জিলহজের ১০ দিন করণীয়

আপডেট: জুন ১৯, ২০২৩
0

দামি একটি মাস হলো জিলহজ। কারণ এ মাসেই সম্পাদিত হয় ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ দু’টি বিধান- হজ ও কোরবানি। আর এই দুই আমলেই নিহিত আছে, ইবরাহিম আ:-এর ঈমান ও সমর্পণের বহু নিদর্শনাবলি, যাতে উম্মাহর জন্য রয়েছে শিক্ষা গ্রহণের বহু আদর্শ।

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘তোমাদের জন্য ইবরাহিম ও তার অনুসারীদের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ। যখন তারা তাদের সম্প্রদায়কে বলেছিল, তোমাদের সাথে এবং তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যার ইবাদত করো, তার সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা তোমাদের (আকিদা-বিশ্বাস) অস্বীকার করি। আমাদের ও তোমাদের মধ্যে চিরকালের জন্য শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি হয়ে গেছে। যতক্ষণ না তোমরা এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে।’ (সূরা মুমতাহিনা-৬০)

জিলহজ শ্রেষ্ঠ মাস : চারটি মাস আল্লাহর কাছে সবচেয়ে সম্মানিত, আর জিলহজ সম্মানিত চার মাসের শ্রেষ্ঠ। তিনটি মাস ধারাবাহিক- জিলকদ, জিলহজ, মুহাররম। আরেকটি হলো রজব, যা জুমাদাল আখিরাহ ও শাবানের মাঝের মাস। বর্ণিত হয়েছে- ‘জেনে রাখো! সবচেয়ে সম্মানিত মাস হলো, তোমাদের এ মাস (জিলহজ)। (সুনানে ইবনে মাজাহ-৩৯৩১)
নেক আমলের ১০ দিন : আর এ মাসের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট ও ফজিলতপূর্ণ সময় হলো ‘আশারায়ে জিলহজ’ অর্থাৎ- জিলহজ মাসের প্রথম দশক। কারণ জিলহজের প্রথম ১০ দিনকে আল্লাহ তায়ালা বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করেছেন। প্রিয় নবীজী সা: এই ১০ দিনের ইবাদতকে ‘অধিক প্রিয়’ আমল হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহর কাছে জিলহজের ১০ দিনের নেক আমলের চেয়ে অধিক প্রিয় অন্য কোনো দিনের আমল নেই। সুতরাং তোমরা এই দিনগুলোতে বেশি বেশি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার এবং আলহামদুলিল্লাহ পড়ো।’ (মুসনাদে আহমাদ-৫৪৪৬)

সাদৃশ্য হোক হাজীদের সাথে : ইহরাম বাঁধার পর হাজী সাহেবদের জন্য নখ-চুল কাটাসহ আরো কিছু বিষয় নিষেধ। কিন্তু যারা হজে যাননি, তাদের জন্য এ নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে জিলহজের প্রথম দশকে নখ-চুল না কাটার মাধ্যমে অন্যরাও সাদৃশ্য অবলম্বন করতে পারে হাজী সাহেবদের সাথে এবং লাভ করতে পারে বিশেষ ফজিলত। নবী করিম সা: বলেছেন, ‘আমাকে কোরবানির দিবসে ঈদ (পালনের) আদেশ করা হয়েছে, যা আল্লাহ এ উম্মতের জন্য নির্ধারণ করেছেন।’ এক সাহাবি আরজ করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! যদি আমার কাছে শুধু একটি মানিহা থাকে (অর্থাৎ অন্যের থেকে নেয়া দুগ্ধ দানকারী উটনী) আমি কি তা কোরবানি করব? নবী করিম সা: বললেন, ‘না, তবে তুমি চুল, নখ ও মোচ কাটবে এবং নাভির নিচের পশম পরিষ্কার করবে। এটিই আল্লাহর দরবারে তোমার পূর্ণ কোরবানি বলে গণ্য হবে।’ (সুনানে আবু দাউদ-২৭৮৯)

প্রথম ৯ দিন রোজা রাখা : রোজা আল্লাহর অনেক প্রিয় আমল। জিলহজের প্রথম ৯ দিন রোজা রাখার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। নবী করিম সা: নিজেও এই ৯ দিন রোজা রেখেছেন। অতএব যাদের পক্ষে সম্ভব হবে তারা যেন ৯টি রোজা রাখার প্রাণান্ত চেষ্টা করি। বর্ণিত হয়েছে- ‘রাসূলুল্লাহ সা: জিলহজের ৯টি দিবস রোজা রাখতেন।’ (সুনানে আবু দাউদ-২৪৩৭)
৯ জিলহজে রোজা : কারো পক্ষে যদি পুরো ৯ দিনই রোজা রাখা সম্ভব হয় তাহলে তো সোনায় সোহাগা। কিন্তু পুরো ৯ দিন যদি সম্ভব না হয়, ৯ জিলহজের রোজার ফজিলত থেকে যেন কেউ বঞ্চিত না হই। কারণ এ দিনের রোজার ফজিলত সম্পর্কে আবু কাতাদা রা: থেকে বর্ণিত হয়েছে- রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেন, ‘আরাফার দিনের (৯ জিলহজের) রোজার বিষয়ে আমি আল্লাহর কাছে প্রত্যাশা করি যে, (এর দ্বারা) আগের এক বছরের এবং পরের এক বছরের গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেবেন।’ (সহিহ মুসলিম-১১৬২)

এ দিনে বান্দার দিকে রবের রহমতের জোয়ার প্রবলবেগে উৎসারিত হয়। অসংখ্য বান্দাকে তিনি ক্ষমা করে থাকেন এ দিনে। হজরত আয়েশা রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেন, ‘আরাফার দিনের মতো আর কোনো দিন এত অধিক পরিমাণে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেয়া হয় না। আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার নিকটবর্তী হন এবং বান্দাদের নিয়ে ফেরেশতাদের কাছে গর্ব করেন। আল্লাহ বলেন- ‘কী চায় তারা?’ (সহিহ মুসলিম-১৩৪৮)

গুরুত্বপূর্ণ আমল : হজ এ মাসের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ আমল। সাথে সাথে ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান এবং মর্যাদাশীল ইবাদতও। ইসলামের মৌলিক পাঁচ ভিত্তির একটি এবং শাআইরুল ইসলামের অন্যততম প্রধান শিআর। অতএব হজ ফরজ হওয়ার পর তা পালনে যথাসাধ্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা চাই। হজের মতো ইবাদত আদায়ে গড়িমসি করা অন্তত মু’মিনের শান হতে পারে না।

মহিমান্বিত দিবস : জিলহজ মাসের সবচেয়ে মহিমান্বিত দিবস ১০ জিলহজ বা কোরবানির দিন। এ দিনটি আল্লাহর কাছে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ। মুসলিম উম্মাহ গোটা বিশ্বজুড়ে এ দিনে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি ও নৈকট্য হাছিলের জন্য পশু কোরবানি করে থাকে। এ কোরবানি কোনো আনুষ্ঠানিকতা নয়; বরং প্রকৃত রূপ হলো মনের গভীরে আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা; তাকওয়া নিয়ে প্রিয় বস্তু তাঁর নামে উৎসর্গ করা, যা মূলত স্রষ্টার উদ্দেশ্যে সৃষ্টির নজরানা।

লেখক : শিক্ষার্থী, উচ্চতর গবেষণা বিভাগ, শায়েখ জাকারিয়া ইসলামিক রিসার্র্চ সেন্টার, ঢাকা

নয়াদিগন্ত