ছাত্রলীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আগামীকাল বুধবার

আপডেট: জানুয়ারি ৩, ২০২৩
0
chatroluege


সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঐতিহাসিক বটতলায় সমাবেশ ও র‌্যালি

আগামীকাল বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (ন-মা) কেন্দ্রীয় সংসদ আগামী ৪ঠা জানুয়ারি ২০২৩ বুধবার সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঐতিহাসিক বটতলায় সমাবেশ ও র‌্যালির কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এ সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখবেন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও জাসদ সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি। সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখবেন স্বাধীনতাপূর্ব ও স্বাধীনতাউত্তর ছাত্রলীগের সাবেক নেতৃবৃন্দ । সমাবেশে সভাপতিত্ব করবেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (ন-মা) কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি রাশিদুল হক ননী ছাত্রলীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (ন-মা) এর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, মহানগর, জেলা, উপজেলা কমিটি কেন্দ্রীয়কর্মসূচির অনুরূপ কর্মসূচি পালন করবে। ছাত্রলীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (ন-মা) কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি রাশিদুল হক ননী ও সাধারণ সম্পাদক মাসুদ আহাম্মেদ এক বিবৃতিতেসংগ্রাম ও গৌরবের উত্তরাধিকার ছাত্রলীগের সকল নেতা-কর্মী-সদস্যকে সংগ্রামী শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তারা গভীর শ্রদ্ধার সাথে ছাত্রলীগের সকল শহীদ ও প্রয়াত নেতা-কর্মীকে স্মরণ করেছেন। তারা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা-কর্মী-সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তারা ছাত্রলীগের সংগ্রামের চেতনায় আগামী ৪ জানুয়ারি সংগঠনের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী যথাযথ মর্যাদায় উদযাপনের জন্য সংগঠনের সকল বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, মহানগর, জেলা, উপজেলা কমিটির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ছাত্রলীগের বিবৃতি
আগামী ৪ঠা জানুয়ারি ২০২৩ বুধবার দেশের ঐতিহ্যবাহী ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৯৪৭ সালে ধর্মের ভিত্তিতে ভারতবর্ষ বিভক্তির মধ্য দিয়ে সৃষ্ট পাকিস্তান নামক অবৈজ্ঞানিক রাষ্ট্রের পূর্বাংশ পূর্ব বাংলার বাঙালিদের উপর পশ্চিম পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর প্রায় ঔপনিবেশিক শোষণ ও জাতিগত নিপীড়ণের বিরুদ্ধে বাঙালি জাতির ভাষা, সংস্কৃতি, আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে জাতির সব চাইতে অগ্রসর চিন্তার অধিকারী ছাত্র সমাজের কয়েকজন সাহসী তরুণ ১৯৪৮ সালের ৪ঠা জানুয়ারি পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ গঠন করেন। খাজা নাইমুদ্দিন ছিলেন প্রথম আহ্বায়ক। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ছাত্রলীগ বাঙালি জাতির ভাষা, সংস্কৃতি, আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিপীড়ণের বিরুদ্ধে বাঙালি জাতির ভাষা, সংস্কৃতি, আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে জাতির সব চাইতে অগ্রসর চিন্তার অধিকারী ছাত্র সমাজের কয়েকজন প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ছাত্রলীগ বাঙালি জাতির ভাষা, সংস্কৃতি, আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যনিয়ে আপোষহীন সংগ্রামের সূচনা করে। প্রতিষ্ঠার পর ১৯৪৮ সালে ছাত্রলীগ বাংলা ভাষার প্রশ্নে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে জয়যাত্রা শুরু করে। ১৯৫২ সালের ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনে ছাত্রলীগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ১৯৫৩ সালে নাম থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ নামকরণের মধ্য দিয়ে সম্পূর্ণ অসাম্প্রদায়িক সংগঠনে উন্নীত হয়। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে বাঙালির পক্ষে গণরায় আদায়ে ছাত্রলীগ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। ১৯৫৮ সালে জেনারেল আইয়ূবের সামরিক শাসন জারি হবার পর জাতীয় রাজনৈতিক অঙ্গণের বিপর্যস্থতা, সুবিধাবাদিতা, নিয়ে আপোষহীন সংগ্রামের সূচনা করে। প্রতিষ্ঠার পর ১৯৪৮ সালে ছাত্রলীগ বাংলা ভাষার প্রশ্নে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে জয়যাত্রা শুরু করে। ১৯৫২ সালের ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনে ছাত্রলীগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ১৯৫৩ সালে নাম থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ নামকরণের মধ্য দিয়ে সম্পূর্ণ অসাম্প্রদায়িক সংগঠনে উন্নীত হয়। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে বাঙালির পক্ষে গণরায় আদায়ে ছাত্রলীগ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। ১৯৫৮ সালে জেনারেল আইয়ূবের সামরিক শাসন জারি হবার পর জাতীয় রাজনৈতিক অঙ্গণের বিপর্যস্থতা, সুবিধাবাদিতা, নিয়ে আপোষহীন সংগ্রামের সূচনা করে। প্রতিষ্ঠার পর ১৯৪৮ সালে ছাত্রলীগ বাংলা ভাষার প্রশ্নে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে জয়যাত্রা শুরু করে। ১৯৫২ সালের ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনে ছাত্রলীগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ১৯৫৩ সালে নাম থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ নামকরণের মধ্য দিয়ে সম্পূর্ণ অসাম্প্রদায়িক সংগঠনে উন্নীত হয়। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে বাঙালির পক্ষে গণরায় আদায়ে ছাত্রলীগ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। ১৯৫৮ সালে জেনারেল আইয়ূবের সামরিক শাসন জারি হবার পর জাতীয় রাজনৈতিক অঙ্গণের বিপর্যস্থতা, সুবিধাবাদিতা, দ্যোদূল্যমানতার অচলায়তন ভেঙ্গে ১৯৬২ সালে ছাত্রলীগ অপরাপর প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ করে সামরিক শাসন বিরোধী গণতান্ত্রিক ও ঐতিহাসিক শিক্ষা আন্দোলন সংগঠিত করে। ১৯৬২ সালেই ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক, কাজী আরেফ আহমেদের নেতৃত্বে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক লক্ষ্যে স্বাধীনতার নিউক্লিয়াস নামে একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া গড়ে উঠে। যা নিউক্লিয়াস ও স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ নামে পরিচিত হয়। ছাত্রলীগ ১৯৬৪ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বিরোধী আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ৬ দফা ঘোষণা করলে জাতীয় রাজনৈতিক অঙ্গনের বিরোধীতা ও দ্যোদূল্যমনতার বিপরীতে স্বাধীনতার নিউক্লিয়াসের তত্ত্বাবধায়নে ৬ দফার পক্ষে ছাত্রলীগ বলিষ্ঠ-আপোসহীন-ঐতিহাসিক সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়। ১৯৬৮ সালের ছাত্র গণআন্দোলন এবং অপরাপর গণতান্ত্রিক ছাত্র সংগঠনকে সাথে নিয়ে ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ গঠন করে ছাত্রলীগ ১৯৬৯ সালের ঐতিহাসিক গণঅভ্যূত্থানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। গণআন্দোলনের চাপে আইয়ূব সামরিক জান্তা পদত্যাগ এবং বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে বাঙালি জাতির অবিসম্বাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে বঙ্গবন্ধু উপাধী দেয়া হয়। ছাত্রলীগ ১৯৬৯ সালে জয় বাংলা শ্লোগানকে জনপ্রিয় ও জাতীয় শ্লোগানে পরিণত করে। স্বাধীনতার নিউক্লিয়াস তথা স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদের নির্দেশে ১৯৭০ সালেই ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় শহীদ স্বপন চৌধুরী স্বাধীন সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রস্তাব উত্থাপন করেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে জয় বাংলা ধ্বনিকে সামনে নিয়ে বাঙালির পক্ষে গণরায় অর্জনে ছাত্রলীগ সুপরিকল্পিতভাবে গ্রামে-গঞ্জে ব্যাপক প্রচারণা চালায়। স্বাধীনতার নিউক্লিয়াস তথা স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদের তত্ত্বাবধায়নে ছাত্রলীগ সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য সুস্পষ্ট করতে ১৯৬৯ সালেই ১৫ ফেব্রুয়ারি বাহিনী, সার্জেন্ট জহুর বাহিনী, জয় বাংলা বাহিনী গঠন করে প্রকাশ্যে সামরিক কুচকাওয়াজ শুরু করে। এসকল কুচকাওয়াজে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা রেজিমেন্টাল পতাকা হিসাবে প্রদর্শণ করা শুরু করে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বাঙালির পক্ষে ঐতিহাসিক গণরায় অর্জিত হবার পর ছাত্রলীগ ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো/বাংলাদেশ স্বাধীন করো’ শ্লোগান দিয়ে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সমগ্র বাঙালি জাতিকে জাগিয়ে তুলে। ১৯৭১ সালের ১ মার্চ জেনারেল ইয়াহিয়া পাকিস্তান গণপরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করলে স্বাধীনতার নিউক্লিয়াস তথা স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদের তত্ত্বাবধায়নে ছাত্রলীগ ও ডাকসুর সমন্বয়ে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠনকরা হয়। স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ১৯৭২ সালের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা প্রদর্শণ ও উত্তোলন করে। ৩ মার্চ ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানে বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতিতে বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও সর্বাধিনায়ক, স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সীমানা, স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের পতাকা, ‘আমার সোনার বাংলা’কে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীত,সমাজতন্ত্রকে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অন্যতম জাতীয় নীতি ঘোষণা করে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের রূপরেখা সম্বলিত ইশতেহার ঘোষণা করে। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু তার ঐতিহাসিক ভাষণের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার লক্ষ্যে উত্থিত জাতির কর্তৃত্বভার গ্রহণ করলে ছাত্রলীগ সারা দেশে স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার রাজনৈতিক দায়িত্ব গ্রহণ ও সামরিক প্রস্তুতি জোরদার করে। ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবসকে প্রত্যাখ্যান করে দেশব্যাপী প্রতিরোধ দিবস ঘোষণা করে পল্টন ময়দানে আনুষ্ঠানিকভাবে সামরিককায়দায় গান ফায়ার করে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে এবং ঢাকার রাজপথে সামরিক কায়দায় কুচকাওয়াজ করে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে গিয়ে স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলণ করে। এ দিন ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে ঢাকাসহ পূর্ব বাংলার সকল সরকারি- বেসরকারি অফিস আদালতসহ সর্বত্র স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলণ করে পাকিস্তান রাষ্ট্রের কবর ও স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রের উত্থান অনিবার্য করে তোলে। ২৫ মার্চ পাকহানাদার বাহিনীর ক্র্যাকডাউনের পর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা জনগণ এবং সেনাবাহিনী-ইপিআর-পুলিশের বিদ্রোহী সদস্যদের সংগঠিত করে পাকহানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রাথমিক সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে। স্বাধীন বাংলাদেশকে পাকহানাদার বাহিনী মুক্ত করতে মুক্তিযুদ্ধকে সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট আদর্শ দ্বারা পরিচালিত করতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী সদস্যরা বিএলএফ নামে একটি শক্তিশালী গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা বাহিনী গড়ে তোলে। বিএলএফ এর সদস্যরা গেরিলা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে সীমান্ত অতিক্রম করে দেশের অভ্যন্তরে ঢুকে পাকহানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে দুঃসাহসিক গেরিলা যুদ্ধ পরিচালনা করে। পাকহানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় হলে বিএলএফ এর গেরিলা যোদ্ধারা পাকহানাদার মুক্ত বাংলাদেশের জেলা-মহকুমা-থানা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সমন্বয়ে রাজনৈতিক কর্তৃত্ব ও গণপ্রশাসন গড়ে তোলার কাজ শুরু করে। আন্তর্জাতিক চাপে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন দেশে ফিরে আসলে ছাত্রলীগ ও বিএলএফ এর পক্ষ থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যুদ্ধ বিধ্বস্থ ও স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র গড়ে তোলার লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠা জাতীয় ঐক্য রক্ষা করে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সকলের সমন্বয়ে বিপ্লবী জাতীয় সরকার গঠনসহ ১৫ দফা প্রস্তাব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে প্রদান করা হয়। জাতির দুর্ভাগ্য আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে খন্দকার মোস্তাকসহ ডানপন্থী ও সুবিধাবাদী নেতাদের চরম বিরোধীতার কারণে বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে তার রাজনৈতিক আদর্শ ও কর্মসূচিভিত্তিক সকল সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধে তার পক্ষে সবচাইতে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালনকারী ছাত্রলীগ ও বিএলএফ নেতাদের বিপ্লবী জাতীয় সরকার প্রস্তাব গ্রহণ না করে পাকিস্তানীদের রেখে যাওয়া রাষ্ট্র-প্রশাসন-আইন- কানুনের উপর নির্ভর করে দেশ পরিচালনার পথে যেতে বাধ্য হন। যুদ্ধ বিধ্বস্থ স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র গড়ে তোলার প্রশ্নে আদর্শগত বিরোধে ১৯৭২ সালে ছাত্রলীগ বিভক্ত হয়ে যায়। স্বাধীন সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় আদর্শ ও চেতনা ধারণকারী ছাত্রলীগ ও বিএলএফ এর সদস্যরা বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ঘোষণা করে। অন্যদিকে ছাত্রলীগের ডানপন্থী ও সুবিধাবাদী অংশ মুজিববাদ শ্লোগান দিয়ে পৃথক অবস্থান গ্রহণ করে। মুজিববাদে বিশ্বাসীরা আওয়ামী লীগের সাথে থেকে যান। বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী ছাত্রলীগের সাবেক নেতা, যুব নেতা, বিএলএফ এর সদস্যরাসহ মুক্তিযোদ্ধারা জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করে। বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের অপশাসন ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী তীব্র ছাত্র-গণআন্দোল গড়ে তোলে। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের উপর চরম রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় নীপিড়ন-নির্যাতন নেমে আসে। হাজার হাজার নেতা-কর্মী হত্যা, জেল, জুলুম, নির্যাতনের শিকার হন। ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করে খুনী খন্দকার মোস্তাকসহ আওয়ামী লীগের একাংশ ক্ষমতা দখল করলে ছাত্রলীগ খুনী মোস্তাকের বিরুদ্ধে কালবিলম্ব না করে আন্দোলনে অবতীর্ণ হয়। খুনী মোস্তাকের ৮৩ দিনের শাসনকালেও পূর্বের মতই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের উপর রাষ্ট্রীয় নির্যাতন-নিপীড়ন অব্যাহত থাকে। খুনী মোস্তাকের পথ ধরে জিয়া ও এরশাদ দেশের উপর সামরিক শাসন চাপিয়ে দিলে ছাত্রলীগ জিয়া ও এরশাদের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে মারমূখী সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়। ১৯৮২সালে এরশাদ সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগই প্রথম আন্দোলনের সূত্রপাত করে। এরশাদ সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র-গণআন্দোলনে ছাত্রলীগ নেতা জয়নাল, শাজাহান সিরাজ, ডাঃ মিলন, জাহাঙ্গীর, মুন্নাসহ ছাত্রলীগের অনেক নেতা-কর্মী শহীদ হন। ১৯৯০ সালের গণঅভ্যূত্থানে ছাত্রলীগ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। মোস্তাক-জিয়া-এরশাদের ছত্রচ্ছায়ায় স্বাধীনতা বিরোধী জামাত-শিবিরসহ সাম্প্রদায়িক শক্তির পুনরুত্থান ঘটলে ছাত্রলীগ এরশাদ সামরিক শাসন বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পাশাপাশ সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে দেশব্যাপী প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলে। সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী আন্দোলনে জুয়েল, তপন, মুনির, পিটুসহ বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী শহীদ হন। ১৯৯০ সালের পর দেশে সাংবিধানিক শাসন প্রক্রিয়া চালু হলেও নির্বাচিত সরকারসমূহ ৯০ এর গণঅভ্যূত্থানের চেতনার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে স্বৈরাচারী পথে গেলে ছাত্রলীগ ছাত্রদের অধিকার ও গণতন্ত্রের প্রশ্নে আন্দোলনে অবতীর্ণ হয়। ১৯৯২ সালে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও জামাত-শিবির নিষিদ্ধ করার দাবিতে ঐতিহাসিক গণআদালত গঠন ও গণআদালতের রায় বাস্তবায়নে গড়ে ওঠা দেশব্যাপী গণআন্দোলনে ছাত্রলীগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আন্দোলনে মুকিমসহ ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী শহীদ হন। ২০০১ সালে বিএনপি-জামাত জোট সরকার আমলে রাষ্ট্রীয় মদদে মৌলবাদী-জঙ্গিবাদী-সাম্প্রদায়িক শক্তির পুনরুত্থান ঘটলে ছাত্রলীগ মৌলবাদী-জঙ্গিবাদী-সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে আন্দোলনে অবতীর্ণ হয়। ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করার দাবিতে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চ গড়ে তোলা এবং গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে ছাত্রলীগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অতীতের গৌরবজ্জ্বল সংগ্রাম, আদর্শ ও চেতনাকে ধারণ করে বর্তমানে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (ন-মা) বৈষম্য ও বেকার সৃষ্টির শিক্ষা ও সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তন, দুর্নীতি ও অপশাসনে শিক্ষার্থীদের জীবনের অপচয় বন্ধ, ইতিহাস- ঐতিহ্য-সংস্কৃতি বিরোধী ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নির্মূল করার লক্ষ্যে অবিচল থেকে ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।