জাসদ দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে জাতীয় বীর কাজী আরেফ আহমেদসহ চার জাসদ নেতার ২৩তম হত্যা দিবস পালন

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২২
0

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ আজ ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ সকাল থেকে দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে ১৯৯৮ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের কালিদাসপুরে জাসদ আয়োজিত সন্ত্রাস বিরোধী জনসভায় চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত স্বাধীনতা সংগ্রাম-মুক্তিযুদ্ধ-সমাজ পরিবর্তনের বিপ্লবী আন্দোলন-যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধের আন্দোলনের পথিকৃত, জাসদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা জাতীয় বীর কাজী আরেফ আহমেদ, কুষ্টিয়া জেলা জাসদের তৎকালীন সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা লোকমান হোসেন, তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক বীরমুক্তিযোদ্ধা ইয়াকুব আলী, জাসদ নেতা ইসমাইল হোসেন তপসের ও শমসের মন্ডলের ২৩তম হত্যা দিবস পালন করে। এ সকল কর্মসূচির মধ্যে ছিল আজ বুধবার ভোর ৬ টায় জাসদ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন, সকাল ৯ টায় বীরমুক্তিযোদ্ধা কবরস্থানে শহীদ কাজী আরেফের সমাধিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং বিকাল ৪ টায় কর্নেল তাহের মিলনায়তনে আলোচনা সভা।

বিকাল ৪ টায় নগরীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে শহীদ কর্নেল তাহের মিলনায়তনে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ আলোচনা সভায় অনলাইনে যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন ১৪ দলের সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগ উপদেষ্টামণ্ডলির সদস্য আমীর হোসেন আমু এমপি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি সাম্যবাদী দল (মা-ল) এর সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া এবং সভাস্থলে বক্তব্য রাখেন জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি, সহ-সভাপতি ফজলুর রহমান বাবুল, বীরমুক্তিযোদ্ধা শহীদুল ইসলাম, বীরমুক্তিযোদ্ধা শফি উদ্দিন মোল্লা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাদের চৌধুরী, মোখলেছুর রহমান মুক্তাদির, রোকনুজ্জামান রোকন, শওকত রায়হান, ওবায়দুর রহমান চুন্নু, জাতীয় শ্রমিক জোট-বাংলাদেশ এর সভাপতি সাইফুজ্জামান বাদশা, তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এবং কাজী আরেফ আহমেদের ভ্রাতুস্পুত্রী কাজী সালমা সুলতানা, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (ন-মা) কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি রাশিদুল হক ননী প্রমূখ।

সভাপতির ভাষণে জনাব হাসানুল হক ইনু এমপি স্বাধীনতা সংগ্রাম-মুক্তিযুদ্ধ-সমাজ পরিবর্তনের বিপ্লবী সংগ্রামের পথিকৃত, জাসদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, সামরিকতন্ত্র-সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী প্রগতিশীল সংগ্রামের অগ্রসেনানী, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধের আন্দোলনের অগ্রসেনানী জাতীয় বীর প্রয়াত নেতা কাজী আরেফ আহমেদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, কাজী আরেফ আহমেদ আজীবন সাম্প্রদায়িকতা ও সামরিকতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। জনাব ইনু বলেন, সাম্প্রদায়িকতা ও সমারিকতন্ত্রÑএই দুই জমজ শত্রু এখনো ছদ্মবেশে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে শত্রুতা করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বিএনপি-জামাত এখনও সাম্প্রদায়িকতা ও সামরিকতন্ত্রÑ এই দুই জমজ শত্রুকে আঁকড়ে ধরেই বাংলাদেশ বিরোধী রাজনীতি করছে। বিএনপি-জামাতের নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিটাই ছদ্মবেশে রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িকতা ও সামরিকতন্ত্র ফিরিয়ে আনারই রাজনীতি। জনাব ইনু বলেন, কাজী আরেফের আদর্শকে লালন করেই সাম্প্রদায়িকতা ও সামরিকতন্ত্রÑ বাংলাদেশের এই জমজ শত্রুকে ফিরিয়ে আনার ছদ্মবেশী রাজনীতি প্রতিহত করতে হবে। জনাব ইনু বলেন, সাম্প্রদায়িকতা ও সামরিকতন্ত্র ফিরিয়ে আনার রাজনীতি মোকাবেলার ধারাতেই দুর্নীতি ও লুটপাটের সিন্ডিকেট ধ্বংস এবং বৈষম্য সৃষ্টির অর্থনীতি পাল্টে দিয়ে সমাজতন্ত্রের পথে যাওয়ার সংগ্রাম এগিয়ে নিতে হবে।

জনাব আমীর হোসেন আমু এমপি বলেন, কাজী আরেফ আহমেদ একজন প্রাজ্ঞ রাজনৈতিক নেতা ছিলেন। তিনি ৬ দফা এবং স্বাধীনতা আন্দোলনে অগ্রণী ও বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর তিনি জাসদীয় রাজনীতির উর্ধে উঠে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক শক্তির বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার জন্য স্বচ্ছ ও সুনির্দিষ্ট অবস্থান নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, কাজী আরেফ আহমেদ বেঁচে থাকলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনীতিতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারতেন। জনাব আমু বলেন, নিজেদের ভূল-ত্রুটি সংশোধন করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে আরও ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।

