টেকনাফ-কক্সবাজার বিজিবি’র পৃথক অভিযানে প্রায় সাড়ে ৩৩ কোটি টাকার ক্রিস্টাল মেথ আইস ও ইয়াবাসহ৩ জন আটক

আপডেট: জুন ১৬, ২০২২
0

বিজিবি’র টেকনাফ ব্যাটালিয়ন এবং কক্সবাজার ব্যাটালিয়ন কর্তৃক পৃথক পৃথক অভিযান পরিচালনা করে ৩৩ কোটি ২৭ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা মূল্যমানের ৪.৩১৫ কেজি ক্রিস্টাল মেথ আইস ও ৩,৯০,০০০ পিস ইয়াবাসহ ০৩ জন মাদক কারবারী আটক করেছে।

বর্তমান সরকারের মাদকের বিরুদ্ধে “জিরো টলারেন্স” নীতির যথাযথ বাস্তবায়নকল্পে মাঠ পর্যায়ে বিজিবি’র অভিযানিক কর্মকাণ্ড এবং গোয়েন্দা তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় টেকনাফ ব্যাটালিয়ন (২ বিজিবি) ও কক্সবাজার ব্যাটালিয়ন (৩৪ বিজিবি) কর্তৃক পরিচালিত পৃথক পৃথক অভিযানে ৩৩,২৭,৫০,০০০/- (তেত্রিশ কোটি সাতাশ লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকা মূল্যমানের ৪.৩১৫ কেজি ক্রিস্টাল মেথ আইস এবং ৩,৯০,০০০ পিস ইয়াবাসহ ০৩ জন মাদক কারবারীকে আটক করা হয়েছে।

গোপন সূত্রের ভিত্তিতে জানা যায় যে, ১৫ জুন ২০২২ তারিখ রাতে টেকনাফ ব্যাটালিয়ন (২ বিজিবি) এর অধীনস্থ হ্নীলা বিওপি’র দায়িত্বপূর্ণ বিআরএম-১৩ হতে আনুমানিক ১.৫ কিঃ মিঃ উত্তরে এমজি ব্যাংকার এলাকা দিয়ে মাদকের একটি বড় চালান বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে।

উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে টেকনাফ ব্যাটালিয়ন (২ বিজিবি) এর ব্যাটালিয়ন সদর এবং হ্নীলা বিওপি’র একটি চোরাচালান প্রতিরোধ টহলদল তাৎক্ষনিকভাবে বর্ণিত এলাকায় গমন করতঃ বেড়ীবাঁধের আঁড় নিয়ে গোপনে কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে। টহলদল রাতে ০৫ জন ব্যক্তিকে মায়ানমার হতে শূন্য লাইন অতিক্রম করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আসতে দেখে। তাৎক্ষণিকভাবে পূর্ব থেকেই কৌশলগত অবস্থানে থাকা বিজিবি টহলদল উক্ত ব্যক্তিদেরকে দেখা মাত্রই চ্যালেঞ্জ করে খুব দ্রুত তাদের দিকে অগ্রসর হয়। চোরাকারবারীরা বিজিবি’র উপস্থিতি অনুধাবন করা মাত্রই বিজিবি’র চ্যালেঞ্জকে উপেক্ষা করে একটি প্লাষ্টিকের বস্তা ফেলে দিয়ে পার্শ্ববর্তী গ্রামের দিকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। বিজিবি টহলদল উক্ত চোরাকারবারীদের পিছু ধাওয়া করতঃ আব্দুর রহমান (৩০) এবং মোহাম্মদ নূর (২৫) নামক ০২ জন চোরাকারবারীকে আটক করতে সক্ষম হয় এবং অপর ০৩ জন চোরাকারবারী ছত্রভংগ হয়ে রাতের অন্ধকারে পার্শ্ববর্তী গ্রামে পালিয়ে যায়। অতঃপর টহলদল চোরাকারবারীদের কাছে প্রাপ্ত প্লাস্টিকের বস্তার ভিতর হতে ৩,০০,০০,০০০/- (তিন কোটি) টাকা মূল্যমানের ১,০০,০০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট আটক করতে সক্ষম হয়।

