জাতীয় পরিচয় পত্রে মুক্তিযোদ্ধা বাবার জন্মের আগে তিন সন্তানের জন্ম : দুই বছর থেকে সন্মানী ভাতা বন্ধ

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২২
0

ভূরুঙ্গামারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধিঃ
কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে জাতীয় পরিচয় পত্রে এক বীর মুক্তিযোদ্ধা বাবার জন্মের আগে তিন সন্তানের জন্ম হয়েছে। এমন ঘটনা ঘটেছে উপজেলার চরভূরঙ্গামারী ইউনিয়নে। এমনটি দেখা গেছে ওই বীর মুক্তিযোদ্ধার তিন সন্তানের জাতীয় পরিচয় পত্রে। বয়স জটিলতার কারনে ওই বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্মানী ভাতা বন্ধ প্রায় দু’বছর ধরে।
পরিবারের সদস্যদের দাবী জন্ম তারিখ সংশোধনের জন্য দ্বাঁরে দ্বাঁরে ঘুরেও সুরহা না পেয়ে অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় গত ৪ ফেব্রুয়ারি মৃত্যু বরণ করেন ৯৪ বয়সী বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলী।

তথ‍্য অনুসন্ধানে দেখা যায়,উপজেলার জেলার ভূরুঙ্গমারী উপজেলার চরভূরুঙ্গামারী ইউনিয়নের চাটামপাড়া গ্রামের মৃত: বাবন শেখের পুত্র মরহুম বীরমুক্তিযোদ্ধা আকবর আলী। তিনি ৪৩ বছর বয়সে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। ওই সময় তিনি বিবাহিত ছিলেন। তার ৫ ছেলে ও ২ কন‍্যা সন্তানের মধ্যে যুদ্ধের আগে তিন সন্তান জন্ম গ্রহণ করেছিল। তার মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতীয় তালিকা ১৭ নং বই ৪০১৪৭ ক্রমিক,লাল মুক্তিবার্তায়-৩১৬০৪০৫২০ ক্রমিক এবং ২০০৫ সালের ২১ মে বেসামরিক গেজেট ৩৭৯১ পৃষ্ঠায় গেজেট ১০৬৪ নং এ তার নাম রয়েছে। তিনি ২০০৮ সালের ১অক্টোবর হতে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পেয়ে আসছিলেন। ২০২০সালে মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্য অনলাইনে পূরণ করতে গিয়ে তিনি জন্ম তারিখের ত্রুটির কারণে তার ভাতা বন্ধ হয়ে যায়।

ওই মুক্তিযোদ্ধার জন্ম সনদ অনুযায়ী তার বয়স ১৯২৮সালের ১১ আগষ্ট। কিন্তুু ২০০৮সালে জাতীয় পরিচয় পত্রে তার বয়স দেখানো হয়েছে ১৯৭১সালের ১০মে। অথচ তার বড় ছেলে আমির হোসেনের জাতীয় পরিচয় পত্রে জন্ম তারিখ ১৯৬০ সালের ২ মার্চ ছোট ছেলে দেলোয়ার হোসেনের জন্মতারিখ ১৯৫৫ সালের ১ অক্টোবর এবং মেয়ে ছমিরন বেগমের জন্মতারিখ ১৯৫২ সালের ১০ জানুয়ারি। অর্থাৎ স্বাধীনতার আগে যে তিন সন্তান জন্ম নিয়েছিল সেই সন্তানের বয়স ওই মুক্তিযোদ্ধার বয়সের চেয়ে বেশি। অর্থাৎ বাবার জন্মের আগে সন্তানের জন্ম হয়েছে।
জাতীয় পরিচয় পত্রের এমন ভূলের কারণে প্রায় দু’বছর থেকে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বন্ধ আছে। জন্ম তারিখ সংশোধনের জন্য নির্বাচন অফিসসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অফিসে ঘুরেও কোন লাভ হয়নি আকবর আলীর সন্তানদের। জন্ম তারিখ সংশোধন হবার আগেই বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলী গত ৪ ফেব্রুয়ারি মৃত্যু বরণ করেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা হযরত আলী বলেন,আমিসহ আকবর আলী,লস্কর আলী জেঠাতো ভাই। তিনজনই যুদ্ধ করেছি। মুক্তিযোদ্ধা ভাতাও পেয়েছি। কিন্তু হঠাৎ ভোটার আইডির সমস্যা হওয়ায় বড়ভাই আকবর আলীর ভাতা বন্ধ হয়ে যায়।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলীর স্ত্রী সুফিয়া বেওয়া বলেন,ভাতা বন্ধ হবার পর থেকে উনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। টাকার অভাবে চিকিৎসাও ঠিকমত করতে পারলাম না। অসুস্থতার কারণে উনি মইরাই গেল। আমরা অফিস-আদালতে অনেক দৌঁড়াইছি। কেউ সারা দেয় নাই।

