ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় কর্মরত শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে: অধ্যাপক হারুনুর রশিদ খান

আপডেট: অক্টোবর ১৩, ২০২২
0

নির্মাণ সেক্টরের নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় অনুষ্ঠিত

বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যাপক হারুনুর রশিদ খান বলেছেন, আমাদের দেশে নির্মাণ শ্রমিকরা প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে। শ্রম আইনে কর্মক্ষেত্রে নির্মাণ শ্রমিকদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা বলা হলেও বাস্তবে তা প্রতিফলিত হচ্ছে না। ফলে প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও নির্মাণ শ্রমিকরা হতাহত হচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় কর্মরত শ্রমিকদের নিরাপত্তা মালিক ও রাষ্ট্রকে নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি আজ রাজধানীর একটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন কর্তৃক আয়োজিত নির্মাণ সেক্টরের নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় কালে এসব কথা বলেন। ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আতিকুর রহমান-এর সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য রাখেন ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আলমগীর হোসাইন, আব্দুস সালাম, নির্মাণ সেক্টরের সভাপতি নুরুল আমিন, সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাসার, নির্মাণ শ্রমিক নেতা সাইফুল ইসলাম, আক্তার হোসেন, আসাদুল হক খান, আরজু মিয়া, শহীদুল্লাহ চৌধুরী, আব্দুল কাদির ভূইয়া, হোসাইন আহমেদ আকাশ, আবুবকর সিদ্দিক, নাজিম উদ্দিন, জাকারিয়া আহমেদ প্রমুখ।

অধ্যাপক হারুনুর রশিদ বলেন, করোনা ভাইরাস এদেশের শ্রমজীবী মানুষের জীবনে বড়ো দুর্দশা বয়ে এনেছে। দেশের মোট শ্রমশক্তির ৮৭ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত। প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরা প্রতিষ্ঠান থেকে কিছুটা সহযোগিতা পেলেও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরা সকল ধরনের সহযোগিতা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। দেশে নির্মাণ শ্রমিক প্রায় চল্লিশ লাখ। যারা দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করে। করোনার সময় নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকায় এই সকল শ্রমিকরা বেকার হয়ে গিয়েছিল। জীবন অতিবাহিত করতে তারা বিভিন্ন এনজিও থেকে চড়া সুদে ঋণ নিতে বাধ্য হয়েছে। যে ঋণ এখনো অনেকের পক্ষে পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের চরম ঊর্ধ্বগতি চলছে। এই বাজারে নির্মাণ শ্রমিকরা দৈনিক যা আয় করে তা দিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে চলা অসম্ভব। তাদের আয়ের বড়ো অংশ চলে যায় ঘর ভাড়া ও খাদ্য সামগ্রী কিনতে। ঋণ পরিশোধ ও সঞ্চয় করার মত কোন অর্থ তাদের হাতে থাকে না।

তিনি আরও বলেন, নির্মাণ শ্রমিকদের সংকট দূর করতে আমাদেরকে সম্মিলিত প্রয়াস চালাতে হবে। নির্মাণ শ্রমিকদের জন্য একটি বাস্তব সম্মত মজুরি কাঠামো গঠন করতে হবে। নির্মাণ শ্রমিকসহ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের জীবনমান উন্নত করার জন্য সর্বোপরি একটি বিকল্প শ্রম ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।

অধ্যাপক হারুনুর রশিদ বলেন, স্বাভাবিক ভাবেই নির্মাণ পেশা একটি ঝুঁকিপূর্ণ পেশা। উন্নত বিশ্বের দেশগুলো তাদের শ্রমিকদের জীবনের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। অন্যদিকে আমাদের দেশে কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার কোন বালাই নেই। কিছু কিছু কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার কথা বলা হলেও তা দুর্বল প্রকৃতির। ফলে প্রতিদিন অসংখ্য নির্মাণ শ্রমিক হতাহত হচ্ছে। একজন শ্রমিক নিহত বা আহত হলে একটি পরিবার পথে বসে যায়। আমরা সরকার ও মালিকদের প্রতি স্পষ্টভাষায় বলতে চাই কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকের নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিন। কোন কারণে শ্রমিক হতাহত হলে তাদেরকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান করুন। কর্মক্ষেত্রে নিহত, আহত ও পঙ্গুত্ববরণকারী শ্রমিককের পরিবারের ভরন-পোষণ, চিকিৎসার ব্যয়ভার এবং পুর্নবাসনের দায়িত্ব অবশ্যই মালিকপক্ষ ও রাষ্ট্রকে বহন করতে হবে।