গোয়েন্দা সংস্থার তৈরি ছিন্নমূল খুচরা পার্টিই এখন ভোট ডাকাতির কথা বলছে — রিজভী

আপডেট: জানুয়ারি ৯, ২০২৪
0
এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী

ভোট বর্জনকারী গণতন্ত্রকামী জনতার বিজয় হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেছেন, ‘১৮ কোটি মানুষের দাবি এবং গণতান্ত্রিক বিশ্বের আহ্বান পরোয়া না করে পূর্বনির্ধারিত ফলাফলের একদলীয় ও একতরফা ভোটার বর্জিত ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে বিজয় হয়েছে স্বতস্ফূর্ত ভোট বর্জনকারী গণতন্ত্রকামী বীর জনতার।’

মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি) বিকেলে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের ইতিহাসে জনগণের অভাবনীয় ও অভূতপূর্ব নীরব প্রতিবাদে একটি উদ্ভট ও গণ-বর্জিত প্রহসনের প্রকাশ্য অটো-ভোট ডাকাতির মঞ্চায়ন দেখল দেশবাসীসহ সারাবিশ্বের মানুষ। শত ভয়-ভীতি, জেল-জুলুম, নির্যাতন-প্রলোভন ও সরকারের সাড়াশি চাপ উপেক্ষা করে ভোট প্রদান না করার মাধ্যমে জনগণ এই নির্বাচনকে ঘৃনাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। এই দিনটি অনন্তকাল একটি জঘন্য কালো দিবস হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। এই দিনে ভোট বর্জন করে দেশের সর্বস্তরের মানুষ লাল কার্ড দেখিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘গভীর রাত থেকে চুরি-ডাকাতি, জাল ভোট, শিশু-কিশোর ভোট, রাস্তা থেকে পথিক ধরে নিয়ে ভোট, একই ব্যক্তির ৫০ ভোট, মিনিটে ৫০ ভোট, একই লাইন থেকে ঘুরে-ফিরে বার বার জাল ভোট দিয়েও বিকেল ৩টা পর্যন্ত ২৭ দশমিক ১৫ শতাংশ ভোটের ঘোষণা দিয়ে গণভবনের চাপে আবার এক ঘণ্টা পরেই ৪০ শতাংশ এবং গতকাল (সোমবার) দুপুরে তা আরেক দফা বাড়িয়ে ৪১ দশমিক ৯৯ শতাংশ ভোটের গোজামিলের ভৌতিক হিসাব বানানোর এই নির্বাচন ভোটের ইতিহাসে কলঙ্কতিলক উৎকীর্ণ করল ডামি সরকার।’

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘জাতিসঙ্ঘ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ গণতান্ত্রিক বিশ্ব এই অংশগ্রহণহীন ভোটার বিহীন একতরফা নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে বিবৃতি প্রদান করেছে। বিশ্বের সমস্ত মিডিয়া এবং পর্যবেক্ষকরা এই নির্বাচনকে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা এবং জনগণ ও ভোটার সম্পর্কহীন ভোট বলে আখ্যায়িত করেছে। পাতানো ডামি নির্বাচনের ফাঁদে পা দেয়নি দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ। সারাদেশের ভোট কেন্দ্রগুলো ছিল ভোটারশূন্য।’

তিনি বলেন, ‘এই প্রহসনমূলক নির্বাচন দেশকে অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক রাজনীতিতে দীর্ঘস্থায়ী সঙ্কটের দিকে ঠেলে দিয়েছে। নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসা ব্রিটিশ পর্যবেক্ষক জেজ কৌলসন সাংবাদিকদের বলেছেন যে আই ফাউন্ড দ্য নর্থ কোরিয়া মডেল হিয়ার। অর্থাৎু বাংলাদেশে উত্তর কোরিয়া স্টাইলের একদলীয় নির্বাচন হয়েছে।’

রিজভী বলেন, ‘২০১৪ ও ২০১৮ সালের ভোট ডাকাতির নির্বাচনের পর আবারো অভিনব কায়দায় বিরোধী দলহীন, ভোটারবিহীন, ভোট ডাকাতির একটি ডামি নির্বাচন করার জন্য গণবিচ্ছিন্ন সরকার গত পাঁচ বছর বিএনপিসহ বিরোধী দল ও ভিন্নমতের প্রতিটি মানুষের জীবন ধ্বংস করে দিয়েছে। বিএনপির নেতাকর্মীদের গুম, খুন, নির্যাতন, মিথ্যা মামলায় গৃহছাড়া করেছে। দেড় লক্ষাধিক মিথ্যা মামলায় অর্ধকোটির বেশি বিএনপির নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। কোটির বেশি বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থকদের উদ্বাস্তু করেছে। কারাগারগুলোতে ধারণ ক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি বিএনপি নেতাকর্মীকে বন্দী করে রেখে মৃত্যুর মুখে নিপতিত করেছে।’

