গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভ কর্মসূচির সিদ্ধান্ত

আপডেট: মার্চ ৬, ২০২৪
0

জাতীয় কাউন্সিলের চিন্তা করছে বিএনপি। জাতীয় নির্বাচনের পর পুনর্গঠনের যে হাওয়া দলটিতে বইছে তার অংশ হিসেবেই কাউন্সিল নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে । গত সোমবার দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ নিয়ে সুনির্দিষ্ট মতামত আসলে পরবর্তী বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে নেতারা বলেছেন, কাউন্সিল আয়োজনের আগে তৃণমূল সংগঠন পুনর্গঠনের দিকে মনোযোগী হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে । সেটি শেষ করেই জাতীয় কাউন্সিলের দিকে অগ্রসর হতে হবে।

এদিকে আসন্ন রমজানে বিভাগভিত্তিক ইফতার মাহফিল না করে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত অর্থাৎ মহানগর, জেলা, উপজেলায় ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। ইফতার মাহফিলকে সাংগঠনিক কর্মসূচি হিসেবে নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছে হাইকমান্ড।

২০১৬ সালের ১৯ মার্চ হয়েছিল বিএনপির সর্বশেষ ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল। অথচ দলটির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন বছর পরপর সম্মেলন (কাউন্সিল) করে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি নির্বাচন করার কথা। এই সময়ের মধ্যে দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সরকারবিরোধী একটি আন্দোলনও করেছে দলটি। তবে নির্ধারিত সময়ে কাউন্সিল করতে না পারার জন্য সরকারের দমন-পীড়নকেই দায়ী করছে বিএনপি।
বিএনপির ষষ্ঠ কাউন্সিলের প্রায় পাঁচমাস পর ২০১৬ সালের ৬ আগস্ট স্থায়ী কমিটির ১৭ সদস্যসহ ৫০২ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটির নাম ঘোষণা করা হয়। এর পাশাপাশি ঘোষণা করা হয় ৭৩ সদস্যের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের নামও। এর মধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ের অনেক নেতা মারা গেছেন। কেউ কেউ পদপদবি থেকে বাদ পড়েছেন। সব মিলিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির ১৩০টির মতো পদ এখন শূন্য। এ ছাড়া বয়সজনিত কারণেও কয়েকজন সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে নিষ্ক্রীয়। বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটিতে বর্তমানে পদ রয়েছে ১৯টি। এর মধ্যে এখন পাঁচটি পদ খালি রয়েছে। ৭ জানুয়ারির নির্বাচন ঘিরে টানা ‘ঢিলেঢালা’ আন্দোলনের পর নতুন করে সংগঠন পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু করেছে বিএনপি। এর অংশ হিসেবে গত শুক্রবার জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন আংশিক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে দলটির সংগঠন পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে গত সোমবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ।

জানা গেছে, বৈঠকে আলোচনার শেষ পর্যায়ে স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জাতীয় কাউন্সিলের প্রসঙ্গটি সামনে আনেন। তিনি বলেন, যেহেতু অনেক দিন বিএনপির কাউন্সিল হয়নি, এখন কাউন্সিল করা যেতে পারে। এ বিষয়টি নিয়ে আমাদের ভাবা উচিত। তবে চাইলেই তো আর কাউন্সিল করা যাবে না। এ জন্য প্রস্তুতির ব্যাপার রয়েছে। সিদ্ধান্ত হলে বেশ কয়েক মাস সময় লাগবে। বৈঠক সূত্র জানায়, কাউন্সিল নিয়ে এমন প্রস্তাবনার পর স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য এ বিষয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন থাকায় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বৈঠকে নেই। আগামী বৈঠকে আমরা এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
এ ছাড়া বৈঠকে গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভ কর্মসূচি দেয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর আগের বৈঠকে এ ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছিল। যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সাথে আলোচনার পর যেকোনো সময় এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে।

সূত্র মতে, রমজান শুরুর আগেই এই বিক্ষোভ কর্মসূচি হতে পারে। সর্বশেষ গত ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশব্যাপী ছয় দিনের যুগপৎ কর্মসূচি পালিত হয়। কেন্দ্রীয় নেতাদের মুক্তি, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন বাতিল এবং একদফা দাবিতে তখন লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ করা হয়। প্রসঙ্গত, ভর্তুকি সমন্বয়ের অংশ হিসেবে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে সরকার। এর আগের দিন ২৮ ফেব্রুয়ারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়। এ ছাড়া গত ৩ মার্চ বাড়ানো হয়েছে এলপি গ্যাসের দাম। জানা গেছে, রমজানেও সংগঠন পুনর্গঠনের কাজ চলবে। অঙ্গ সংগঠন বিশেষ করে যেগুলোর বেহাল অবস্থা, সরকারবিরোধী বিগত আন্দোলনে যারা রাজপথে সক্রিয় ছিল না- সেগুলো পুনর্গঠনের কাজ শুরু হবে। রমজানে বিএনপি কী কী করবে, সেই পরিকল্পনা ইতোমধ্যে শুরু করেছে। প্রতি বছরের মতো এবারো রমজানে কেন্দ্রীয়ভাবে কয়েকটি ইফতার মাহফিলের আয়োজন করবে বিএনপি। বরাবরের মতো এবারো প্রথম রোজায় এতিম এবং আলেম-ওলামাদের সম্মানে ইফতার আয়োজন করা হবে। এ ছাড়া বিভিন্ন পেশাজীবী, কূটনীতিক এবং রাজনীতিবিদের সম্মানেও ইফতার পার্টি দেয়ার চিন্তা রয়েছে দলটির। এ ছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির পক্ষ থেকেও ইফতারের আয়োজন করা হতে পারে। দল ও অঙ্গ সংগঠনের ব্যাপক নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে এসব ইফতার মাহফিল করতে চায় বিএনপি। বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের পক্ষ থেকেও ঢাকায় ইফতার মাহফিলের আয়োজন থাকবে। বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানিয়েছেন, বিএনপির দুটি ইফতারের শিডিউল চূড়ান্ত হয়েছে। ১ রমজানের দিন এতিম ও আলেমদের সাথে ইস্কাটন লেডিস ক্লাব এবং ২৮ মার্চ রাজনৈতিক নেতাদের সম্মানে একই ভেন্যুতে ইফতার মাহফিল হবে।

এ ছাড়া প্রতি রমজানে দলের গুম-খুনের শিকার নেতাকর্মীদের কাছে ঈদ উপহার পাঠায় বিএনপি। জানা গেছে, এই কার্যক্রম এবারো অব্যাহত থাকবে। দুই হাজারের বেশি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারে এই ঈদ উপহার পাঠানো হবে। এ ছাড়া বিএনপির গত ছয় মাসের আন্দোলনে সারা দেশে দল ও অঙ্গ সংগঠনের প্রায় ২৯ জন নেতাকর্মী মারা গেছেন। বিএনপির হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে তাদের পরিবারেও এবার ঈদ উপহার পাঠানো হবে। এর মধ্য দিয়ে বিএনপি তৃণমূলে এই বার্তা দিতে চায় যে, বিগত আন্দোলন ঘিরে ক্ষতিগ্রস্ত নেতাকর্মীদের পরিবারের পাশে তারা রয়েছে।