ক্ষমতা হারানোর ভয়ে প্রধানমন্ত্রী খেই হারিয়ে ফেলেছেন : রিজভী

আপডেট: মে ১৮, ২০২৩
0

ক্ষমতা হারানোর ভয়ে প্রধানমন্ত্রী খেই হারিয়ে ফেলেছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নয়াপল্টন দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

রিজভী বলেন, গত ১৫ বছর ধরে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে থাকা নিশিরাতের সরকারের এখন ত্রিশঙ্কু অবস্থা। প্রশাসন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রে ২০১৪ সালে ভোটারবিহীন নির্বাচন এবং ২০১৮ সালের নিশিরাতে ভোট ডাকাতির নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলে রাখতে পারলেও এবার আর সম্ভব হচ্ছে না। এটা আওয়ামী লীগ প্রধান ও দলের সাধারণ সম্পাদক নিজেরাই স্বীকার করে নিয়েছেন। সারাদেশে জনগণের দূর্বার আন্দোলন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আহবানের কারণে সরকার প্রধান কোনো উপায় না দেখে এখন আবোল-তাবোল বলতে শুরু করেছেন। কোনো ফন্দি-ফিকির, কূট কৌশলে আর কাজ হচ্ছে না।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনা পৃথিবীর পূর্ব-পশ্চিম সফর করে এসে রীতিমতো প্রলাপ বকছেন। তাতে মনে হয়, গণতান্ত্রিক বিশ্বের কাছ থেকে তার দুঃশাসনের পক্ষে স্বীকৃতি পাননি।

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, শেখ হাসিনা নিজেই বলছেন। দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র হচ্ছে, কোনো একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র তাকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না বলে তিনি বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ‘আমি বলে দিয়েছি, যে দেশ স্যাংশন দেবে তাদের কাছ থেকে আমি কিচ্ছু কিনব না।’ প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর দেশে রফতানি খাতের কী অবস্থা হবে তা সহজেই অনুমেয়। তিনি সবকিছু ধ্বংস করে ক্ষমতায় থাকতে চান। তার এই সমস্ত বক্তব্য পতনের সাইরেন। যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রতিটি গণতন্ত্রকামী দেশ আমাদের দেশে অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন চেয়েছে। ওই নির্বাচনে যে দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে সে দল সরকার গঠন করবে।

তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা শুনলেই প্রধানমন্ত্রীর গলা শুকিয়ে যায়। আতঙ্কে ঘুম হারাম হয়ে যায়। কারণ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এখন তার সবচেয়ে বড় শত্রু। এ কারণে নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে শেখ হাসিনা এবং তার মন্ত্রীদের কথাবার্তা অসংলগ্ন ও বেসামাল। তবে এখন সরকারের দিবাস্বপ্ন দেখে লাভ হবে না। তাদের সামনে পরিত্রাণের সোজাসাপ্টা একটাই পথ এবং তা হলো পদত্যাগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর।

তিনি আরো বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের উর্ধ্বগতি আর অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণে দেশের অনেক মানুষ বর্তমানে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাতে বাধ্য হচ্ছে। ডলারের অভাবে অনেক ব্যবসায়ী এলসি খুলতে পারছেন না। ডলারের অভাবে আমদানি রফতানিতে সঙ্কটের সৃষ্টি হয়েছে। ডলার সঙ্কটে অনেক শিক্ষার্থীর বিদেশ পড়তে যাওয়াও বিঘ্নিত হচ্ছে। এমনকি হজ গমনেচ্ছুদেরকেও ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে। অথচ এমন পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনা বিশাল লাটবহর নিয়ে অকারণে কয়েকটি দেশ সফর করে এসেছেন।

রিজভী বলেন, বর্তমান সঙ্কটের কারণ রাষ্ট্রীয় অর্থনীতির বেপরোয়া লুটপাট, মহাদুর্নীতির মহাধুমধাম এবং ক্ষমতাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অর্থপাচার। এই সমস্ত লুটসহ নানা অনাচারের জন্য যারা দায়ী তাদের বিষয়ে মন্ত্রীদের মুখ থেকেই কথা বেরিয়ে আসছে। ওবায়দুল কাদের সাহেব যতই ধমক দিয়ে মুখ বন্ধ করার চেষ্টা করুন না কেন, আপনাদের অপকর্ম আপনারা শত চেষ্টা করলেও ঢাকতে পারবেন না। কারণ আপনার লোকরাই সেগুলো ফাঁস করছে।

বিএনপির এই বর্ষীয়ান নেতা বলেন, আমরা মনে করি, ক্ষমতা হারানোর ভয়ে শেখ হাসিনা খেই হারিয়ে ফেলেছেন। তাই শেখ হাসিনার কাছে গণতন্ত্র, মানুষের ভোটের অধিকার আর নিরাপদ নয়। দেশের স্বার্থও নিরাপদ নয়। তাই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমান ইতোমধ্যেই ‘টেইক ব্যাক বাংলাদেশ’ আন্দোলনের ডাক দিয়ে বলেছেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য আর এবারের যুদ্ধ দেশ এবং জনগণের স্বাধীনতার রাখার জন্য।

তিনি বলেন, সরকারের পতনের পতনের দিন গননা যে শুরু হয়েছে তার আরেকটি প্রমাণ হলো, এই সরকারের মন্ত্রী এমপিরাও এখন সত্য কথা ফাঁস করতে শুরু করেছে। সরকারের লুটপাট সিন্ডিকেট, গুম, খুন, দুর্নীতি দুঃশাসনের কথা জনসম্মুখে ফাঁস করে মাফ চাচ্ছেন কোনো কোনো মন্ত্রী।

‘শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার বৃহস্পতিবার বলেছেন, নিত্যপণ্যের দামের কারণে বাজারে গিয়ে অনেককে কাঁদতে দেখেছেন তিনি। কারণ মানুষের পকেটে টাকা নেই। সিন্ডিকেটের কারণে সবকিছুরই দাম বেড়েছে। এই মন্ত্রী মাফিয়া সরকারের সিন্ডিকেটের নাম বলতেও ভয় পান।’

তিনি বলেছেন, মন্ত্রীদের ভেতর একটা সিন্ডিকেট আছে। খামাখা নামটাম জিজ্ঞাসা করে আমাকে ভেজালে ফেলবেন না। সব কথা বলতে গেলে দেখবেন আমার লাশটা রাস্তায় পড়ে আছে।

পণ্যমূল্য সামাল দেয়া সম্পর্কে এই নেতা বললেন, এটা বাণিজ্যমন্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করুন। তার নিজেরই তো ব্যবসা আছে। খাদ্যমন্ত্রী নিজেই চাল মিলের মালিক, আড়তের মালিক। স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল করা উচিত। যাদের গোডাউনে হাজার হাজার বস্তা চাল, চিনি পাওয়া যায় তাদের ধরবে। তাদের ছাড় দেবে না। শেয়ার কেলেঙ্কারিতে কারা ছিল? তাদের অনেকেই এখন মন্ত্রী।

‘কাশিমপুর কারাগারে আমিসহ আওয়ামী লীগের কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা একসাথে ছিলাম। বললে তো এখন সমস্যা। এদের মধ্যে দু’জন ঘুমাতে যাওয়ার আগে নেত্রীকে এক গালি, ঘুম থেকে উঠে আরেক গালি দিতো। আজকে তারা কোথায়, আমরা কোথায়?’

তিনি বলেন, কামাল মজুমদারের এসকল সত্য উন্মোচন বিলম্বিত বোধোদয়! শেষ সময়ে হয়ত এসব কথা ফাঁস করছেন। তবে গত দেড় দশক ধরে এসব সত্য কথা বলার কারণে সরকার আমাদের ওপর অত্যাচার নিপীড়ন জেলজুলুম চালিয়ে আসছে। সামনে ক্রমেই সব সত্য সরকারের মুখ থেকেই বের হবে। তারা একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে অপকর্মের সাক্ষ্য দিবে। জনগণের কাঠগড়ায় তাদের বিচার হবেই।

এসময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আব্দুস সালাম, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, নির্বাহী কমিটির সদস্য তারিকুল ইসলাম তেনজিং প্রমুখ।