টানা বৃষ্টিতে ভাসছে ধান ,ডুবলো কৃষকের ভাগ্য

আপডেট: মে ২১, ২০২২
0

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ
কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে টানা দুই সপ্তাহের বেশি দিনের বৃষ্টিতে পাকা ধান ক্ষেতে পানি জমে যাওয়ায় ইরি ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন চাষিরা। এর আগে টানা বৃষ্টিতে গম নিয়ে এভাবেই বিপাকে পড়েছিল গম চাষীরা। অনেক চাষী গম ঘরেই তুলতে পারেনি জমিতেই সব নষ্ট হয়ে গেছে। এখন আবার পাকা ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছে কৃষক। পর পর দুটি উঠতি ফসল চোখের সামনেই নষ্ট হয়ে যাওয়ায় দিশেহারা এখন কৃষকরা।

গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে ধানগাছ পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় পাকাধান নিয়ে উৎকন্ঠা আর আতঙ্কে আছে কৃষকরা। রোদ না থাকায় ধান শুকাতে না পারায় ধান থেকে চারা গজাচ্ছে। আবার অনেক কৃষক শ্রমিকের অভাবে পাকা ধান কাটতে পারছেনা। ইতোমধ‍্যে বৃষ্টির পানিতে অনেকের ধান তলিয়ে গেছে। এতে ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে উৎপাদিত খাদ্যের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি ম‍ৌসুমে উপজেলায় ১৬ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। সেখানে ১৬ হাজার ১৯৫ হেক্টর জমিতে ইরি -বোরো ধান আবাদ হয়েছে। যার মধ্যে হাইব্রীড ৮ হাজার ৭৬০ হেক্টর, উফসি ৭ হাজার ৪২৮ হেক্টর ও স্থানীয় জাতের ৭ হেক্টর জমিতে ধান চাষ করেছেন কৃষক। আর ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৮ হাজার ৪৯২.৯২ মেট্রিক টন।
চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছিল ।

এখন বোরো ধান কাটা মারায়ের ভরা মৌসুম, মাঠ থেকে ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করার কথা কৃষক-কৃষাণীদের। কিন্তু কৃষকের সেই ব‍্যস্ততা নেই, নেই কৃষকের মুখে হাসি। কৃষকের কপালে এখন দুশ্চিন্তার ভাঁজ। দুইমাসের ব‍্যাবধানে দুটি উঠতি ফসল এভাবে মার খেলে তারা কিভাবে পরিস্হিতি সামাল দিবে এ নিয়ে চিন্তায় কৃষকরা।

ধানের উপযুক্ত মূল্য না পাওয়া, বৈরী আবহাওয়া, চড়া দামেও কৃষি শ্রমিক সংকটের কারণে পাকা ধান নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ভূরুঙ্গামারী উপজেলার কৃষকেরা। উপজেলার হাট-বাজার গুলোতে বর্তমানে নতুন ধান প্রতিমণ ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা দরে ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে। এবার ইরি বোরো ধান চাষাবাদে লাভ তো দূরের কথা উৎপাদন খরচও ওঠবে না বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগী অনেক কৃষক। গমের পর ধান নিয়ে কৃষকের স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে।
উপজেলার পশ্চিমছাট গোপালপুর গ্রামের চাষী আল ইমরান রিজু বলেন, ধান কেটে বাড়িতে নিয়ে আসার পর গত সাত দিন থেকে টাকা বৃষ্টি ও রোদ না থাকায় ধান শুকাতে পারিনি। ফলে ধান থেকে চারাগাছ গজিয়েছে। জমির সব খর পঁচে গেছে।
পাইকেরছড়া ইউনিয়নের গছিডাঙ্গা গ্রামের কৃষক আব্দুল জলিল বলেন, এবার ৬ বিঘা জমিতে ধান লাগিয়েছি আমার সব ধান পানিতে ভাসছে ও দীর্ঘদিন পানির নীচে থাকায় ধান থেকে চারা বের হয়েছে। আমার সব শেষ। স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশী টাকা দিয়ে ধান কাটতে হচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ কোন ভাবেই উঠবে না।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের বাগভান্ডার গ্রামের কৃষক নাছির উদ্দিন জানান, ধানের বাম্পার ফলন হয়েছিল দেড় বিঘা জমিতে প্রায় ৩২ মণ ধান হওয়ার কথা কিন্তু টানা বৃষ্টিতে সব ধান নষ্ট হয়েগেছে। দেড় বিঘা জমির ধান ৫ হাজার ৫০০ টাকা চুক্তিতে কেটে এনেছি। কিন্তু ধান হয়েছে সাড়ে দশ মণ। এখন লোকসানের ঘানি টানতে হবে।
উপজেলার চরভূরুঙ্গামারী ইউনিয়নের কৃষক শফি উদ্দিন বলেন আমি সাড়ে পাঁচ বিঘা জমিতে ধান লাগিয়েছি কিন্তুু ধান কাটা শ্রমিক পাচ্ছিনা।ইতোমধ‍্যে আমার সাড়ে তিন বিঘা জমির ধান বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে। ধান যদি কাটতে না পারি তাহলে আমি সারা বছর আমি কি খেয়ে বাঁচব? তা আল্লাহই ভালো জানেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, আমরা শুরু থেকে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের খোঁজ খবর রাখছি। সময়মত সার কিটনাশক প্রয়োগসহ নানা পরামর্শ দেয়ায় উপজেলায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছিল । কিন্তুু প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে কৃষক কিছুটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
##//
২১.০৫.২০২২