পরবর্তীতে আটককৃত মাদক কারবারী মোহাম্মদ নূরের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অদ্য ১৬ জুন ২০২২ তারিখ আনুমানিক রাত ০২৩০ ঘটিকায় ব্যাটালিয়ন সদর হতে অধিনায়কের নেতৃত্বে একটি বিশেষ টহলদল হ্নীলা বিওপি’র দায়িত্বপূর্ণ বিআরএম-১৩ হতে আনুমানিক ৮০০ গজ উত্তরে শ্মশানঘাট এলাকায় গমন করতঃ তল্লাশী অভিযান পরিচালনা করে। উক্ত অভিযানে বেড়ীবাঁধের নিকটে পরিত্যক্ত একটি ছাপড়া ঘরের পার্শ্বে বিশেষভাবে লুকায়িত অবস্থায় একটি প্লাস্টিকের বস্তা উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত বস্তার ভিতর হতে ২১,৫৭,৫০,০০০/- (একুশ কোটি সাতান্ন লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকা মূল্যমানের ৪.৩১৫ কেজি ক্রিস্টাল মেথ আইস উদ্ধার করা হয়। আটককৃত মাদক কারবারীরা হলো -(১) আব্দুর রহমান (৩০), পিতা-মৃত কাদের বকস, মাতা-কালা বানু, গ্রাম-অবরাং, পোস্ট-হ্নীলা, থানা-টেকনাফ, জেলা-কক্সবাজার। এবং (২) মোহাম্মদ নুর (২৫), পিতা-আব্দুস সালাম, মাতা-ছবুরা খাতুন, গ্রাম-মৌলভীবাজার, পোস্ট-হ্নীলা, থানা-টেকনাফ, জেলা-কক্সবাজার।

উল্লেখ্য, আটককৃত ০২ জন মাদক কারবারীর বিরুদ্ধে জব্দকৃত ক্রিস্টাল মেথ আইস এবং ইয়াবা ট্যাবলেটসহ নিয়মিত মামলার মাধ্যমে টেকনাফ মডেল থানায় হস্তান্তর করার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

অপরদিকে, গত ১৪ জুন ২০২২ তারিখে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে কক্সবাজার ব্যাটালিয়ন (৩৪ বিজিবি) এর অধিনস্থ রেজুআমতলী বিওপির দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় জলিলের গোদা আম বাগান নামক স্থানে অভিযান পরিচালনা করে ০১ জন মাদক কারবারী মোঃ শফিউল্লাহ (৩০) পিতা-নবী হোসেন, কুতপালং এফডিএমএন ক্যাম্প-১, ব্লক বি/১৩, থানা উখিয়া, জেলা-কক্সবাজারকে ১১,৭০,০০০/- (এগার লক্ষ সত্তর হাজার) টাকা মূল্যমানের ৩,৯০০ (তিন হাজার নয়শত) পিস বার্মিজ ইয়াবাসহ আটক করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে আটককৃত আসামীর দেয়া তথ্যের ভিতিত্তে গত ১৫ জুন ২০২২ তারিখে ঘুমধুম বিওপি’র সীমান্ত এলাকায় বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে ৮,৫৮,৩০,০০০/- (আট কোটি আটান্ন লক্ষ ত্রিশ হাজার) টাকা মূল্যমানের ২,৮৬,১০০ (দুই লক্ষ ছিয়াশি হাজার একশত) পিস বার্মিজ ইয়াবাসহ সর্বমোট-৮,৭০,০০,০০০/- (আট কোটি সত্তর লক্ষ) টাকা মূল্যের ২,৯০,০০০ (দুই লক্ষ নব্বই হাজার) পিস বার্মিজ ইয়াবা উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। আটককৃত আসামীকে ইয়াবাসহ উখিয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, টেকনাফ ব্যাটালিয়ন (২ বিজিবি) এবং কক্সবাজার ব্যাটালিয়ন (৩৪ বিজিবি) এর দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় গত ০১ অক্টোবর ২০২১ হতে ১৬ জুন ২০২২ তারিখ পর্যন্ত মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে ২৮৪,৪৩,০৩,৯০০/- (দুইশত চুরাশি কোটি তেতাল্লিশ লক্ষ তিন হাজার নয়শত) টাকা মূল্যের ৯৪,৮১,০১৩ (চুরানব্বই লক্ষ একাশি হাজার তের) পিস বার্মিজ ইয়াবা এবং ২৬৩,৩১,৯০,০০০/- (দুইশত তেষট্টি কোটি একত্রিশ লক্ষ নব্বই হাজার) টাকা মূল্যের ৫২ কেজি ৬৬৩৮ গ্রাম ক্রিস্টাল মেথ (আইস)’সহ সর্বমোট ৫৪৭,৭৪,৯৩,৯০০/- (পাঁচশত সাতচল্লিশ কোটি চুয়াত্তর লক্ষ তিরানব্বই হাজার নয়শত) টাকা মূল্যের মাদকদ্রব্য এবং ৩৭৫ জন আসামী আটক করতে সক্ষম হয়েছে।