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, ‘দেশকে করেছে বৃহৎ কারাগার। কারা হেফাজতে প্রতিদিন বিএনপির নেতাকর্মীদের কারো না করো মৃত্যুর সংবাদ আসছে। নতুন নতুন কালাকানুন করে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী পেশা ও সাধারণ জনগণকে শৃংখলিত করেছে। আচার-বিচার-আইন আদালত, পুলিশ, সিভিল প্রশাসন সবকিছু দলীয়করণ করে সমস্ত মৌলিক অধিকার কবর দিয়ে ভয়ের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে। লুটপাট করে দেশকে দেউলিয়া বানিয়েছে। সিন্ডিকেট করে মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্যের দাম আকাশচুম্বি করে দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতিতে ঠেলে দিয়েছে। দেশের জনগণকে ভোটারহীন করে রিফিউজিতে পরিণত করেছে। এত কিছু করার পর সরকার পরিকল্পিত এই একতরফা প্রহসনের ভোটার বর্জিত নির্বাচনের পর এখন কদর্য উল্লাসে মেতে উঠেছে। ডামি নির্বাচনের ডামি প্রার্থীরা এখন ডামি পার্লামেন্টে নেতৃত্ব দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এদের কোনো বৈধতা নেই। এক মুহূর্ত ক্ষমতায় থাকার কোনো অধিকার নেই। এই অবৈধ সরকারকে জনগণ মানে না। আমি এই মুহূর্তে পাতানো গণবিরোধী ডামি নির্বাচন বাতিল করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার আহ্বান জানাচ্ছি। অন্যথায় জনগণের চলমান শান্তিপূর্ণ আন্দোলন আরো দুর্বার করে এই ডামি সরকারের পতন ঘটানো হবে। ইনশাআল্লাহ।’

তিনি বলেন, “নির্বাচনের ফলাফল যে পুর্বনির্ধারিত তা প্রকাশ্যে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব জাহাংগীর আলম রোববার রাতে ফলাফল ঘোষণার সময় মিডিয়ার মাইক্রোফোন অন রেখে আওয়ামী দলদাস কর্মকর্তাদের সাথে সলাপরামর্শ করার সময় ফাঁস করে দিয়েছেন। যা মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে গোটা দেশের জনগণ অবলোকন করেছে। সেখানে মঞ্চে পাশে বসা জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ কে এম হুমায়ূন কবীরের সাথে আলাপের সময় ইসি সচিবকে বলতে শোনা যায়, ‘যেয়ে ঘুমাইয়া যামুগা। এখানে বসে থেকে লাভ আছে? সবাই রেজাল্ট জানে। ৬৪ ডিসিদের মেসেজ আছে। ৬৪টা জেলার রেজাল্ট কী হবে সবাই জানে। পড়ে চলে যামুগা। ডিসিরা পাঠাইছে না। সব আছে। আমার কাছে আছে তো।’ এ সময় পাশে থাকা কর্মকর্তা ইসি সচিবের কানে কানে ফলাফল নিয়ে কিছু বলছিলেন। তখন ইসি সচিব বলেন, ‘বিতর্কিত বানাইয়া ফালাইছে।’ সরকারের অন্যতম দোসর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদের বলেছেন, ‘সরকার যেখানে যাকে জেতাতে চেয়েছে সে জিতেছে। এই নির্বাচন সরকারের নিয়ন্ত্রণেই হয়েছে। যেখানে তাদের প্রার্থীকে জেতাতে চেয়েছে, সেখানে তারা সেই ব্যবস্থা নিয়েছে।”

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘অশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখানোর নাটক করতে, গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে নকল দল তথাকথিত কুইন্স পার্টি, ভূইঁফোড় পার্টি, ড্রিঙ্কস পার্টি, ছিন্নমূল পার্টি এবং খুচরা কিছু পার্টি, উচ্ছিষ্টভোগী জোট, গৃহপালিত বিরোধীদলকে এমপি বানানোর মূলার প্রলোভন দেখিয়ে নির্বাচনে এনেছিল। সরকার তাদের হাতে হারিকেন ধরিয়ে দেয়ার পর এখন তারা গাল ফুলিয়ে প্রকাশ্যে কিভাবে ভোট ডাকাতি হয়েছে তার সরল সত্য গল্প বলে হা-হুতাশ করে বেড়াচ্ছেন।’

রিজভী বলেন, ‘দুর্নীতিবাজ ডামি সরকার দিয়ে দেশ চলতে পারে না। চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত দেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং কোটি কোটি মানুষের লুণ্ঠিত ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার চলমান আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। আপনি যে দল কিংবা যে মতেরই হোন, আমাদের আন্দোলনকে বেগবান করতে আমাদের হাতকে শক্তিশালী করুন। আমাদের সাথে রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামে অংশ নিন। আপনার সাধ্য ও সামর্থের সবটুকু দিয়ে বিএনপিসহ ৬৩টি রাজনৈতিক দলের চলমান আন্দোলনের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিন। কারণ, আপনার তথা প্রতিটি নাগরিকের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই আমাদের চলমান আন্দোলন।’