খাবার খেতে দেয়ার ছবিটা স্যোশাল মিডিয়ায় দেয়াটা একটা ছ্যাঁচড়ামি

আপডেট: জুলাই ৩১, ২০২৩
0

সুরাইয়া পারভিন

রিজিক আল্লাহর দান। আল্লাহপাক যার রিজিক যেখানে যেভাবে নির্ধারিত করে রেখেছেন। সে সেভাবেই তার রিজিক বরাদ্দ পাবে।
আয়েশি ভোজন, বিলাসী ভোজন, আত্মীয় পরিজনের আপ্যায়ন, নিজের ঘরের সাদামাটা কিছু, জেলখানায় খাবার, কি হাসপাতাল কতৃপক্ষের বরাদ্দ করা খাবার। সব আল্লাহর পক্ষ থেকে ফয়সালা।
কিছুদিন আগে আটলান্টিকের তলদেশে মৃত্যুর কথা জেনেছি। তারা ছিলেন সুস্থ সবল এডভেঞ্চারপ্রিয় মানুষ। গিয়েছিলেন টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে। মৃত্যু লেখা ছিল সমুদ্রের তলদেশে, তারা সেখানে ছুটে গিয়েছে।
বিভূতিভূষণের চাঁদের পাহাড় যারা পড়েছেন, তারা দেখেছেন এডভেঞ্চার প্রিয় মানুষের মৃত্যুর বোধ কেমন হয়। দুর্গম পাহাড় বা গহীন অরণ্য — শীতে কাঁপছে, প্রবল বৃষ্টিতে ভিজছে, ঝড়ে তাবু উড়ে যাচ্ছে। ক্ষুধা, তৃষ্ণায় ছটফট করছে।
কিন্তু ওপাড়েই আছে হীরার খনি। সেটার সন্ধান তার চাই।
সাধারনের ভাবনায় এগুলো স্রেফ লোভ। ব্যাটা মরে গেলে এইগুলো কে খাবে? একটা জীবনে কত টাকাই বা লাগে?
এডভেঞ্চার প্রিয় মানুষের পাহাড়ের ঐপাশ হচ্ছে নেশা।


সমুদ্রের তলদেশও তাই। নক্ষত্রখচিত আকাশে তার মুগ্ধতা নেই। সেখানে ছুটতে চায়। তার পরে কি হবে? কে জানতে চায়?
আপনার আমার কাছে এ মৃত্যুতে সহানুভূতি নেই। অনেকের কাছে হয়তোবা বিদ্রুপ আছে। আমাদের জীবনধারা দিয়ে তাদেরকে পরিমাপ করতে পারি না।
যারা রাজনীতি করছেন। নিজের অবস্থান থেকে দেশের জন্য কাজ করছেন। মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য লড়ছেন। নির্বিঘ্ন ঘর বাড়ি রেখে, পথে প্রান্তরে ছুটছেন। এর কি লাভ আছে, সে হিসেব আপনি আমি হয়তো মেলাতে পারবো না। এটাও হয়তো নেশা।মানুষের জন্য, নিজের জন্য কিছু করতে চাওয়ার নেশা। অথবা
দেশ মাতৃকার প্রতি ভিন্ন মাত্রার দায়িত্ববোধ।
একটা উপদেশবাণী কোট করে রেখেছিলাম। অ্যাগনেস স্মেডলি’র ডটার অব আর্থ বই থেকে। লেখিকা অ্যামেরিকান, তখনকার ভারতবর্ষের স্বাধীনতার স্বপক্ষে কাজ করছিলেন।
“তুমি যার জন্য কাজ করবে সেটা যদি যথেষ্ট মহান আর যথেষ্ট খাঁটি হয়,তাহলে সেটা সফল করার জন্য কাজ করাটাই হবে একটা প্রতিদান এমনকি যদি তা সফল নাও হয় তাহলেও, এমনকি তুমি যদি গরিব হও আর তেমনি গরিবই থেকে যাও, তাহলেও।”
আমরা পামর জনতা শুধু লাভের লাভ দেখি। নিরুপদ্রব জীবন উপভোগ করি। স্মেডলির ত্বত্ত্ব আমাদের মগজে ধরতে চাইবে না।
তবে রিজিকের যে বিষয়। সেটা আমরা অতি সাধারনেরাও বুঝি। রিজিক আল্লাহ প্রদত্ত। জেলখানার রাজবন্দী কি ছিঁচকে চোর — ‘খাবার’ সবার জন্যই বরাদ্দ। ব্যবস্থাপনা সেইখানকার কর্তব্যরত ব্যক্তিরা করেন।
মানুষ শুধু না। পৃথিবীর তাবৎ জীব নিয়ম মাফিক খেয়ে থাকে। সমাবেশ, কি অবস্থান কর্মসূচি — সেখানে মারমুখি আচরন করে আহত অবস্থায় টেনে হিঁচড়ে বন্দী করে নিয়ে গেলেন। অথবা অসুস্থ হয়ে পরায়, দায়িত্ববান হিসেবে সেই যায়গা থেকে নিয়ে আসলেন।
খাবারের সময় খেতে দেয়া। ক্ষুধার সময়ে খাবার খাওয়া। এটা তো খুব স্বাভাবিক কিছু। তাবৎ জীব কে খোদাতায়ালা ক্ষুধা তৃষ্ণা দিয়ে পাঠিয়েছেন।খাবারের ছবি ফেসবুকে প্রচার করার কি আছে?
ওনারা তো হাঙ্গার স্ট্রাইক করেন নি। পত্র পত্রিকায় এমন কিছু তো দেখি নি। ওনারা খাচ্ছেন, বা খেতে দেয়া হয়েছে। এই ছবি জাতিকে দেখানোর কি আছে?
ঘরের কি বাইরের। স্রেফ প্রদর্শনীর জন্য।খাবারের ছবি আপলোড করা নিয়ে নানা জনে নানা কথা বলে। বেশিরভাগ জনের মতে, ইহা পুরাই ছ্যাঁচড়ামি।
ছবি কয়টা কারো ভিডিও থেকে নেয়া। ভাল লাগলো, এখানে দিয়ে দিলাম।

লেখকের ফেসবুক থেকে নেয়া