জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশকেও ভিশনভাবে প্রভাবিত করছে– পরিকল্পনা মন্ত্রী মান্নান

আপডেট: আগস্ট ৭, ২০২১
0

প্রভা অরোরা একটি সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজ হিসেবে ৫ আগস্ট, ২০২১ থেকে জুম মাধ্যমে অনুষ্ঠিত একটি ভার্চুয়াল গ্লোবাল লঞ্চ ইভেন্টের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান লক্ষ্য হলো বৈশ্বিক মূল্যবোধে বলীয়ান কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুণীদের সমৃদ্ধ ভুবন তৈরি করা।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী এম. এ. মান্নান এমপি প্রধান অতিথি হিসেবে একটি সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজ হিসেবে প্রভা অরোরার যাত্রাকে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। দেশ -বিদেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরা বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেছিলেন প্রভা অরোরার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে।

প্রভা অরোরার উপদেষ্টা এবং পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন ডা. আফতাব উদ্দিন অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য এবং শেষে সমাপনী বক্তব্য প্রদান করেন প্রভা অরোরার প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিধান চন্দ্র পাল। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, “আজ কোভিড -১৯ মহামারীর অন্ধকার পটভূমি, জলবায়ু পরিবর্তনের ধ্বংসাত্মক পরিণতি, সামাজিক মূল্যবোধের ক্রমবর্ধমান ক্ষয় এবং কিশোর এবং তরুণদের মধ্যে আইন-শৃঙ্খলার প্রতি অসম্মান– এমন একটি অবস্থায় আমরা আমাদের যাত্রা শুরু করছি। আমাদের এটি একটি বৈশ্বিক উদ্যোগ। আমরা বিশ্বাস করি যে, মাতৃসম প্রকৃতির সুরক্ষার জন্য আমাদের অবশ্যই গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে হবে এবং এইভাবে কেবল নিজেদেরকেই নয়, বিশ্বকেও রক্ষা করতে হবে। আমি আমার সমস্ত দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে বলতে পারি এবং আশা করি যে, একসাথে কঠোর পরিশ্রম করলে আমরা একটি সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলতে সক্ষম হব।

প্রধান অতিথি তাঁর উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেন, প্রভা অরোরা যে বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করার জন্য অগ্রসর হচ্ছে যেমন, জলবায়ু পরিবর্তন যা বিশ্বকে প্রভাবিত করছে, বিশেষত আমাদের মতো গরিব ও স্বল্প আয়ের দেশগুলোকে। তিনি বলেন, বিশেষজ্ঞদের মতে বাংলাদেশ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে একটি। এক্ষেত্রে প্রভা অরোরার এ ধরণের উদ্যোগ আমার কাছে সাহসী ও মহৎ বলেই মনে হয়েছে। তিনি প্রভা অরোরার সাফল্য কামনা করেছেন। তিনি সুনির্দিষ্টভাবে বলেন, আমি এটা জেনে খুবই খুশি হয়েছি যে, প্রভা অরোরা এদেশের কিশোর কিশোরী ও তরুণ প্রজন্মকে নিয়ে কাজ করছে, যাদের জন্য আমরাও কাজ করছি। আমাদের সরকারও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এ দেশের তরুণ, নারী ও গ্রামীণ জনগণের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি যে, আমরা অর্থ, জ্ঞান এবং নেটওয়ার্ক স্থাপনের মাধ্যমে প্রভা অরোরাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করব।

অ্যামিনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সাবেক মহাসচিব ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বনামধন্য মানবাধিকারকর্মী ইয়ান মার্টিন প্রভা অরোরা যে নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে তা দেখে তিনি আনন্দ প্রকাশ করেন এবং প্রতিষ্ঠানটির সাফল্য কামনা করেন ।

ডেনমার্ক থেকে অংশ নিয়েছিলেন বিশ্বের সর্ববৃহৎ পরিবেশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ফাউন্ডেশন ফর এনভায়রনমেন্টাল এডুকেশন (ফিইই)-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড্যানিয়েল শ্যাফার। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, FEE হল বিশ্বের সবচেয়ে বড় পরিবেশ শিক্ষা সংগঠন যাদের বিশ্বের ১০০ টিরও বেশি দেশে সদস্য সংগঠন রয়েছে। বিশেষ করে FEE ইউনেস্কো দ্বারা বিশ্বব্যাপী টেকসই উন্নয়ন শিক্ষার অন্যতম অংশীদার হিসেবে স্বীকৃত। তিনি খুশি হয়েছিলেন যে প্রভা অরোরা FEE নেটওয়ার্কের অংশ হতে আগ্রহ দেখিয়েছে এবং তিনি এই বলে শেষ করেছেন যে, এই অংশীদারিত্বের সম্পর্ক বাংলাদেশ এবং বিশ্বের জন্য টেকসই ভবিষ্যত গড়ে তুলতে সহায়তা করবে।

থাইল্যান্ড থেকে যুক্ত হয়েছিলেন স্বনামধন্য প্রশিক্ষক এবং সাসটেইনএবিলিটি এশিয়ার নির্বাহী পরিচালক রবার্ট স্টিল। তিনি তাঁর বক্তব্যে আশাবাদ প্রকাশ করে বলেন, প্রভা অরোরা বাংলাদেশী যুবকদের বিশ্বব্যাপী যুব নেটওয়ার্কের সাথে সম্পৃক্ততা এবং সেতু তৈরির জন্য একটি অনন্য প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলতে যাচ্ছে।

