জেন্ডারভিত্তিক হয়রানি ও সহিংসতা প্রতিরোধে আইন প্রণয়নের পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান

আপডেট: ডিসেম্বর ২৯, ২০২১
0
????????????????????????????????????

তারিখ: ২৯ ডিসেম্বর ২০২১


জেন্ডার প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ ও দি ডেইলি স্টার এর গোলটেবিল বৈঠক

কর্মস্থল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সকল ধরনের সহিংসতা ও যৌন নির্যাতন প্রতিরোধে আইন প্রণয়নের পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন বক্তারা। আজ ২৯ ডিসেম্বর ২০২১ (বুধবার) রাজধানীর ডেইলি স্টার সেন্টারের আজিমুর রহমান কনফারেন্স হলে জেন্ডার প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ ও দি ডেইলি স্টার এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত “জেন্ডারভিত্তিক হয়রানি ও সহিংসতা: প্রতিরোধে প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ” শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এ আহ্বান জানান।

শুধুমাত্র আইন প্রণয়ন করলেই হবে না সেটা কতটুকু কার্যকর সেটা দেখতে হবে উল্লেখ করে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিষ্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারি, এমপি বলেন, বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে হলে আগে আমাদের সুনাগরিক হতে হবে। সুনাগরিক না তৈরি করতে পারলে সমাজের বৈষম্য যেমন দূর করা যাবেনা তেমনি নারীর প্রতি হয়রানি ও সহিংসতাও বন্ধ করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন পারিবারিক সহিংসতা আইন একটি অত্যন্ত যুগোপযোগী আইন কিন্তু সেটা সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। তাই আইন প্রণয়নের পাশাপাশি সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। এসময় তিনি কর্মক্ষেত্রে ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হয়রানি ও সহিংসতা প্রতিরোধে আইন প্রণয়ন অত্যন্ত জরুরি বলে উল্লেখ করেন।

সভাপতির বক্তব্যে বিলস্ ভাইস চেয়ারম্যান ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য শিরীন আখতার, এমপি বলেন, নির্যাতন ও হয়রানি শুধু নারীর ক্ষেত্রেই হয় তা না। এটা পুরুষের ক্ষেত্রেও হয়ে থাকে। কর্মক্ষেত্রে ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হয়রানি প্রতিরোধ খসড়া আইনটি কিভাবে সরকারের মন্ত্রীসভা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া যায় সেটা নিয়ে কাজ করতে হবে। কমলা রঙ্গের একটি বিশ্ব গড়তে হলে সমাজের কোথায় কোথায় পরিবর্তন করতে হবে সেটা নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে।

নারীদের নারী হিসেবেই নয় একজন মানুষ হিসেবে দেখতে হবে উল্লেখ করে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য শামসুন্নাহার ভূঁইয়া, এমপি বলেন, আমাদের সন্তানদের শুধু লেখাপড়া করালেই হবে না তারা যেন নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন ৭২ এর সংবিধানেই নারীর অধিকারের কথা বলা হয়েছে কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসেও আমাদের নারীর অধিকার নিয়ে কথা বলতে হচ্ছে। তিনি হাইকোর্টের নির্দেশনার আলোকে প্রতিটি কর্মস্থল এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কমিটি গঠনে জোর দেওয়ার আহ্বান জানান।

স্বাগত বক্তব্যে বিলস্ মহাসচিব ও নির্বাহী পরিচালক নজরুল ইসলাম খান বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই আমরা শিল্প কারখানা বা এর বাহিরে যেসব নারী শ্রমিক কাজ করেন তাদের হয়রানি বন্ধে কাজ করছি। ইতিমধ্যে কিছু অগ্রগতি হয়েছে। একটি খসড়া আইন আইনমন্ত্রী’সহ সংশ্লিষ্টদের কাছে দেওয়া হয়েছে। কর্মক্ষেত্রে এবং কর্মক্ষেত্রের বাহিরে নারীর প্রতি যে সহিংসতা সেটা বন্ধে একটি কার্যকরী আইন প্রণয়ন অত্যন্ত জরুরী। আইন হলেই নারীর প্রতি সহিংসতা অনেকটা কমে আসবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

কর্মক্ষেত্রে হয়রানি ও সহিংসতা বন্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার কোন বিকল্প নাই উল্লেখ করে জাতীয় শ্রমিক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নূর কুতুব আলম মান্নান বলেন, বাংলাদেশে অনেক আইন আছে কিন্তু অনেক আইন সম্পর্কে আমরা জানি না। শুধু আইন প্রণয়ন করলেই হবে না সেটা সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলতে হবে।

শ্রমিকদের দেশের অর্থনৈতিক মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে উল্লেখ করে বিজেএমইএ পরিচালক আব্দুল্লাহিল রাকিব বলেন, শিল্প কারখানায় উৎপাদনমূখি কর্মপরিবেশ অত্যন্ত জরুরি। আমাদের যার যার দায়িত্ব যদি ঠিকমত পালন করলেই কাঙ্খিত গন্তব্যে পৌছানো সম্ভব বলে তিনি মন্তব্য করেন। এসময় তিনি আইএলও কনভেনশন ১৯০ অনুসমর্থনে

বৈঠকে অন্যান্য বক্তারা বলেন, নারীরা দেশে এবং দেশের বাইরে পুরুষের সাথে সমানভাবে শ্রম দিচ্ছে। নারীর ক্ষমতায়ন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতি প্রশংসাজনক। কিন্তু নারীরা এখনো সকল ক্ষেত্রে নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। বক্তারা বলেন, কর্মক্ষেত্র এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্যাতন ও হয়রানি প্রতিরোধে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। এসময় তারা আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) কর্তৃক প্রণীত কনভেশন ১৯০ “ইলেমিনেশন অব ভায়োলেন্স এন্ড হেরাসমেন্ট ইন দি ওয়ার্ল্ড অব ওয়ার্ক” অনুসমর্থনের আহ্বান জানান।

গোলটেবিল বৈঠকে জেন্ডার প্লাটফর্ম বাংলাদেশ এর সচিবালয়ের পক্ষে প্রতিবেদন উপস্থাপনে বিলস্ পরিচালক নাজমা ইয়াসমীন নারী নির্যাতন ও যৌন হয়রানীর সাম্প্রতিক তথ্যাবলী, সুরক্ষার জন্য জাতীয় আইন, নীতিমালা ও আন্তর্জাতিক মানদন্ড, বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগ, জেন্ডার প্লাটফর্ম বাংলাদেশ এর কার্যাবলী তুলে ধরেন। এ সময় তিনি মহামান্য হাইকোর্ট এর নির্দেশাবলীর কার্যকর বাস্তবায়ন; নারী নির্যাতন ও হয়রানী প্রতিরোধে আইন প্রনয়ন; আইএলও কনভেনশন-১৯০ অনুসমর্থনের আহ্বান জানান।

ডেইলি স্টারের প্রতিনিধি সামসুজ্জোহা সাজেম এর সঞ্চালনায় বৈঠকে আরো বক্তব্য রাখেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের উপ-পরিচালক সুস্মিতা পাইক, শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ) যুগ্ম সমন্বয়কারী কামরূল আহসান, গৃহশ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্কের ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়কারী আবুল হোসাইন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইন, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন, জাতীয় শ্রমিক জোট বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক নইমুল আহসান জুয়েল, আওয়াজ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক নাজমা আক্তার, কর্মজীবী নারীর প্রোগ্রাম ডিরেক্টর সানজিদা সুলতানা, বিলস্ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।