জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত শুন্য আসনে জাসদ নেত্রী আফরোজা হক (রীনা)’র মনোনয়নপত্র দাখিল

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৩
0

জাতীয় সংসদে মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত ৫০টি আসনের ১টি শুন্য আসনের উপ-নির্বাচনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ মনোনীত ও ১৪ দল সমর্থিত প্রার্থী জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি, স্থায়ী কমিটির সদস্য, জাতীয় নারী জোটের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক আফরোজা হক (রীনা) আজ ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ মঙ্গলবার সকাল ১১ টায় আগারগাঁও নির্বাচন কমিশন ভবনে রিটার্নি অফিসারের কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি, সহ-সভাপতি এ কে এম রেজাউল করিম তানসেন এমপি, সহ-সভাপতি নুরুল আকতার, সহ-সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা শফি উদ্দিন মোল্লা, জাতীয় শ্রমিক জোট-বাংলাদেশ এর সভাপতি সাইফুজ্জামান বাদশা, জাসদের সহ-সভাপতি উম্মে হাসান ঝলমল, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আলীম স্বপন ও সৈয়দ শফিকুল ইসলাম মিন্টু, দফতর সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন, সহ-দফতর সম্পাদক ইঞ্জি: হারুন-অর-রশিদ সুমন, তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক কাজী সালমা সুলতানা, নারী বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দা শামীমা সুলতানা হ্যাপী, জাতীয় যুব জোটের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ সামছুল ইসলাম সুমন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (ন-মা) কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি রাশিদুল হক ননী, সাধারণ সম্পাদক মাসুদ আহাম্মেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান আজিজ জনি, সাংস্কৃতিক সম্পাদক মিঠুন চক্রবর্তী, ঢাকা জেলা জাসদের সহ-সভাপতি আইয়ূব আলী ও সাংগঠনিক সম্পাদক উত্তম দাস, নারী নেত্রী নার্গিস আক্তার নিলা, শেখ শাহনাজ, সানজিদা সুলতানা অন্তরা, সায়মা খাতুন প্রমূখ।

আফরোজা হক (রীনা)’র সংক্ষিপ্ত রাজনৈতিক জীবনবৃত্তান্ত
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির সহ-সভাপতি, স্থায়ী কমিটির সদস্য, জাতীয় নারী জোটের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক, পেশাজীবী নারী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক, পল্লী বাউল উন্নয়ন সংস্থার উপদেষ্টা, বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরাম-বিআইজিএফ (BIGF) এর নির্বাহী কমিটির সদস্য, তথ্য ও যোগাযোগ বিষয়ক শিল্প-বাণিজ্য খাতের একজন উদ্যোক্তা ও শম্ কমিউনিকেশন্স লিঃ এর কর্ণধার।
তবে পরিচয় ছাপিয়ে তিনি একজন ৫৪ বছরের পোড়খাওয়া সার্বক্ষনিক রাজনৈতিক কর্মী, রাজনৈতিক নেতা।

আফরোজা হক (রীনা) ১৯৬৯ সালে সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে ১৯৬৯ সালে ইডেন কলেজে বাংলা বিভাগে স্নাতক সম্মান শ্রেনীতে ভর্তি হন এবং পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হন। তিনি ১৯৬৯ সালে ইডেন কলেজ ছাত্রী সংসদ নির্বাচনে ছাত্রলীগ মনোনীত প্যানেল থেকে সমাজসেবা সম্পাদক পদে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন।

তিনি বাঙালী জাতীয়তাবাদী সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি পর্বে একজন সক্রিয় কর্মী ও সংগঠক হিসাবে ভূমিকা পালন করেন।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর ক্র্যাকডাউনের পর ছাত্রলীগের নেতাদের নির্দেশে তিনি সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে না গিয়ে দেশের অভ্যন্তরেই মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেন। তিনি ঢাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা, সমন্বয় করা, নেটওয়ার্ক বজায় রাখা, তাদের সেল্টার দেয়া, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ঔষধ ও অর্থ সংগ্রহ করা, অস্ত্র সামলে রাখার মত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী দেশ স্বাধীন হবার পর মহান মুক্তিযুদ্ধে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা এবং পুনর্বাসনের জন্য যুদ্ধোত্তর আর্তসেবা সমিতি নামে সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন। অনেক আহত মুক্তিযোদ্ধাদের উন্নত চিকিৎসা ও অঙ্গ সংযোজনের জন্য জার্মানি পাঠানোর ব্যবস্থা করেছিলেন। ঢাকার মোহাম্মদপুরে মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন কেন্দ্র সেই সংগঠনেরই ফসল।

১৯৭২ সালে সদ্যস্বাধীন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠন এবং মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনায় উপনিবেশিক আমলের রাষ্ট্র প্রশাসন ব্যবস্থা ও পুঁজিবাদী ব্যবস্থার আমুল বৈপ্লবিক পরিবর্তন করার জন্য মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সকল শক্তির সমন্বয়ে বিপ্লবী জাতীয় সরকার গঠন করার বিষয়ে তৎকালীন ছাত্রলীগের মধ্যে রাজনৈতিক মতাদর্শগত পার্থক্য ঘটলে তিনি বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রপন্থী ছাত্রলীগে সক্রিয় হন এবং ছাত্রলীগ ইডেন কলেজ শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।

ছাত্র জীবনশেষে তিনি জাসদ রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে অবতীর্ণ হন এবং সমাজ বদল তথা সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার বিপ্লবী সংগ্রামে নিবেদিত হন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে খুনি মোস্তাক ক্ষমতা দখল করলে খুনি মোস্তাকের অবৈধ শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী সংগ্রামে অবতীর্ন হন। তিনি ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর ঐতিহাসিক সিপাহী জনতার অভ্যুত্থানে ঢাকা শহরে অভ্যুত্থানের নেতা-সংগঠক ও অভ্যুত্থানকারী সৈনিকদের সাথে যোগাযোগ, সমন্বয় ও নেটওয়ার্কিং এর কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। জেনারেল জিয়া সিপাহীদের সাথে বেঈমানি করে নিজে ক্ষমতা কুক্ষিগত করলে তিনি জিয়ার সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী প্রতিরোধ সংগ্রামে অবতীর্ন হন। জিয়া জাসদের নেতাদের গ্রেফতার করে জাসদের উপর ব্যাপক রাষ্ট্রীয় দমন পীরণ চালালে বিপর্যস্থ জাসদের সাংগঠনিক নেটওয়ার্ক ধরে রাখায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। জিয়ার দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জাসদ এবং জাসদের উদ্যোগে আওয়ামী লীগ, সিপিবিসহ ১০ দলীয় ঐক্য জোটের আন্দোলনে ভূমিকা রাখেন।

১৯৮২ সালে এরশাদের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সূচনা থেকে ১৯৯০ ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

তিনি ১৯৯২ সালে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গণআদালত গঠন ও গণআদালতের রায় বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।

২০০১ সালে বিএনপি জামাত ক্ষমতায় এসে দুঃশাসন চাপিয়ে দিলে এবং রাষ্ট্রীয় মদদে তালিবানী উত্থান ঘটালে তিনি জাসদের পক্ষ থেকে সূচিত আন্দোলন এবং পরবর্তীতে ১৪ দলের নেতৃত্বে আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।

বছরের পর বছর রাজনীতিতে সার্বক্ষনিকভাবে যুক্ত থাকলেও দলের আনুষ্ঠানিক পদ পদবি গ্রহণে তার তেমন কোনো আগ্রহ ছিল না। পদে না থেকে কাজ করতে তিনি আগ্রহী ছিলেন ও স্বাচ্ছন্দবোধ করতেন। ১৯৯৮ সালে জাসদের কাউন্সিলে প্রথমবারের মত তাকে জাসদ কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির সদস্যপদ গ্রহণে সম্মত করা যায়। পরবর্তীতে অনুষ্ঠিত কাউন্সিলগুলোতে তিনি সদস্য, নারী বিষয়ক সম্পাদক, সহ-সভাপতি হিসাবে নির্বাচিত হন। সর্বশেষ ২০২০ সালের কাউন্সিলে তিনি সহ-সভাপতি ও স্থায়ী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ২০০৩ সাল থেকে জাতীয় নারী জোটের আহ্বায়ক এবং ২০০৪ সাল থেকে পেশাজীবী নারী সমাজের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।

আফরোজা হক রীনা ১৯৫১ সালের ৫ অক্টোবর ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জে জন্মগ্রহন করেন। তার পিতা জনাব এ বি এম ইউনুস আলী নবাবগঞ্জ উপজেলা ও ঢাকা শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, সমাজসেবক ও ক্রীড়ানুরাগী ছিলেন। মাতা বেগম সুফিয়া আলী। তিনি ১৯৭৫ সালে তার রাজনৈতিক সংগ্রামে সহযোদ্ধা হাসানুল হক ইনুর সাথে রাজনৈতিক বন্ধনের সাথে সাথে বিবাহ বন্ধনেও আবদ্ধ হন। তাদের একমাত্র পুত্র শমিত আশফাকুল হক কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার এবং তার মায়ের প্রতিষ্ঠিত তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিষ্ঠান শম্ কমিউনিকেশন্স লিঃ এর পরিচালক। পুত্রবধু আনিকা ফারহানা চিকিৎসক। তাদের ইথান নামে নাতি ও লক্ষ্মী নামে নাতনি আছে।

রাজনীতির পাশাপাশি নারী আন্দোলনে যুক্ত থাকলেও তিনি ২০০০ সালে জাপান সরকারের স্কলারশীপ নিয়ে আইটি ম্যানেজমেন্টের উপর ডিপ্লোমা (Diploma-in-IT Management Yokohoma, Japan (AOTS Scholarship) করেছেন। তিনি আন্তর্জাতিক এনজিও Help Age এর পক্ষ থেকে বাংলাদেশের বয়স্ক নারীদের উপর Situation of Older Women in Bangladesh শিরোনামে একটি গবেষনা কর্ম সম্পন্ন করেছেন।