বড় ছেলে আমির হোসেন বলেন,জাতীয় পরিচয় পত্র করার সময় বাবার বয়স দিছে ১৯৭১সাল। জাতীয় পরিচয় পত্রে আমাদের ভাই-বোনদের অনেকের বয়স তুলে দিছে ১৯৫২, ১৯৫৫,ও ১৯৬০।এমন অনেক সমস্যা করছে। এই জন্ম তারিখ ঠিক করার জন্য যেখানেই গেছি খালি ট্যাহা-ট্যাহা করে। তাও আমগো বাবার জন্ম তারিখ ঠিক হয়নি। আমরা ব্যর্থ হয়া গেছি গা।

বীর মুক্তিযোদ্ধার নাতি রঞ্জু মিয়া বলেন,২০০৮সালে আমার দাদী-দাদা এনআইডি করতে যায়। সেখানে তাদের বয়স ভুল তোলা হয়েছে। তারা তো মুর্খসুর্খ মানুষ। বয়স কি এগুলা বোঝে না। দাদার বয়স ঠিক করতে আমরা ঢাকা গেছি। সেখানে বলা হয় আমরা পারবো না এটা রংপুর থেকে ঠিক করবে। রংপুরে গেছি সেখানে আমরা পাত্তাই পায় না। বহু টাকা পয়সা খরচ করেও কোন লাভ হয়নি। দাদা মারাই গেল। তবু ভাতা চালু হয়নি আজও। এখন অন্যের ভুলের খেসারত আমাদেরকে দিতে হচ্ছে।

সাবেক ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের ডেপুটি কমান্ডার জামাল উদ্দিন বলেন,মরহুম আকবর আলী প্রকৃত একজন মুক্তিযোদ্ধা। তার বয়স ঠিক করার জন্য আমরা বহু চেষ্ঠা করেছি। কিন্তু কেন হইল না তার সঠিক কারণ আমরা জানি না। তাই সঠিক তদন্ত করে মৃত আকবর আলীর ভাতা পূণরায় চালুর ব‍্যাবস্হা করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবী জানান।

এই বিষয়ে জেলা নির্বাচন অফিসার জাহাঙ্গীর আলম রাকিব বলেন,বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলীর জন্ম তারিখ সংশোধনের আবেদনটি নিয়ম অনুযায়ী “গ” ক্যাটাগরি অন্তর্ভুক্ত। ইতোমধ্যে এই আবেদনটি নিষ্পত্তি করার জন্য প্রয়োজনীয় তদন্ত সম্পূন্ন করে প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে।
রংপুর আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা জিএম সাহাতাব উদ্দিন বলেন,আমি ঢাকায় মিটিং শেষ করে রংপুর ফিরছি। বিষয়টি আমার নজরে আসলে আমি যত দ্রুত সম্ভব সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করব।
###
আমিনুর রহমান বাবু