকে ৮ বছর।

ছবির ক্যাপশনঃ
গাজীপুর ঃ বশেমুরকৃবি’তে উদ্ভাবিত দেশীয় জাতের চেরি টমেটো।

গবেষক প্রফেসর ড. আমিনুল ইসলাম বলেন, বিউ চেরি টমেটোর জাতগুলো দেশী আবহাওয়ায় কোন প্রকার অতিরিক্ত যত্নবিহীনভাবে দেশী টমেটোর মতোই শীতকালে চাষযোগ্য, উচ্চফলনশীল, আকর্ষনীয় আকৃতি ও বর্ণের। এগুলো খেতে অত্যান্ত সুস্বাদু, মিষ্টি, কম বীজযুক্ত বা প্রায় বীজ বিহীন এবং পুষ্টিকর। গাছ প্রতি ফলন আড়াই কেজি থেকে সাড়ে ৩ কেজি। এছাড়াও সুপার শপ গুলোতে যে বিদেশী বীজ বিহীন বা কম বীজযুক্ত চেরি টমেটো পাওয়া যায় তার বেশির ভাগই প্রতি কেজি প্রায় এক হাজার থেকে ১ হাজার ৩শ’ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।

তিনি আরো বলেন, এই জাতগুলো আমাদের জন্য হতে পারে বিদেশী জাতগুলোর পরিপূরক। তাছাড়া যেকোন সবজির মধ্যে রান্নার পর টমেটোর এন্টিঅক্সিডেন্ট গুনাবলী সবচেয়ে বেশি অক্ষুন্ন থাকে। আর নতুন উদ্ভাবিত জাতগুলোর রান্না ছাড়াও পাকা অবস্থায় আঙ্গুরের মত খাওয়া যায় বিধায় এবং এদের এন্টিঅক্সিডেন্ট গুনাবলী বেশী থাকায় মানবদেহে ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করবে। তাছাড়া টমেটোতে বেশী পরিমানে লাইকোপিন থাকায় ত্বকের যত্নে চেরী টমেটো খুবই উপকারী। চেরি টমেটো গাছের ক্যানোপি কম হওয়ায় ছাদ বাগানেও এ জাতগুলো সহজেই উৎপাদন করা যাবে।

একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফারজানা মোস্তফা ইরা এই জাতগুলোর একজন সহযোগী ব্রিডার হিসেবে বলেন, স্যারের গবেষণা বরাবরই ভিন্ন ধর্মী থাকায়, ছাত্র অবস্থায়ই এই চেরি টেমটো নিয়ে গবেষনায় আগ্রহী হই এবং পরবর্তীতে এর উদ্ভাবন প্রক্রিয়ায় সরাসরি সম্পৃক্ত থাকি। দেশের মানুষের উৎপাদন ও খাদ্য চাহিদায় এটি কৃষকের এবং ভোক্তার প্রথম পছন্দ হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ গিয়াসউদ্দীন মিয়া এ বিষয়ে বলেন, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকগুলো জাতই এসেছে কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের এই অধ্যাপকের হাত ধরে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারাবাহিক জাত উদ্ভাবনে তিনি এবার উচ্চমূল্যের চেরি টমেটোর চারটি জাত যোগ করলেন যাদের চাষ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়লে মানুষ উপকৃত হবে। জাতগুলোর আকর্ষনীয় বৈশিষ্ট্যের জন্য এরা বানিজ্যিক উৎপাদন কিংবা ছাদ বাগান, উভয়ক্ষত্রেই সমান জনপ্রিয়তা পাবে। দেশী আবহাওয়া উপযোগী করে উদ্ভাবিত উচ্চফলনশীল এ জাতগুলো দেশের কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারলে কৃষকরা চেরি টমেটো চাষ করে বেশী লাভবান হবেন বলে মনে করি।