গরিবের বন্ধু’ ইরানের নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট রাইসির সামনে যত চ্যালেঞ্জ

আপডেট: জুন ২০, ২০২১
0

কালো পাগড়ি ও ধর্মগুরুর পোশাক পরিহিত কট্টরপন্থি ইব্রাহিম রাইসি নিজেকে একজন কঠোর ও ধার্মিক ব্যক্তিত্ব এবং দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে ‘দরিদ্রের বন্ধু’ হিসেবে তুলে ধরেন। শনিবার ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফলে তাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। দেশটির প্রধান বিচারপতি রাইসি আগস্টে মধ্যপন্থি প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির কাছ থেকে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।

দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির ঘনিষ্ঠ রাইসি বিচার বিভাগের প্রধান হিসেবে নন, বরং দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের জন্য প্রসিদ্ধ। মূলত তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই, দরিদ্রদের জন্য গৃহায়ন ও জনগণের পক্ষে শক্তিশালী সরকার গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, রাইসির মতো কট্টরপন্থি প্রেসিডেন্ট হওয়ায় এখন দেশে রুহানিদের মতো বাস্তববাদী নেতাদের অবস্থান দুর্বল হবে। ক্ষমতা নেওয়ার পর তিনি দুর্দশাগ্রস্ত অর্থনীতির পরিবর্তন, পারমাণবিক প্রকল্প, চুক্তি, আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা, আঞ্চলিক দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নসহ বহুবিধ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বেন।

ইরানের সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে, খামেনির মিত্র ও শিয়া ধর্মীয় নেতা রাইসিকে সর্বোচ্চ নেতার সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে প্রস্তুত করা হয়েছে। দেশটিতে তার পদবি হচ্ছে ‘হোজাতোলেসলাম’ বা ইসলামের প্রমাণ। শিয়া আলেমদের পদমর্যাদায় তার অবস্থান ঠিক শীর্ষ নেতা খামেনির নিচে। তিনি বর্তমানে দেশটির বিচার বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ নির্বাচনে তাকে খামেনি ও কট্টরপন্থিরা সমর্থন দিয়েছেন।

রাইসি ২০১৭ সালের নির্বাচনে প্রার্থী হলেও রুহানির কাছে হেরে যান। তবে ভোট পেয়েছিলেন ৩৮ শতাংশ।

নির্বাচনী প্রচারে তিনি ভোটারদের সামনে নিজেকে ‘দুর্নীতি, অদক্ষতা ও অভিজাতদের’ ঘোরবিরোধী হিসেবে তুলে ধরেছিলেন। তিনি এতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রাখা, নিম্ন আয়ের ৪০ লাখ পরিবারকে নতুন ঘর নির্মাণ এবং জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেন। কট্টরপন্থিদের আশা, তার মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির পুনরুত্থান হবে।

রাইসি ইরানের একমাত্র প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন, যিনি ক্ষমতায় বসার আগেই যুক্তরাষ্ট্রের কালো তালিকাভুক্ত হয়েছেন। ২০১৯ সালে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে রাইসিসহ বেশ কিছু ইরানি কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় ওয়াশিংটন। তিনি ১৯৮৯ সাল থেকে দেশটির বিচার বিভাগের বিভিন্ন শীর্ষ পদে রয়েছেন। এ সময় রাজবন্দি, ভিন্নমতাবলম্বীদের ‘মাত্রাতিরিক্ত’ হারে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সবশেষ ২০১৯ সালে প্রধান বিচারপতি হন তিনি।

২০১৭ সালের নির্বাচনের পর থেকে বেশ কিছু ঘটনা দেশটির রাজনীতিকেই পাল্টে দিয়েছে। এ ছাড়া এবারের নির্বাচনে দেশটির সংস্কারপন্থিদের বাদ দিয়ে কট্টরপন্থিদের মনোনয়ন দিয়েছে প্রভাবশালী গার্ডিয়ান কাউন্সিল।

মধ্যপন্থিদের সুযোগ দেওয়া হলেও তাদের ব্যাপারে বিশ্লেষকরা বলছেন, মূলত রাইসিকে সমর্থন দেওয়ার জন্য তাদের দাঁড় করানো হয়েছে। যার ইঙ্গিত মেলে নির্বাচনের ফল ঘোষণার আগেই রাইসিকে বিজয়ী মেনে নিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন তিন প্রার্থী মহসেন রেজাই, আমির হোসেন ঘাজিজাদ্দেহ হাসেমি ও আবদুল নাসের হেমাতি। এর প্রভাব পড়েছে নির্বাচনে। এবারের ভোটদানের হার নিকট অতীতের নির্বাচনগুলোর তুলনায় খুব কম।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এ থেকে বোঝা যায়, নেতৃত্বের কার্যক্রমে জনঅসন্তোষের মাত্রা কত বেশি। সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদের মতো জনপ্রিয় নেতারাও এবারের নির্বাচন বয়কট করেছেন।

এ জন্য পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এখন রাইসির সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বিভক্তিকে যুক্ত করা এবং অর্থনীতিকে সমুন্নত করা। বিপ্লবের পর থেকে এবারই সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করছে দেশটি। মুদ্রাস্ফীতি ৫০ শতাংশে পৌঁছেছে।

এদিকে, ২০১৫ সালে রুহানির নেতৃত্বাধীন ইরানের সঙ্গে ছয় জাতির করা পরমাণু চুক্তি নিয়ে ফের আলোচনা শুরু হয়েছে। জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর তেহরানের সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনা শুরু হয়। তবে এ বিষয়ে দেশটির কট্টরপন্থিদের কোনো আগ্রহ নেই। এদিকে আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী সৌদি আরবের সঙ্গে আলোচনা ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধাচরণ কমিয়ে কৌশলগত সম্পর্ক রক্ষার ব্যাপারে ইরানের মধ্যপন্থি ও সংস্কারপন্থিদের আগ্রহ থাকলেও রাইসির মতো কট্টরপন্থিরা এর বিরুদ্ধে। এখন দেখার বিষয়, এসব চ্যালেঞ্জ কীভাবে মোকাবিলা করে রাইসি নেতৃত্বাধীন ইরান। সূত্র: বিবিসি, আলজাজিরা, রয়টার্স ও এএফপির।