গাজীপুর সিটি কপোর্রেশন নির্বাচনঃ প্রতীক পেয়েই আনুষ্ঠানিক প্রচারণায় নেমে পড়েছেন প্রার্থীরা

আপডেট: মে ৯, ২০২৩
0

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর : গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্ধ পেয়েই আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন প্রার্থীরা। মঙ্গলবার নগরীর বঙ্গতাজ অডিটোরিয়ামে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে সকল পদের প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়। নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্ধ দেন। প্রতীক বরাদ্ধ কার্যক্রম শুরুর আগে তিনি সকল প্রার্থীদের প্রতি নির্বাচনি আচরণ বিধি মেনে চলার অনুরোধ জানান।

গাজীপুর সিটি কপোর্রেশন নির্বাচনের মেয়র, সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ড ও সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীরা কাঙ্খিত প্রতীক বরাদ্ধ পেতে সকাল হতে তাদের কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ের সামনে এসে জড়ো হতে থাকেন। এক পর্যায়ে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্ধ দেওয়া শুরু করেন। প্রথমেই মেয়র পদের ৮ জন বৈধ প্রার্থীর মধ্যে প্রতীক বরাদ্ধ করেন তিনি। মেয়র পদে প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থীদের মধ্যে রাজনৈতিক দল সমর্থিত ৫ জন প্রার্থীকে তাদের নিজ নিজ দলীয় প্রতীক বরাদ্ধ দেওয়া হয়। তারা হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এড. আজমতউল্লা খান (নৌকা), জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী এমএম নিয়াজ উদ্দিন (লাঙ্গল), ইসলামী আন্দোলনের গাজী আতাউর রহমান (হাতপাখা), জাকের পার্টি মনোনীত প্রার্থী মো. অলিউর রহমান (গোলাপ ফুল) ও গণফ্রন্টের আতিকুল ইসলাম (মাছ)।

মেয়র পদে দলীয় প্রতীক ছাড়াও অপর ৩জন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীকে নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত প্রতীক থেকে তাদের পছন্দের প্রতীক বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র (সাময়িক বরখাস্ত) জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন (টেবিল ঘড়ি), আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলায় মৃত্যুদন্ড সাজাপ্রাপ্ত কারাবন্দী বিএনপি নেতা নুরুল ইসলাম সরকারের ছেলে সরকার শাহ নূর ইসলাম রনি (হাতি) এবং হারুন অর রশীদ (ঘোড়া) প্রতীক পেয়েছেন।

এরপর গাজীপুর সিটি কপোর্রেশনের ১৯টি সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদের ৭৮ জন ও সাধারণ কাউন্সিলর পদের ২৪৩ জনকে পর্যায়ক্রমে প্রতীক বরাদ্ধ দেওয়া হয়। সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদের প্রার্থীদের ক্ষেত্রেও নির্বাচন কমিশনের দেওয়া নির্ধারিত প্রতীক থেকে তাদের পছন্দের এবং একই প্রতীক একাধিক প্রার্থীর দাবি থাকলে ওই ক্ষেত্রে লটারির মাধ্যমে বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রার্থীরা তাদের বরাদ্ধ পাওয়া পছন্দের প্রতীকের চিঠি রিটার্নিং অফিসারের হাত থেকে নিয়ে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় ত্যাগ করেন। নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্ধ পেয়েই প্রার্থীরা মঙ্গলবার হতেই আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন। এবারের নির্বাচনে মোট ৩২৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করবেন।

দলীয় প্রতীক বরাদ্ধ পেয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আজমতউল্লা খান বলেন, জনগণের সেবার যে কাজগুলো রয়েছে সেগুলো সুনিশ্চিত করার জন্য আমি আপনাদের কাছে ভোট প্রার্থনা করছি। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের দলীয় নেতাকর্মীদের স্বতঃষ্ফ্থর্ত অংশ গ্রহণে একটি উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে আমি মিটিং করেছি। তাদের সঙ্গে উঠোন বৈঠক, মতবিনিময়ের মতো কাজগুলো সম্পন্ন করেছি। এতে আমাদের নেতাকর্মীদের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ত এক পার্সেন্টও কমতি ছিল না।

অপরদিকে প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে জাতীয় পাটি মনোনীত মেয়র প্রার্থী সাবেক স্বাস্থ্য সচিব এমএম নিয়াজ উদ্দিন বলেন, আগামী ২৫ মে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আমি আশা করি ওই নির্বাচনে আমরা (লাঙ্গল) জয়ী হব। আমি নির্বাচিত হতে পারলে গাজীপুর সিটি করপোরেশনকে একটি সুন্দর নগরী হিসেবে গড়ে তুলব।

সাবেক মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের মা স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী জায়েদা খাতুন রিটার্নিং অফিসারের হাত থেকে তার পছন্দের প্রতীক বরাদ্ধের (টেবিল ঘড়ি) চিঠি বুঝে নেন। পরে তিনি বিভিন্ন মিডিয়াকর্মীদের মুখোমুখি হন। এসময় তিনি বলেন, নগরবাসীর নিকট মেয়র পদে (টেবিল ঘড়ি) প্রতীকে নিজের জন্য একটি ভোট চাচ্ছি এবং সকলের সহযোগিতা কামনা করছি। তিনি নির্বাচন কমিশনের প্রতি একটি সুষ্ঠু ভোট উপহার দেওয়ার আহবান জানান।

জায়েদা খাতুন এসময় আরও বলেন, আমি নগরবাসীর কাছে দোয়া ও তাদের ভোট চাই। আপনারা (নগরবাসী) আমার পাশে থাকেন, আমি ছেলের সঙ্গে থেকে সব কাজ দেখছি, বুঝছি, আমি নগরীর রাস্তাঘাট উন্নয়নসহ অসমাপ্ত যেসব কাজ রয়েছে, তা সমাপ্ত করতে চাই।

এসময় মায়ের পাশে থাকা জাহাঙ্গীর আলম সাংবাদিকদের বলেন, এটি একটি আদর্শিক লড়াই। কারন একটি মিথ্যা দিয়ে একজন ভালো মানুষকে, একটা নগরীকে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে। আমি চাই সেই মিথ্যা উন্মোচন হোক, সত্যটা প্রতিষ্ঠিত হোক। সত্যকে প্রতিষ্ঠা করতেই এই লড়াই। তিনি আরও বলেন, শুধু নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ হলেই তো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না, সবাইকে নিরপেক্ষ হতে হবে। আমি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসনসহ সবাইকে আহ্বান করবো নির্বাচনকে সুষ্ঠু করতে আপনারা নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে নির্বাচনকে সুষ্ঠু করতে সহোযোগিতা করবেন।

জেলা নির্বাচন অফিসার ও গাসিক নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং অফিসার এএইচএম কামরুল হাসান জানান, আগামী ২৫ মে সকাল ৮টা হতে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ইভিএম এর মাধ্যমে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সর্বশেষ হালনাগাদকৃত ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন, মহিলা ভোটার ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন এবং হিজড়া ভোটার সংখ্যা ১৮ জন। নির্বাচনে ভোট গ্রহনের জন্য মোট ৪৮০ টি ভোট কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে মোট ভোট কক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭ টি, এরমধ্যে ৪৯১ টি অস্থায়ী ভোটকক্ষ থাকবে।

###
মোঃ রেজাউল বারী বাবুল
স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর।
০৯/০৫/২০২৩ ইং।