দেশজুড়ে মাদকবিরোধী অভিযান শুরু হলে ২০১৮ সালের মে মাস থেকে ২০২০ সালের ৩১ জুলাই মেজর (অব.) সিনহা হত্যাকাণ্ড পর্যন্ত কক্সবাজারের টেকনাফে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধ’ বা ‘ক্রসফায়ারে’ ১৬১ জন নিহত হয়। পরবর্তী সময়ে তাদের মাদক কারবারি হিসেবে দাবি করা হয়।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে ওই স্বজনরা সব ক্রসফায়ার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেন। তাদের কয়েকজন এবং টেকনাফের সূত্রগুলো জানায়, ওসি প্রদীপ ও বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকতের নেতৃত্বে মেরিন ড্রাইভ ‘ক্রসফায়ার জোন’ হয়ে উঠেছিল। তবে এতে থামেনি ইয়াবার কারবার।
স্থানীয় ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, আআত্মসমর্পণের নামে শীর্ষ কারবারিদের রেহাইয়ের সুযোগ দিয়ে এবং চুনোপুঁটিদের দিয়ে ‘ক্রসফায়ার বাণিজ্য’ করেন দুই পুলিশ কর্মকর্তা। বিশেষ অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে টেকনাফে এসে ‘আস্থাভাজন ওসি’ বলে নিজেকে পরিচয় দিয়ে প্রভাব বিস্তার করতেন প্রদীপ। গোপালগঞ্জে বাড়ি এবং ছাত্রলীগ করতেন বলে পরিচয় দিতেন লিয়াকত। এসব কারণে সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা, পুলিশও তাদের বিরুদ্ধে কথা বলেনি।
গতকাল সিনহা হত্যা মামলার রায়ের আগে আদালত প্রাঙ্গণে হাজির হয়ে ওসি প্রদীপের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করে টেকনাফের তেমনই কিছু বাসিন্দা। এদের মধ্যে কয়েকজন তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়েছে দাবি করে তা প্রত্যাহার চেয়েছে। একই সঙ্গে প্রদীপের সহযোগী দালালদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানায় তারা।
হালিমা খাতুন নামে এক নারী বিলাপ করে বলেন, তার ছেলেকে ‘ক্রসফায়ারের নামে হত্যা’ করেছেন প্রদীপ। তার রায় শুনতে ছুটে এসেছেন তিনি। হালিমার দাবি, ২০১৯ সালে তার ছেলে আজিজ রিকশা চালাতে গিয়ে ওসি প্রদীপের হাতে আটক হন। পরে ২০ লাখ টাকা দাবি করা হয়। ছেলেকে প্রদীপের হাত থেকে বাঁচাতে শেষ সম্বল বাড়ির ভিটাও বিক্রি করে দেন হালিমা। তার পরও ছেলেকে জীবিত উদ্ধার করতে পারেননি।
পুলিশ ও মানবাধিকার সংস্থার তথ্যমতে, ২০১৮ সালের মে মাস থেকে ২০২০ সালের ৩০ জুলাই পর্যন্ত শুধু কক্সবাজারে পুলিশ, বিজিবি ও র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ২৮৭ জন নিহত হয়।
এ সময় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় ১৭৪ জন, বিজিবির সঙ্গে ৬২ জন এবং র্যাবের সঙ্গে ৫১ জন। শুধু টেকনাফেই পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে ১৬১ জন। কিন্তু ইয়াবা চোরাচালান থেমে নেই।