স্বনামধন্য লেখক এবং গবেষক ড. গোলাম মুরশিদ, যুক্ত হয়েছিলেন লণ্ডন থেকে। তিনি তাঁর সংক্ষিপ্ত অনুভূতিতে প্রভা অরোরার উদ্বোধন দেখে তিনি আনন্দ প্রকাশ করেন এবং এর সাফল্য কামনা করেন।

স্বনামধন্য অর্থনীতিবিদ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ তাঁর বক্তব্যে বলেন, ঐতিহ্যগতভাবে কস্ট বেনিফিট এনালাইসিস এবং পরিবেশগত ক্ষতির যে কস্ট ডিসকাউন্টিং পদ্ধতি সেটি ভুল এবং আমাদের এটি করার কোনো নৈতিক অধিকার নেই, যেহেতু আমরা পরবর্তী প্রজন্মকেও প্রভাবিত করছি।

বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ারের অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান তাঁর বক্তব্যে প্রাকৃতিক অবকাঠামো সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। একইসাথে প্রাকৃতিক ও অর্থনৈতিক/মানবসৃষ্ট অবকাঠামোর মধ্যে ভারসাম্য রাখার আহ্বান জানান তিনি। এছাড়া তিনি প্রভা অরোরাকে গ্রিন ফাইন্যান্স এবং গ্রীন প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করারও পরামর্শ দেন।

ইমেরিটাস অধ্যাপক ও স্বনামধন্য কৃষি অর্থনীতিবিদ ডা. এম এ সাত্তার মণ্ডল তাঁর বক্তব্যে প্রভা অরোরাকে মানব সম্পদে বিনিয়োগ করতে অনুপ্রাণিত করেন, বিশেষ করে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে, কারণ তাদের ইতিবাচক মানসিকতা রয়েছে এবং তারা ভবিষ্যতে চেইঞ্জ মেকার হিসেবে কাজ করতে পারে।

থাইল্যান্ড থেকে যুক্ত হয়েছিলেন উন্নয়ন ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ এবং এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি এর ভিজিটিং প্রফেসর ডা. ফাইজ শাহ। তিনি বলেন, নেতিবাচক গল্পের পরিবর্তে ইতিবাচক আশা এবং সুযোগ দিয়ে কিশোর-কিশোরীদের অনুপ্রাণিত করা গুরুত্বপূর্ণ। তিনি জ্ঞান ভাগাভাগি, প্রশিক্ষণ এবং নেটওয়ার্কিং -এ প্রভা অরোরাকে সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননাপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব এবং স্বনামধন্য দূরদর্শন ব্যক্তিত্ব পঙ্কজ সাহা অংশ নিয়েছিলেন ভারত থেকে। তিনি নৈতিক মূল্যবোধের গুরুত্বের ওপর আলোকপাত করেন এবং পরিবেশ সচেতন তরুণ প্রজন্ম গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে প্রভা অরোরাকে অনুপ্রাণিত করেন। এ সময় তিনি পশ্চিমা বিশ্বের মত পরিবেশ এবং নৈতিক মূল্যবোধের বিষয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাজ অনুসরণ করারও পরামর্শ দেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান ড. নুরুল ইসলাম নাজেম বলেন, ঢাকা শহরে সকল অভিবাসীদের এক পঞ্চমাংশের অভিবাসনের পেছনে জলবায়ু পরিবর্তনই প্রধান কারণ। তিনি বলেন, তরুণ প্রজন্মের পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয়ে আরো সুনির্দিষ্ট জ্ঞান থাকা প্রয়োজন এবং প্রভা অরোরা এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

অনুষ্ঠানে ওয়াটার এইডের আঞ্চলিক পরিচালক খায়রুল ইসলাম; অধ্যাপক ও স্বনামধন্য অনুবাদক ড. ফকরুল আলম; ইন্ডিয়া থেকে সেন্টার ফর এনভায়রমেন্ট এডুকেশনের সিনিয়র প্রোগ্রাম ডিরেক্টর মাধবী জোশি; ক্রেডিট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফোরামের নির্বাহী পরিচালক আবদুল আউয়াল; অস্ট্রিয়া থেকে স্বনামধন্য পরিবেশকর্মী অ্যামিনে অ্যাডেলনিয়া; মালয়েশিয়া থেকে নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ শফিউল্লাহ, ফিলিপাইন থেকে পরিবেশ সুরক্ষাকর্মী ল্যাইডেন পেড্রিনা; অস্ট্রেলিয়ান হাই কমিশনের প্রোগ্রাম ম্যানেজার এম নাহিল ইমামসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বরা অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া সারাদেশের প্রতিটি বিভাগ থেকে একদল টিনএজার ও ইয়াং এডাল্টরাও অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়েছিলেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ থাকে যে, অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রভা অরোরার বিশেষে উদ্যোগ ‘ওয়ান মিনিট সামারি’, প্রভা অরোরার প্রথম বুলেটিন- ‘উদীয়মান সূর্যের আলো’ এবং পরিবেশসম্মত সামগ্রীর প্ল্যাটফর্মের বিশেষ পণ্য ‘প্রটেকটর’-এর বিশেষ ভিডিও প্রদর্শন করা হয়।