গাজা-ইসরাইল যুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের হুশিয়ারি অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের

আপডেট: জুন ১৪, ২০২৩
0
file photo

ইসরাইলে বাহিনী আর গাজা ভূখণ্ডে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে গত মাস থেকে যে লড়াই চলছে, সেখানে সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধ হয়ে থাকতে পারে বলে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে।

সংস্থাটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরাইল বাহিনীর দৃশ্যত বেপরোয়া বিমান হামলায় অনেক বেসামরিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।

সেখানে আরো বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদের (পিআইজ) নির্বিচার রকেট হামলায় ইসরাইল ও ফিলিস্তিনি- উভয়ের বেসামরিক মানুষজন নিহত হয়েছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে এসব বিষয় তদন্ত করে দেখার আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

ইসরাইল প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বলেছে, তারা আন্তর্জাতিক আইন মেনেই অভিযান চালিয়েছে। একই সাথে বেসামরিক নাগরিকদের ন্যূনতম ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে লক্ষ্য রাখা হয়েছে।

অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনকে স্বাগত জানিয়েছেন পিআইজের এক মুখপাত্র।

মে মাসের নয় তারিখ থেকে পাঁচ দিন ধরে চলা সর্বশেষ ওই সহিংসতায় ৩৪ জন ফিলিস্তিনি আর একজন ইসরাইলি নিহত হয়েছে। পরে মিশরের মধ্যস্থতায় একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে।

রাতভর ইসরাইলি যুদ্ধবিমানের হামলা দিয়ে ওই যুদ্ধের শুরু হয়েছিল।

বাড়িঘরের ওপর চালানো ওই সব হামলায় পিআইজের সামরিক শাখার তিনজন সিনিয়র কমান্ডার এবং আরো ১০ জন নিহত হয়, যারা তাদের আত্মীয় ও প্রতিবেশী ছিলেন।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম ওই বোমাগুলো ঘনবসতি এলাকায় ঘুমন্ত পরিবারগুলোর ওপর ফেলার মানে হচ্ছে, যারা এসব হামলার পরিকল্পনা করেছে এবং অনুমোদন দিয়েছে, তারা বেসামরিক মানুষজনের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখেনি।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, ‘ইচ্ছাকৃতভাবে নির্বিচার আক্রমণ শুরু করা, এটি একটি যুদ্ধাপরাধ।’

আইডিএফের দাবি, ওই ঘটনার পরে যুদ্ধ শুরু হলে তাদের বিমানগুলো পিআইজের চার শতাধিক সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করেছিল এবং তাদের সামরিক শাখার আরো তিনজন সিনিয়র কমান্ডারকে হত্যা করেছিল।

তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা আগের সপ্তাহে ইসরাইলে কয়েক ডজন রকেট এবং মর্টার হামলার জন্য দায়ী ছিল।

নিজ বাড়িতে পিআইজের তিন সিনিয়র কমান্ডারের নিহত হওয়াসহ এমন নয়টি হামলার তদন্ত করে দেখেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

আইডিএফ দাবি করেছে, গোয়েন্দা তথ্য বাস্তবসম্মত উপায়ে যাচাই-বাছাইয়ের পরে তারা হামলাগুলো চালিয়েছে, যাতে সেখানকার বেসামরিক মানুষজনের জানমালের সবচেয়ে কম ক্ষয়ক্ষতি হয়।

কিন্তু অ্যামনেস্টি বলেছে, ইসরাইলি হামলায় গাজায় ব্যাপকভাবে বাড়িঘর ধ্বংসের যে ধারা তারা দেখতে পেয়েছে, তাতে ইসরাইলি হামলার পক্ষে কোনো যুক্তিই গ্রহণযোগ্য হয় না।

বিশেষ করে ১৩ মে জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরের একটি চারতলা বাড়ি লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছিল, যেখানে ৪২ জন বাসিন্দা ছিল। কিন্তু ওই ভবনে অস্ত্র বা অন্য কোনো সামরিক সরঞ্জাম মজুদ করে রাখার প্রমাণ পায়নি অ্যামনেস্টি। এমনকি এর আশপাশের এলাকা থেকে কোনো রকেটও ছোড়া হয়নি।

অ্যামনেস্টি বলছে, সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় হলো, এর জন্য দায়ীদের যদি জবাবদিহিতার আওতায় না আনা হয়, তাহলে এ ধরনের ঘটনা আবারো ঘটতে পারে।

ইসরাইলি হামলার জবাবে এক হাজার চার শ’-এর বেশির রকেট হামলা করে পাল্টা জবাব দিয়েছে ফিলিস্তিনিরা। যার ফলে হাজার হাজার ইসরাইলি ‘বম্ব-শেল্টারে’ আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিল।

আইডিএফের দাবি, ইসরাইলি সীমানার ভেতরে এক হাজার ১৩৯টি রকেট প্রবেশ করেছিল। জনবহুল এলাকায় ছোঁড়া ৪৩০টি রকেট তাদের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ঠেকিয়ে দিয়েছে।

রেনোভটের একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে রকেট হামলায় এক ইসরাইলি নারী এবং শোকেদায় একটি ভবনে একজন ফিলিস্তিনি শ্রমিক নিহত হয়।

এমন একটি রকেট গাজায় পড়ে দুই শিশুসহ তিনজন নিহত হয়েছে।

প্রথমে ওই এলাকায় রকেট পড়ে হতাহতের ঘটনা অস্বীকার করেছিল পিআইজে এবং তারা ইসরাইলি হামলাকে দায়ী করেছিল।

কিন্তু পরে প্রত্যক্ষদর্শীরা অ্যামনেস্টিকে জানিয়েছে, পিআইজের কর্মীরা ঘটনার পরপরই রকেটের পড়ে থাকা অংশগুলো সরিয়ে নিয়ে যায়।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, ‘ভুল লক্ষ্যবস্তুতে হামলার জন্য পরিচিত ফিলিস্তিনিদের নির্বিচার রকেট হামলাকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে তদন্ত করা উচিত এবং ক্ষতিগ্রস্তদের দ্রুত ও পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেয়া উচিত।’

তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে মন্তব্য করেননি পিআইজের মুখপাত্র তারিক সালমি।

কিন্তু তিনি বলেছেন, ‘অ্যামনেস্টির রিপোর্ট প্রমাণ করছে যে ভয়ানক অপরাধ করার মাধ্যমে দখলদার (ইসরাইল) এই আগ্রাসন শুরু করেছে। শত্রুরাই প্রথমে ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা করতে অস্ত্র ব্যবহার শুরু করে। ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ইসরাইল যে অপরাধ করে যাচ্ছে, তা থেকে নিজেদের রক্ষা করতে আমার শুধু পাল্টা জবাব দিয়েছি।’
সূত্র : বিবিসি