গাজায় আজানের বদলে নীরবতা

আপডেট: জানুয়ারি ১৪, ২০২৪
0

গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় চলমান বোমাবর্ষণে ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক তাৎপর্যের জন্য বিখ্যাত অনেকগুলো মসজিদ ধ্বংস করেছে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী। এছাড়া একই সময় বেশ কয়েকটি গির্জাও ক্ষতিগ্রস্ত হয় ইসরাইলি বাহিনীর হামলায়।

গাজা শহরের সবচেয়ে বড় এবং প্রাচীনতম গ্র্যান্ড ওমারি মসজিদ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এর শুধুমাত্র এক হাজার ৪০০ বছরের পুরনো মিনারটি অক্ষত রয়েছে। এ ঘটনার জন্য ডিসেম্বরের শুরুতে ইসরাইলি বাহিনীকে দায়ী করে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস।

মসজিদটি সপ্তম শতাব্দীতে বাইজেন্টাইন যুগের একটি গির্জার ধ্বংসাবশেষে প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি একটি প্রাচীন রোমান মন্দিরের ওপর নির্মিত হয়েছি।

ওই সময় ক্ষমতায় থাকা খলিফা উমর ইবন আল খাত্তাবের নামে মসজিদটির নামকরণ করা হয়। মসজিদটির ধ্বংস এবং পুনর্জন্মের ইতিহাস রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে একটি ক্রুসেডার ক্যাথেড্রালের প্রতিস্থাপিত, মঙ্গোলদের ভেঙ্গে ফেলা এবং ১৩ শতাব্দী ভূমিকম্পে ধ্বংস।

বাসিন্দারা বলছে, আইকনিক ল্যান্ডমার্কের ধ্বংস, ২০০টিরও বেশি মসজিদের ক্ষতি বা ধ্বংসের সাথে সাথে গাজার সমস্ত মসজিদের ২০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে এখন নামাজের সময় হাহাকার বিরাজ করছে। এর মধ্যে রয়েছে গাজা শহরের আহমেদ ইয়াসিন মসজিদ এবং আল-হাসাইনা মসজিদ, বেত লাহিয়ার সেলিম আবু মুসলিম মসজিদ এবং খান ইউনিসের খালিদ বিন আল-ওয়ালিদ মসজিদ।

খান ইউনিসের ২৫ বছর বয়সী বাসিন্দা খালেদ আবু জেম বলেন, ‘মসজিদসহ শহরের পূর্বাঞ্চল সম্পূর্ণ ধ্বংসের কারণে আমরা আমাদের আশপাশে আর নামাজের আজান শুনতে পাই না।’

তিনি আরো বলেন, ‘এখানকার বাসিন্দারা এখন তাদের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আজান অনুসরণ করে। আমাদের আগে যে অভিজ্ঞতা ছিল, এ যুদ্ধ তার থেকে ভিন্ন। আমাদের বিশ্বাসের প্রতীক মসজিদ নির্বিচারে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।’

খালেদ আবু জেম বলেন, ‘মসজিদের সুন্দর স্মৃতি আছে আমাদের। আমরা সেখানে প্রতিদিন নামাজ পড়তাম, রমজান ও ঈদের নামাজ পড়তাম, কোরআন পড়তাম।’

তিনটি ঐতিহাসিক গির্জাও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তার মধ্যে গাজা শহরের চার্চ অফ সেন্ট পোরফিরিয়াস এখনো ব্যবহৃত প্রাচীনতম গির্জা।

৪২৫ খ্রিস্টাব্দে প্রথম স্থাপিত হয় গ্রিক অর্থোডক্স গির্জাটির নামকরণ করা হয়েছিল সেন্ট পোরফিরিয়াসের নামে। ওই অঞ্চলে খ্রিস্টধর্মর বিকাশের কৃতিত্ব তার।

১২ শতাব্দীতে ক্রুসেডাররা এটিকে গির্জা হিসাবে পুনরুদ্ধার করার আগে এটি সপ্তম শতাব্দীতে একটি মসজিদে রূপান্তরিত হয়েছিল।

১৯ অক্টোবর ইসরাইলি বাহিনী গির্জার প্রাঙ্গণে বোমা হামলা চালালে গির্জাটি ক্ষতিগ্রস্ত। ওই সময় সমস্ত ধর্মের ৪০০ জন ফিলিস্তিনি সেখানে আশ্রয় নিয়েছিল। হামলায় কমপক্ষে ১৮ জন নিহত হয়েছিল।

উপকূলীয় শহর আল-নুসিরাতের টেল উম আমের প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানে সেন্ট হিলারিয়নের মঠও ইসরাইলি হামলায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

ইউনেস্কোতে ফিলিস্তিনি প্রতিনিধিদের মতে, মঠটি এক হাজার ৬০০ বছরেরও বেশি আগে সেন্ট হিলারিয়ন নির্মান করেছিলেন। তাকে ফিলিস্তিনে সন্ন্যাস জীবনের প্রতিষ্ঠাতা বলে মনে করা হয়।
সূত্র : আল জাজিরা, মিডল ইস্ট মনিটর এবং অন্যান্য