গাজীপুরে শিক্ষক দম্পতির মৃত্যুর জট খুলছে না, নমুনা যাচ্ছে যাচ্ছে ঢাকায়

আপডেট: আগস্ট ২০, ২০২২
0


নমূনা ও আলামত পরীক্ষার জন্য আদালতের অনুমতি, পাঠানো হচ্ছে ঢাকায়

গাজীপুর সংবাদদাতাঃ গাজীপুরে প্রাইভেটকারের ভিতর থেকে শিক্ষক দম্পতির লাশ উদ্ধারের ঘটনার রহস্য এখনো পর্যন্ত উদঘাটন করতে না পারায় তাদের মৃত্যুর জট খোলেনি। তবে ওই শিক্ষক দম্পতির মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হতে জব্দকৃত ও সংগৃহীত আলামত এবং তাদের ভিসেরাসহ নমূনা পরীক্ষার জন্য রবিবার ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে। এজন্য আবেদনের মাধ্যমে শনিবার গাজীপুরের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইকবাল হোসেনের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়া হয়েছে। এদিকে শিক্ষক দম্পতিকে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবীতে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করেছে।

জিএমপি’র গাছা জোনের সহকারী কমিশনার মাকসুদ উর রহমান জানান, শিক্ষক দম্পতির মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হতে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রতিটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখছে। প্রাইভেটকারের ভিতর থেকে শিক্ষক দম্পতির লাশ উদ্ধারের ঘটনার পর পুলিশ বিভিন্ন আলামত জব্দ করে। তাদের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন করতে ওইসব জব্দকৃত আলামত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পরীক্ষার অনুমতির জন্য শনিবার গাজীপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করা হয়। গাজীপুরের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন ওই আবেদন অনুমোদন করেন।

তিনি জানান, আদালতের অনুমতির প্রেক্ষিতে ওই শিক্ষক দম্পতির মৃত্যু খাদ্যে বিষক্রিয়া বা অন্য কোন্ কারণে হয়েছে তা নিশ্চিত হতে নিহতদের জব্দকৃত টিফিন ক্যারিয়ারের বাটিতে থাকা খাবারের উচ্ছ্বিষ্টাংশ, পানির বোতলে থাকা পানি, জর্দার কৌটা, ছেলের জন্য কেনা ফাস্টফুড খাবারের ইন্ট্যাক্ট প্যাকেটে থাকা পাস্তা’তে বিষ বা এ্যালকোহলের উপস্থিতি আছে কি-না তা পরীক্ষার জন্য নমূনা ঢাকাস্থ মহাখালীর প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষকের কার্যালয়ে এবং সিআইডি’র ফরেনসিক বিভাগের ল্যাবে পাঠানো হচ্ছে। এছাড়াও জব্দকৃত তাদের ব্যবহৃত প্রাইভেটকার পরীক্ষার জন্য ঢাকার বিআরটিএ’তে নেয়া হবে। সেখানে পরীক্ষা করে দেখা হবে ঘটনার সময় গাড়িতে কোন যান্ত্রিক ত্রুটি ছিল কি-না বা গ্যাস লিক হয়েছে কি-না, যে কারণে তাদের মৃত্যু হতে পারে।

তিনি আরো জানান, নিহতদের দেহ থেকে সংগৃহীত ভিসেরা সিআইডি’র ফরেনসিক বিভাগের ল্যাবে নিয়ে পরীক্ষা করা হবে। এ পরীক্ষা থেকে জানা যাবে তারা কি খেয়ে ছিলেন এবং খাবার বিষাক্ত কিছু রয়েছে কি-না, যা ওই দম্পতির মৃত্যুর কারণ হতে পারে। এছাড়াও ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নিহতদের দেহ থেকে সংগৃহীত বাক্কাল সোয়াব ঢাকায় চীফ ডিএনএ এনালিস্ট এর কাছে পাঠানো হবে।

জিএমপি’র গাছা থানার ওসি নন্দলাল চৌধুরী জানান, অনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শেষে এসব আলামত পরীক্ষার জন্য রবিবার ঢাকায় নেয়া হবে। সাপ্তাহিক ছুটির কারণে এসব আলামত শনিবার ঢাকায় পাঠানো হয় নি। এসব আলামত পরীক্ষার পর শিক্ষক দম্পতির মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে। তবে রিপোর্ট পেতে একটু সময় লাগবে। এ ঘটনায় সন্ধিগ্ধ কাউকে এখনো পাওয়া যায় নি। তিনি জানান, শিক্ষক দম্পতির মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে পুলিশের জোর তদন্ত চলছে। তদন্তের পাশাপাশি গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তাগণ পুরো বিষয়টি নজরদারী করছেন এবং ব্যবস্থা নিচ্ছেন।

এদিকে মামলার বাদী আতিকুর রহমান (নিহত শিক্ষক এ,কে,এম, জিয়াউর রহমান মামুনের মেঝো ভাই) জানান, শিক্ষক দম্পতির মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে পুলিশের তদন্ত কার্যক্রম চলছে। তারা প্রতিটি বিষয়কে খতিয়ে দেখছেন। মৃত্যুর একাধিক কারণের মধ্যে বিষক্রিয়ার বিষয়টিকে তারা বেশ গুরুত্ব দিচ্ছেন। তবে এখনো পর্যন্ত মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। তিনি জানান, এ দম্পতির মৃত্যুর শোক পরিবার এখনো কাটিয়ে উঠতে পারে নি। খুব শীঘ্রই তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে গাজীপুরে ও গ্রামের বাড়িতে দোয়ার আয়োজন করা হবে।

প্রসঙ্গতঃ গত বুধবার (১৭ আগস্ট) বিকেলে বিদ্যালয়ের কাজ শেষে ব্যক্তিগত প্রাইভেটকার যোগে গাজীপুর মহানগরীর কামারজুরী এলাকার বাসায় ফিরছিলেন টঙ্গীর শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এ,কে,এম, জিয়াউর রহমান মামুন (৫১) তার স্ত্রী আমজাদ আলী সরকার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মাহমুদা আক্তার জলি (৩৫)। পথে তারা নিখোঁজ হন। দীর্ঘ সময়ে বাসায় না ফেরায় স্বজনরা বিভিন্নস্থানে খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন। খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে পরদিন বৃহষ্পতিবার ভোরে বাড়ির কাছে গাছা থানাধীন বড়বাড়ির বগারটেক এলাকায় হারবাইদ-বড়বাড়ি সড়কের পাশে থেমে থাকা প্রাইভেটকার থেকে ওই দম্পতির লাশ উদ্ধার করা হয়। এসময় তাদের সঙ্গে থাকা মোবাইল, নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার অক্ষত অবস্থায় পাওয়া যায়। তবে লাশ উদ্ধারের সময় তাদের মুখ দিয়ে লালা ঝরছিল। এ ঘটনায় নিহত শিক্ষক জিয়াউর রহমানের মেঝো ভাই কামারজুরি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আতিকুর রহমান বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে গাছা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
######