জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় দ্রুত, সমন্বিত এবং জনসম্পৃক্ত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে

আপডেট: মার্চ ৩, ২০২২
0

একশনএইড বাংলাদেশ, ঢাকা, ৩ মার্চ ২০২২
সম্প্রতি প্রকাশিত জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক আন্তঃরাষ্ট্রীয় বিজ্ঞানীদের প্যানেল – আইপিসিসি’র ওয়ার্কিং গ্রুপ-২ এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বাংলাদেশকে জলবায়ু পরিবর্তনের অবশ্যম্ভাবী এবং অনিবার্য প্রভাব মোকাবিলা করতে হবে। প্রতিবেদনে লক্ষ-লক্ষ মানুষের গৃহহীন হওয়ার পূর্বাভাসও রয়েছে। এই প্রেক্ষিতে একশনএইড বাংলাদেশ বৈশ্বিক জলবায়ু তহবিল থেকে সহায়তা এবং ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তির পথকে সহজ করার উদ্যোগ গ্রহণের আহবান জানাচ্ছে। এজন্য দরিদ্র, ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষের জন্য জাতীয়ভাবে আবাসনের যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে তাকে প্রতিবেদনে উল্লেখিত তথ্য-উপাত্তের সাথে সমন্বিত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। চাষের জমি যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে বিষয়ে বিশেষ নজর রাখার পাশাপাশি বহুতল ভবনের সমন্বয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নগরের পরিকল্পনা এখনই গ্রহণ করতে হবে যাতে করে ভবিষ্যতে-এর বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়।
নারী, শিশু, বয়স্ক এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উপর পরিবর্তনের সম্ভাব্য প্রভাব বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নকশা এখনই তৈরী করে রাখতে হবে যাতে করে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাগুলো বাস্তবানের সময় আন্তঃপরিকল্পনার সমন্বিত বাস্তবায়ন সম্ভব হয়। নারীরা যেকোন দুর্যোগে প্রথম এবং সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই জলবায়ু পরিবর্তন এবং দুর্যোগের প্রভাব মোকাবিলায় নারীর অংশগ্রহন এবং নেতৃত্বকে উৎসাহিত করা সময়ের দাবী। নারী উন্নয়ন নীতিমালার আলোকে আগামী বাজেটে যথাযথ বরাদ্দ নিশ্চিত করা জরুরি।
প্রতিবেদনের পূর্বাভাস অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কৃষির উৎপাদন তাৎপর্যপূর্ণভাবে কমে যাবে, যা এক তৃতীয়াংশ থেকে প্রায় অর্ধেক পর্যন্ত হতে পারে। এমতাবস্থায় কৃষি বহুমূখীকরণ, অভিযোজন এবং নদী ও সাগরগর্ভ থেকে নতুন কৃষি ভ‚মি সৃষ্টির প্রয়োজন পড়বে। পাশাপাশি সমন্বিত পলি ও পানি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বিদ্যমান কৃষি জমির উৎপাদনশীলতা ঠিক রাখার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে জাতীয় সক্ষমতার সাথে আঞ্চলিক সহযোগিতার সমন্বয় প্রয়োজন এবং একই সাথে জাতীয়তার ক্ষুদ্র গন্ডি পেরিয়ে এই অঞ্চলের দেশগুলোকে পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনায় মানবিক হয়ে উঠাতে হবে।
ভবিষ্যতের সম্ভাব্য পরিস্থিতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে এমন বিভিন্ন নীতিমালা, আইন এবং বিধিমালা হালনাগাদ করার কাজ এখনই শুরু করতে হবে। এই প্রভাব মোকাবিলায় নিজস্ব জলবায়ু তহবিল, মুজিব প্রসপারিটি প্ল্যান ও ডেল্টা প্ল্যানসহ যে সকল উদ্যোগ ইতোমধ্যে গ্রহণ করা হয়েছে সেসকল উদ্যোগের সাথে সমাজের সকল মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা এবং এনজিওদেরকেও দেশের উন্নয়ন লক্ষ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মসূচি প্রণয়ন এবং অর্থায়নের জন্য এগিয়ে আসতে হবে যাতে কাজগুলো দ্রুত করা সহজ হয়। এর পাশাপাশি বরাদ্দকৃত অর্থের সদ্ব্যবহারের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ প্রয়োজন, যার মাধ্যমে পরিবর্তিত অবস্থার সাথে নীতিমালা এবং বিদ্যমান ব্যবস্থার সামঞ্জস্য করা যায়। ভবিষ্যতের উপক‚লীয় জলমগ্নতা এবং উত্তরাঞ্চলের শুষ্কতা মোকাবিলায় সরকারের গৃহীত ডিজাস্টার ইম্প্যাক্ট এসেসমেন্ট (ডিআইএ)-এর যথাযথ প্রয়োগ সহায়ক ভ‚মিকা পালন করতে পারে। বেসরকারি খাতকে এক্ষত্রে চৌকস ও সৃষ্টিশীল হতে হবে।
সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায়-ই এই পরিস্থিতি মোকাবিলা সম্ভব। বাংলাদেশের স্বক্ষমতা আছে, এর সাথে সদিচ্ছা যুক্ত করে একে বাস্তবায়ন করাই এই সময়ের কাজ।