গাজীপুরে চুরির সময় বাঁধা দেওয়ায় গলা কেটে স্কুল ছাত্র খুন, গ্রেফতার-২

আপডেট: জুন ৮, ২০২১
0


**ক্ললেস স্কুল ছাত্র খুনের প্রায় দুই বছর পর রহস্য উন্মোচন করেছে পিবিআই।

গাজীপুর সংবাদদাতাঃ গাজীপুরে বাসায় চুরির সময় বাঁধা দেওয়ায় মুখ চেপে গলা কেটে ও ছুরিকাঘাত করে ৫ম শ্রেণীর এক স্কুল ছাত্রকে খুন করেছে কয়েক দুর্বৃত্ত। এ ঘটনায় দুই যুবককে মঙ্গলবার গ্রেফতার করা হয়েছে। ক্লুলেস এ ঘটনার প্রায় দুই বছর পর রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। লবার বিকেলে গাজীপুর পিবিআই’র পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।

গ্রেফতারকৃতরা হলো- ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট থানার চরমোকামিয়া এলাকার কুদ্দুস আলীর ছেলে মোঃ আনোয়ার হোসেন (২৫) এবং জামালপুরের বকশীগঞ্জ থানার জাকিরপাড়া এলাকার ওসমান আলীর ছেলে মো. মোফাজ্জল (৩১)। তারা গাজীপুর মহানগরের টঙ্গী পূর্ব থানাধীন গাজীপুরা এলাকার পৃথক ভাড়া বাসায় থাকে।

পিবিআই এর পুলিশ সুপার জানান, গাজীপুর সিটি কপোর্রেশনের গাজীপুরা এলাকার চন্দ্রিমা হাউজিং প্রকল্পের জনৈক হাবিবুর রহমান এর ৫ম তলা বাড়ীর ৪র্থ তলার ভাড়াবাসায় স্বপরিবারে থেকে রাজধানীর বনানী এলাকার একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠাণে চাকুরি করেন মিজানুর রহমান ওরফে জাহাঙ্গীর। তার গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফল থানাধীন রায় তাঁতেরকাঠি এলাকায়। তার তিন ছেলে সন্তানের মধ্যে মেঝো ছেলে তৌসিফুল ইসলাম মুন্না (১৪) ঢাকার উত্তরা শাহিন ক্যাডেট স্কুলের ৫ম শ্রেণীর ছাত্র।

তিনি জানান, গত ২০১৯ সালের ১৮ জুলাই সকাল ৭টার দিকে মিজান কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হন। পরে মুন্নাকে বাসায় রেখে তার মা হামিদা আক্তার মুকুল ছোট সন্তান তামিমকে নিয়ে পার্শ্ববর্তী স্কুলে যান। এরপর সকাল সোয়া ১০টার দিকে হামিদা আক্তার বাসায় ফিরে ঘরের দরজা বাইরে থেকে আটকানো অবস্থায় দেখতে পান। তিনি প্রতিবেশীদের সহায়তায় ঘরের ভিতরে ঢুকে বেডরুমের খাটের উপর উপুর হয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা মুন্নার লাশ দেখতে পেয়ে ডাক চিৎকার করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নিহত মুন্নার লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। নিহতের গলা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কাটা এবং পেটে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন ছিল। এ ব্যাপারে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে ২৪ জুলাই টঙ্গী পূর্ব থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের বাবা।

মামলাটির প্রায় ২ মাস তদন্তকালে সন্দেহভাজন একজনকে আটক করলেও কোন রহস্য উদঘাটন করতে পারে নি থানা পুলিশ। পরবর্তীতে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স এর নির্দেশে চাঞ্চল্যকর ও ক্লুলেস এ ঘটনার মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় গাজীপুরের পিবিআইকে। পিবিআই’র তদন্ত কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর হাফিজুর রহমান তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে এ ঘটনায় জড়িত আনোয়ার ও মোফাজ্জলকে মঙ্গলবার ভোরে গ্রেফতার করেন। তাদেরকে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করার একপর্যায়ে সহযোগীদের সহায়তায় গ্রেফতারকৃতরা তৌসিফুল ইসলাম মুন্নাকে খুন করার কথা স্বীকার করে। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নিহতের বাসা থেকে লুণ্ঠিত মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা আদালতে স্বীকারোক্তি মুলক জবানবন্দি প্রদান করে। এরপ্রেক্ষিতে ঘটনার প্রায় দুই বছর পর চাঞ্চল্যকর ও ক্লুলেস স্কুল ছাত্র তৌসিফুল ইসলাম মুন্না হত্যার রহস্য উন্মোচন হয়েছে।

তিনি আরো জানান, বাসায় ভিকটিম এর বাবা ও মায়ের অনুপস্থিতির সুযোগে ওই দুই যুবক সকাল ৯টার দিকে মুন্নাদের বাসায় যায়। তারা মুন্নাকে ডেকে দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করে এবং ঘর থেকে মোবাইল ও ক্যামেরা লুট করার চেষ্টা করে। এসময় বাঁধা দিলে মুন্নার মুখ চেপে ধরে গলা কেটে ও ছুরিকাঘাত করে তাকে খুন করে। পেটে ছুরিকাঘাত করায় মুন্নার নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে যায়। পরে বিভিন্ন মালামাল লুট করে তারা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। মূলত চুরি করার উদ্দেশ্যে প্রবেশ করলে আসামীদেরকে চিনে ফেলায় ভিকটিম তৌসিফুল ইসলাম মুন্নাকে হত্যা করে বলে স্বীকারোক্তিতে গ্রেফতারকৃতরা জানিয়েছে।