জনাব রাশেদ খান মেনন এমপি কাজী আরেফ আহমেদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, কাজী আরেফ আহমেদ হত্যাকাণ্ড জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক। তিনি বলেন, কাজী আরেফ হত্যাকাণ্ডের বিচারের মধ্য দিয়ে দেশে অন্তত একজন রাজনৈতিক নেতার হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়েছে। তিনি বলেন, কাজী আরেফ আহমেদ ৬০ দশকে স্বাধীনতার পক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি জগন্নাথ কলেজকে একটি সংগ্রামের শক্তি কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তুলেছিলেন। তিনি বলেন, কাজী আরেফের সবচেয়ে উজ্জ্বল ভূমিকা হচ্ছে ১৯৯২ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার গণআন্দোলন গঠনে বলিষ্ঠ ভূমিকা এবং গণআন্দোলন গড়ে তোলা। তিনি বলেন, কাজী আরেফ সারা জীবন ধর্মন্ধতার বিরুদ্ধে সারা জীবন আন্দোলন করেছেন। কাজী আরেফ প্রদর্শিত পথেই রাষ্ট্র ও রাজনীতির ধর্মীয়করণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

কমরেড দিলীপ বড়ুয়া কাজী আরেফ আহমেদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, কাজী আরেফ জনগণের শক্তির উপর নির্ভর করে রাজনীতি এগিয়ে নেয়ার রাজনৈতিক কৌশলে বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি বলেন, সরকারকে শুধুমাত্র প্রশাসনের উপর নির্ভর করে চলছে। কিন্তু প্রয়োজন ১৪ দলকে সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক কর্মসূচির ভিত্তিতে সংগঠিত করে রাজনীতির মাঠে শক্তি সমাবেশ ঘটানো।

জনাব শিরীন আখতার এমপি জাতীয় বীর, স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ বা স্বাধীনতার নিউক্লিয়াসের অন্যতম প্রতিষ্ঠা, বাঙালির জাতীয় মুক্তি আন্দোলন ও স্বাধীনতা সংগ্রামের অগ্রপথিক, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, জাসদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা শহীদ কাজী আরেফ আহমেদের ২৩তম হত্যা দিবসে তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, কাজী আরেফ আহমেদ বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, অসাম্প্রদায়িকতা ও প্রগতিশীলতার মশাল জ্বালিয়ে জাতিকে চলার পথ দেখিয়েছেন। তিনি বলেন, কাজী আরেফ আহমেদ তাঁর দ্বান্দ্বিকতার দার্শনিক জ্ঞান ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞার বাস্তব প্রয়োগ করে গণতান্ত্রিক-প্রগতিশীল আন্দোলনের মৌলিক রণনীতি ও রণকৌশল নির্ধারণ ও তা বাস্তবায়ন করেছিলেন। তিনি বলেন, তাঁর প্রণীত সকল ঐতিহাসিক মাইলফলক রণনীতি ও রণকৌশল এখনও জাতীয় রাজনীতিতে ধ্রুব তারার মত পথ দেখায়।

সমাধীতে শ্রদ্ধা নিবেদন
সকাল ৯ টায় বীরমুক্তিযোদ্ধা কবরস্থানে প্রয়াত নেতা কাজী আরেফ আহমেদের সমাধিতে জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটিসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে পুস্পমাল্য অর্পন করে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বীরমুক্তিযোদ্ধা কবরস্থান চত্ত্বরে ঢাকা মহানগর পশ্চিম জাসদের উদ্যোগে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। পশ্চিম জাসদের সভাপতি মাইনুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি, ঢাকা-১৪ আসনের সংসদ সদস্য আগা খান মিন্টু, জাসদের সহ-সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা শফি উদ্দিন মোল্লা, জাতীয় শ্রমিক জোট-বাংলাদেশ এর সভাপতি সাইফুজ্জামান বাদশা, জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ নুরুন্নবী, তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এবং কাজী আরেফ আহমেদের ভ্রাতুস্পুত্রী কাজী সালমা সুলতানা, সদস্য মফিজুর রহমান বাবুল, যুব জোটের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ সামছুল ইসলাম সুমন, পশ্চিম জাসদের সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রাজা প্রমূখ।


কাজী আরেফ ফাউন্ডেশনের আলোচনা সভা
সকাল ১১ টায় কাজী আরেফ আহমেদ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে কে.এম দাস লেনে শহীদ কাজী আরেফ আহমেদ আইডিয়াল হাই স্কুল চত্ত্বরে কাজী আরেফ আহমেদ স্মরণে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। কাজী আরেফ আহমেদের ভাতা কাজী মাসুদ আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি এবং বিশেষ অতিথি হিসাবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী বক্তব্য রাখেন। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ পূর্ব জাসদের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা শহীদুল ইসলাম, উত্তর জাসদের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা শফি উদ্দিন মোল্লা, তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এবং কাজী আরেফ আহমেদের ভ্রাতুস্পুত্রী কাজী সালমা সুলতানা, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ মহি, ছাত্রলীগ (ন-মা) সভাপতি রাশিদুল হক ননীসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ, জাসদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, নারী সংগঠন, যুব সংগঠন, ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।