স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর \ জয়দেবপুর-টঙ্গী রেলপথের ১১ কিলোমিটার ডাবল রেললাইনে আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে ৩য় ও ৪র্থ ডুয়েল গেজ লাইন এবং টঙ্গী জয়দেবপুর ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন প্রকল্পের আওতায় এ রেলপথে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভাচুর্য়ালী সংযুক্ত হয়ে এ ডাবল লাইন রেলপথ উদ্বোধন করেন।
প্রধানমন্ত্রী ডাবল লাইন উদ্বোধন করার পর দুপুরে জয়দেবপুর রেলওয়ে জংশন স্টেশন এলাকার নবনির্মিত এ ডাবল লাইন ধরে একটি বিশেষ ট্রেনে চড়ে জয়দেবপুর-টঙ্গী রেলপথের ১১ কিলোমিটার ডাবল লাইন দিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন প্রথম যাত্রী রেল মন্ত্রী। এসময় তার সঙ্গে রেল সচিব, রেলের ডিজি ও এডিজি প্রমূখ কর্মকর্তা ছিলেন।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাওয়া-আসায় সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় ঢাকা-টঙ্গী ও টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশন। কিন্তু এই দুই সেকশনের মধ্যে ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে দুটি ডুয়েলগেজ লাইন ও একটি ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে একটি ডুয়েলগেজ লাইন চালু রয়েছে। এ কারণে টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে চাহিদা থাকার পরও বেশি সংখ্যক ট্রেন পরিচালনা করা যাচ্ছিল না। তাই ঢাকা থেকে আরও ট্রেন চলাচল বাড়ানো, ভ্রমণের সময় সাশ্রয়, যাত্রী সেবার মান বাড়ানোর লক্ষ্যে ২০১২ সালের নবেম্বর মাসে ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে তৃতীয় ও চতুর্থ ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এফ কন কল্পতরু এ ডাবল লাইনের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে।
জয়দেবপুর জংশনের সিনিয়র স্টেশন মাস্টার রেজাউল ইসলাম জানান, ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে ৩য় ও ৪র্থ ডুয়েল গেজ লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন সেকশনে ৩৩ দশমিক ৪৮ কিলোমিটার লুপলাইনসহ ১১৬ কিলোমিটার ও চারটি স্টেশন পুনর্নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রথমে এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয় ৮৪৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত। প্রকল্পের অনুমোদিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১হাজার ১শ ৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
জয়দেবপুর রেলস্টেশনের মাস্টার আরো জানান, সিঙ্গেল লাইন থাকার কারণে এতদিন অনেক সময় অন্য আন্ত:নগর এক্সপ্রেস ট্রেনের চলাচলের জন্য জয়দেবপুর এবং ধীরাশ্রম স্টেশনে ট্রেন দঁাড়িয়ে থাকতে হতো। এখন আর কোনো ট্রেনকে অন্য ট্রেনের চলাচল স্বাভাবিক রাখার জন্য অপেক্ষা করে থাকতে হবে না।
ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে ৩য় ও ৪র্থ ডুয়েল গেজ লাইনের প্রকল্প পরিচালক নাজনিন আরা কেয়া বলেন, টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে ডাবল লাইন ট্রেন চালুর ফলে প্রায় সকল ট্রেনের যাত্রা সময় গড়ে ১৫-২০ মিনিট সময় সাশ্রয় হবে। বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে দুপুরে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে।
ডাবল লাইনে ট্রেন চলাচল উদ্বোধন উপলক্ষে জয়দেবপুর রেল জংশনের পশ্চিম পাশে খোলা জায়গায় সামিয়ানা টাঙিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এসময় জয়দেবপুর রেলওয়ে জংশনের চত্বর থেকে ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আ ক ম মোজাম্মেল হক, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, গাজীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন সবুজ, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের ডেপুটি হাই কমিশনার ড. বিনয়, রেল সচিব হুমায়ুন কবীর, বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক কামরুল আহসান, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) কমিশনার মোল্ল্যা নজরুল ইসলাম, গাজীপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) আনিসুর রহমান প্রমূখ।
৯দফা দাবি ’গাজীপুর ঐতিহ্য ও উন্নয়ন’র
গাজীপুর ঐতিহ্য ও উন্নয়ন নামের সামাজিক সংগঠণের সভাপতি প্রকৌশলী সামসুল হক বলেন, গাজীপুর থেকে দৈনিক প্রায় ২০হাজার কর্মজীবী যাত্রী প্রতিদিন ঢাকায় যাতায়ত করেন। শিল্পায়ন এবং দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে সড়ক পথের ভোগান্তির কারণে রেলপথ জনপ্রিয় হচ্ছে এবং যাত্রীর সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। এমতাবস্থায় আন্ত:নগর এক্সপ্রেস’র নয়টি ট্রেনের জয়দেবপুরে জংশনে স্টপেজ দেয়না।
জয়দেবপুর জংশনে সকল ট্রেনের যাত্রাবিরতি, টঙ্গী ও তেজগাও স্টেশনে টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেনের স্টপেজ দেয়া, জয়দেবপুর-ঢাকা ট্রেনের মাসিক টিকেট চালু, ট্রেনে বগি ও আসন বৃদ্ধিকরাসহ রেল মন্ত্রীর কাছে ৯ দফা দাবি জানিয়েছেন গাজীপুর ঐতিহ্য ও উন্নয়ন নামের সামাজিক সংগঠণের সভাপতি প্রকৌশলী সামসুল হক ও সাধারণ সম্পাদক কাজী মরিয়ম পারভীন ময়না।
###
মোঃ রেজাউল বারী বাবুল
স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর।
০৯/০২/২০২৩ ইং।
