গুম-খুন, রাজনৈতিক নিপীড়ন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে জাতিসংঘ মানবাধিকার হাই কমিশনারের একই বক্তব্য –মীর্জা ফখরুল

আপডেট: আগস্ট ১৮, ২০২২
0

সফরকারী জাতিসংঘ মানবাধিকার হাই কমিশনার মিস মিশেল ব্যাচলেট এবং তাঁর টীম ১৪-১৮ আগস্ট ২০২২ তারিখ বাংলাদেশ সফরে এসে এখানকার মানবাধিকার পরিস্থিতি, বিশেষ করে গুম, নির্যাতন, বিচারবহির্ভূত হত্যা, বাক স্বাধীনতা, সভা-সমাবেশ, রাজনৈতিক নিপীড়ন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সহ নারীর প্রতি সহিংসতা এবং সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষার বিষয়ে গণমাধ্যমের নিকট লিখিতভাবে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, বিরোধী মত, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন এবং বিভিন্ন রাষ্ট্র কর্তৃক প্রকাশিত প্রতিবেদনেরই প্রতিচ্ছবি বলে আমরা মনে করি।

মানবাধিকার হাইকমিশনার এর বক্তব্যে দ্ব্যর্থহীনভাবে উঠে এসেছে, গুম, নির্যাতন এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- সংক্রান্ত বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিভিন্ন মেকানিজম এবং তাদের নির্যাতন বিরোধী কমিটি যে উদ্বেগ তুলে ধরেছেন তার অনেকটাই র‌্যাব এর ভূমিকা নিয়ে এবং এ ধরনের মানবাধিকার লংঘনের জবাবদিহিতা না থাকা বিষয়ে। আমরা লক্ষ্য করেছি, তিনি তাঁর লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন যে, এই অভিযোগগুলো নিয়ে তিনি বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রীদের নিকট তাঁর গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং একটি নিরপেক্ষ, স্বাধীন এবং স্বচ্ছ তদন্তের উপর জোর দিয়েছেন। একই সাথে তিনি নিরাপত্তা সেক্টর সংস্কারের উপরও জোর দিয়েছেন বলে আমরা দেখলাম। হাইকমিশনার স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী গুম, যথাযথ আইনী ব্যবস্থা এবং বিচারিক রক্ষাকবচ না থাকার এ্যালার্মিং অভিযোগ আছে।

বিশেষ করে দীর্ঘদিন ঘটনাগুলোর তদন্তে অগ্রগতি না হওয়া এবং ন্যায়বিচারের অন্যান্য প্রতিবন্ধকতার বিষয়টি তিনি তুলে ধরেছেন। আমরা দেখলাম, তিনি সরকারকে গুম এবং বিচারবগির্ভূত হত্যাকা-ের মত গুরুতর মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা তদন্তের জন্য একটি স্বাধীন এবং বিশেষায়িত পদ্ধতি তৈরী করতে আহবান করেছেন যারা ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার এবং সুশীল সমাজের সাথে এ সংক্রান্ত বিষয়ে তদন্তে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে। আন্তর্জাতিক মানের তদন্ত নিশ্চিতে সহযোগীতা করার জন্য তাঁর কার্যালয় তৈরী আছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।

তিনি আরও উল্লেখ করেছেন যে, গুম সংক্রান্ত জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপকে এই বিষয়ে আমন্ত্রণ জানালে তা হবে এটা সমাধানের জন্য সরকারের সদিচ্ছার বহিঃপ্রকাশ। এছাড়াও, তিনি এখন থেকে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে পাঠানোর জন্য আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য বাছাইয়ে তাদের মানবাধিকার লংঘনে সম্পৃক্ততার বিষয়টি নিবিড়ভাবে পরীক্ষা নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়েছেন। তিনি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সংশোধনের উপরও জোর দিয়েছেন বলে আমরা দেখলাম।

উল্লেখিত অবস্থায়, বিএনপি অবৈধ সরকারকে অবিলম্বে মানবাধিকার লংঘনের সাথে সম্পৃক্ত সকলকে জাতিসংঘের তত্বাবধানে নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত নিশ্চিত করে দোষীদের বিচারের মুখামুখি করার আহবান জানাচ্ছে। একই সাথে, এই প্রক্রিয়া শুরু করে নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ এবং গ্রহণযোগ্য তদন্তের স্বার্থে সরকারের পদত্যাগের আহবান জানাচ্ছে। কারণ, বিএনপি বিশ্বাস করে সমস্ত মানবাধিকার লংঘনের সাথে সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত রয়েছে।