আল-মামুন,খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি:: একজন জনপ্রতিনিধির ক্ষমতার মেয়াদ শেষ হলেও চেয়ার আঁকড়ে থাকার প্রবণতা এদেশে দৃশ্যমান। চেয়ারের ক্ষমতা শেষ হলেও অহরহ প্রমাণ মেলে তা উদ্ধারে তোঁড়জোর। কিন্তু সীমানা জটিলতাসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলে অনুসারীদের দিয়ে মামলা করিয়ে চেয়ার আঁকড়ে ধরার হাজারো উদাহরণের মাঝেই দায়িত্ব শেষ হওয়ায় দায়িত্বভার হস্থান্তর করে ভারমুক্ত হওয়ার জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিবের কাছে চিঠি লিখে বিরল দৃষ্টান্ত দেখালেন খাগড়াছড়ি জেলার এক জনপ্রতিনিধি।
রামগড় পৌরসভা’র ২বারের নির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ শাহ জাহান (রিপন) গত ১৬ নভেম্বর মঙ্গলবার ক্ষমতা ছাড়তে চেয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিবের কাছে চিঠি লিখে এ অনন্য নজির দেখিছেন। মেয়র মোহাম্মদ শাহজাহান (রিপন) কর্তৃক স্থানীয় সরকার বিভাগে পাঠানো চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, “গত ২০১১ সালের ২৩শে মে তারিখ অনুষ্ঠিত রামগড় পৌরসভা নির্বাচনে (৩য় পৌর পারিষদ) তিনি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বঙ্গবন্ধু কণ্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থার নৌকা প্রতিক নিয়ে প্রথমবারের মতো পৌরবাসীর প্রত্যক্ষ ভোটে রামগড় পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন।
এরপর গত ২০১৬ সালের ২৫শে মে তারিখ অনুষ্ঠিত পৌর নির্বাচনে (৪র্থ পৌর পরিষদ) স্বতন্ত্র প্রার্থী মোবাইল প্রতিকে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে পৌরবাসীর প্রত্যক্ষ ভোটে ২য় বারের মতো তিনি রামগড় পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন এবং মেয়র পদে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
এতে তিনি উল্লেখ করেন, অতি সম্প্রতি অনুষ্ঠিত (গত ২রা নভেম্বর) রামগড় পৌরসভা নির্বাচনে (৫ম পৌর পরিষদ) তিনি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মনোনয়ন বোর্ডের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান এবং নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। এর আগে চলতি বছরের ১১ আগষ্ট তারিখে ৪র্থ পৌর পরিষদের মেয়াদ শেষ হলেও উক্ত পরিষদকে বিলুপ্ত করা হয়নি। যার ফলে দায়িত্ব শেষ হবার পরেও তাকে উক্ত দায়িত্ব থেকে ভারমুক্ত করা হয়নি।
এছাড়া, গত ২রা নভেম্বর অনুষ্ঠিত ৫ম পৌরসভা নির্বাচনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বীতায় মেয়র ও জনগনের প্রত্যক্ষ ভোটে ৯টি ওয়ার্ডে ৯জন পৌর কাউন্সিলরসহ ৩টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৩জন নারী কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচনের পর গত ৮ নভেম্বর খাগড়াছড়ি যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের নির্বাচন ট্রাইবুনালে নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা রিটার্নিং অফিসার মোহাম্মদ সাইদুর রহমানসহ ১৬ জনকে অভিযুক্ত করে, ইভিএমে কারচুপির অভিযোগ তুলে ফলাফল বাতিল ও গেজেট স্থগিত চেয়ে সাত বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী মামলা দায়ের করেছেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার,নির্বাচন কমিশন সচিব ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিবকেও মামলায় মোকাবেলা বিবাদী করা হয়েছে। উক্ত মামলার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি আশঙ্কা করছেন, ইতিপূর্বে মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়া পৌর পরিষদের দায়িত্ব হস্থান্তরের সময় বিলম্বিত হতে পারে। এছাড়া,শারীরিক ভাবে অসুস্থতা বোধ করায় উক্ত উত্তীর্ণ হওয়া পৌর পরিষদের দায়িত্ব পালনে তিনি বর্তমানে অপারগতা প্রকাশ করেন,উক্ত অবস্থায় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তার দ্বারা পৌরসভার বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে ভুল-ভ্রান্তি হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।
তাই, পৌরসভা আইন অনুযায়ী দ্রুত সময়ের মধ্যে নব নির্বাচিত পৌর পরিষদের কাছে দায়িত্ব হস্থান্তর কিংবা প্রশাসক নিয়োগ করে তাকে উক্ত দায়িত্ব থেকে ভারমুক্ত করার জন্য তিনি চিঠির মাধ্যমে স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিবের কাছে বিনীত অনুরোধ জানিয়েছেন।
এদিকে,স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিবের কাছে প্রেরণের পাশাপাশি খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগের খাগড়াছড়ির উপ-পরিচালক ও রামগড় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছেও চিঠিটির অনুলিপি প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানা যায়।
এ বিষয়ে মেয়র মোহাম্মদ শাহজাহান জানান, যেহেতু সম্প্রতি পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং সেখানে নতুন পৌর মেয়রসহ পরিষদ নির্বাচিত হয়েছে সেহেতু সুষ্ঠভাবে দ্রুত সময়ের মধ্যে দায়িত্ব হস্থান্তর করে আমি ভারমুক্ত হতে চাই এবং নির্বাচিত পরিষদ থাকার পরেও দায়িত্ব নিয়ে বসে থাকা পৌরসভার আইনের লঙ্গন। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে আমি দায়িত্ব হস্থান্তরের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব মহোদয়ের নিকট চিঠি দিয়েছি।
রামগড় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) উম্মে হাবিবা মজুমদার জানান, তিনি চিঠিটির একটি অনুলিপি পেয়েছেন। এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয় থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে সেটিই বাস্তবায়ন করা হবে বলেও তিনি জানান।
রামগড় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বিশ্ব প্রদীপ বলছেন,বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এমন দৃষ্টান্ত বিরল। যেখানে দায়িত্ব শেষ হবার পরেও কেউ ক্ষমতা হস্থান্তর করতে চান না, সেখানে এ বিষয়টি বর্তমান প্রেক্ষাপটে জনপ্রতিনিধিদের কাছে একটি অনন্য নজির হয়ে থাকবে।
সুশীল সমাজ বলছেন, এদেশে ক্ষমতা আকড়ে ধরার সংস্কৃতির মাঝে এমন উদ্যোগ একটি অনন্য নজির হয়ে থাকবে, চেয়ারের ক্ষমতার হানাহানি আর বিদ্বেষ কমে আসবে শতভাগ।
আল-মামুন,খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি