ট্রেনে আ’লীগ নাশকতা করে বিরোধী দলের উপর ক্র্যাকডাউনের অজুহাত সামনে এনেছে—–বিএনপি

আপডেট: জানুয়ারি ৭, ২০২৪
0

ট্রেনে আওয়ামী লীগ নাশকতা করে বিরোধী দলের উপর ক্র্যাকডাউনের অজুহাত সামনে এনেছে।
রোববার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে একথা বলা হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)- গত পরশু ঢাকায় একটি ট্রেনে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় চারজন নিরীহ মানুষ মারা যাওয়া এবং হাসপাতালে আরো অনেকের ভোগান্তির তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। রাষ্ট্রযন্ত্র আমাদের চলমান শান্তিপূর্ণ ও অহিংস আন্দোলনকে কলঙ্ক লেপন করার নিমিত্তে পূর্বপরিকল্পিত নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের নীলনকশা বাস্তবায়ন করে।’

এতে বলা হয়, ‘ঘটনার পরেই ক্রমবর্ধমান অভিযান এবং গ্রেফতার প্রমাণ করে যে- ধারাবাহিক পদ্ধতিগত দমন-পীড়ন জোরদার করার লক্ষ্যে পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ যৌথভাবে বিএনপিকে দোষারোপ করছে। এছাড়াও তারা অনিয়ম ও কারচুপির দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত পূর্বনির্ধারিত ফলাফলসহ তথাকথিত ডামি নির্বাচন থেকে বিশ্বব্যাপী মনোযোগ সরাতে চায়।’

আরো বলা হয়েছে, ‘এভাবেই ক্ষমতা আঁকড়ে ধরতে এবং অবৈধ ক্ষমতার উপর দখল বজায় রাখতে শেখ হাসিনার শাসনামল ২ হাজার ৭০০টিরও বেশি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, ৭০০টিরও বেশি জোরপূর্বক গুম এবং ৫০ লাখেরও বেশি গণতন্ত্রপন্থী মানুষের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের একটি সুস্পষ্ট রেকর্ডসহ অগ্নিসংযোগের ঘটনার অবতারণা করছে।’

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, আওয়ামী লীগের কারণে আরো অনেক হত্যা যুক্ত হতে পারে তাদের পূর্বের হাজার হাজার প্রাণনাশের ঘটনার সাথে। এদিকে বিএনপি প্রতিনিধিত্ব করে গণতন্ত্রকামী মানুষদের প্রতিদিনের আত্মোৎসর্গের বিয়োগান্তক পর্বের। যেহেতু তাদের বিকাশমান জীবন, স্বাধীনতা ও অধিকার সমর্পণ করার জন্য নিষ্ঠুর চাপ প্রয়োগ করা হয়। এই প্রেক্ষাপটে কিছু প্রশ্ন উঠে আসে:

(১) কোনো তদন্ত না করে বা প্রকৃত প্রমাণ উপস্থাপন না করে আপাতদৃষ্টিতে আ’লীগের সংগঠিত অপপ্রচার ছড়ানোর প্রচেষ্টার সাথে মিল রেখে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কিসের ভিত্তিতে তড়িঘড়ি করে বিরোধী দলকে দোষারোপ করছেন?

(২) বাংলাদেশের রেল অবকাঠামোতে কি প্রাথমিক নিরাপত্তা প্রোটোকল যেমন ধোঁয়া শনাক্তকরণ, ফায়ার অ্যালার্ম, নির্বাপক, সেন্সর সতর্কতা, সিসিটিভি ক্যামেরা ইত্যাদি নেই, নাকি সম্ভাব্য হতাহতের সংখ্যা বাড়াতে ইচ্ছাকৃতভাবে বন্ধ করা হয়েছিল?

(৩) যে চারটি বগি আগুনে পুড়ে গেছে সেখানে কি সত্যিই সুপারভাইজার ছিলেন এবং যখন আগুন আঘাত হানে ও ধীরে ধীরে একাধিক বগিতে ছড়িয়ে পড়ে তখন পদ্ধতি অনুসারে লোকোমাস্টারকে জানানোর জন্য তাদের মধ্যে কি কোনো যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল না?

(৪) সমগ্র রাষ্ট্রযন্ত্র প্রতিদিন নিজেদের গণতন্ত্রপন্থী বলে মিথ্যা দাবি করে আসছে যে- তারা নাকি গণতন্ত্রপন্থী বিরোধীদের কাছ থেকে নিরাপত্তা হুমকির সম্মুক্ষিণ হচ্ছে এবং সেই অনুযায়ী জোরালো নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে, তাহলে কেন ফায়ার সার্ভিস এত দেরি করে পৌঁছেছিল এবং আগুন নেভানো শুরু করতে এক ঘণ্টারও বেশি সময় নিয়েছে?

(৫) আ’লীগের গুন্ডারা যখন গণপরিবহনে অগ্নিসংযোগ করে এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো নিছক দর্শক হিসেবে কাজ করে, অপরাধীদের ঘটনাস্থল থেকে পালাতে দেয় এবং এইভাবে নীরব পৃষ্ঠপোষকতা প্রদর্শন করে, শুধু বিএনপিকে ফাঁদে ফেলার জন্য এই নৃশংসতাকে আইনি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে তখন সেটা কিসের ইঙ্গিত প্রদান করে?

বিএনপি বলেছে, ‘গণতান্ত্রিক দল এবং বাংলাদেশের জনগণ কর্তৃক দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রত্যাখ্যান করা এই নির্বাচন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন উপদলের মধ্যে নজিরবিহীন সহিংসতা, দ্বন্দ্ব এবং সংঘাতের সাক্ষী হয়েছে। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের ফলে একাধিক মৃত্যু দলটির সাংগঠনিক কাঠামোর প্রতিটি স্তরে তার সহিংস প্রকৃতিকে তুলে ধরে। গতকালের মাত্র দুটি উদাহরণই নির্বাচনপূর্ব আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ সহিংসতার চিত্র তুলে ধরে। বরিশালে এক সংবাদ সম্মেলনে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বলেছেন, বিএনপি কোনো অগ্নিসংযোগ বা ভাঙচুরের সাথে জড়িত নয়। তার মতে, অভ্যন্তরীণ কোন্দলে লিপ্ত বরিশালের সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর সমর্থকরা সব অগ্নিসংযোগের জন্য দায়ী। তিনি অতিরিক্ত বিবরণ প্রদান করে উল্লেখ করেন যে- বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা তাকে জানিয়েছে যে- এই সকল সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সব দায় বিএনপির উপর চাপানোর জন্য পুলিশের সহায়তায় তার বিরুদ্ধে থাকা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সংগঠিত করছে।

ফরিদপুরে আরেকটি সংবাদ সম্মেলনে আ’লীগ নেতা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী একে আজাদ মন্তব্য করেছেন যে- আ’লীগ প্রার্থী শামীম হক তার নির্বাচনী ক্যাম্পে অগ্নিসংযোগসহ একের পর এক নৃশংস হামলা চালিয়ে আতঙ্কিত পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন।

তিনি আরো অভিযোগ করেন, ‘পুলিশ ও প্রশাসন পক্ষপাতদুষ্ট এবং একতরফাভাবে আ’লীগ প্রার্থীকে সেবা দিচ্ছে। এই ধরনের শত শত উদাহরণ অনুরূপ মামলার সাথে অব্যাহত রয়েছে যেখানে আওয়ামী লীগ সারাদেশে আন্তঃদলীয় সংঘাতে মানুষের সম্পত্তিতে আগুন দেয়াসহ বাস, ট্রেন এবং পাবলিক প্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্য করে অগ্নিসংযোগ ঘটিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলী এবং আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ইতিহাস বিশ্লেষণ করে, আমরা জনগণের জীবন ও সম্পত্তির বিনিময়ে আওয়ামী লীগের ব্লেম গেমের হিংসাশ্রয়ী কৌশল প্রত্যক্ষ করছি। প্রথমে আ’লীগ নেতারা বিরোধীদের আসন্ন সহিংসতা সম্পর্কে সন্দেহজনক বক্তব্য দিয়ে সতর্কতা জারি করে এবং তারপর তাদের তথাকথিত সন্দেহকে বাস্তবে রূপ দিতে সেই বিশেষ হিংসাত্মক কাজটি করে এবং সর্বত্র বিএনপিকে দোষারোপ করে। মর্মান্তিক ট্রেন দুর্ঘটনার মাত্র দুই দিন আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সন্দেহজনক সুরে মন্তব্য করেছিলেন, ‘বিএনপি সহিংসতা এড়ানোর দাবি করলেও তাদের বক্তব্য বিশ্বাসযোগ্য নয় কারণ তারা প্রায়শই এক কথা বলে এবং করে অন্য। আমি তথ্য পেয়েছি যে- তারা কিছু ষড়যন্ত্র করছে।’ এই বিবৃতি প্রমাণ করে যে- শাসকগোষ্ঠীর নাশকতা আক্রমণ পূর্বপরিকল্পিত ছিল, এটি তার নৃশংস দমন-পীড়ন এবং বিএনপির বিরুদ্ধে সুচারু প্রচারণার ন্যায্যতা দেয়ার একটি উপায় হিসাবে কাজ করছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘বিরোধীদের বিরুদ্ধে তীব্র মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে অগ্নিসংযোগের হামলার সুস্পষ্ট সুবিধাভোগী হিসেবে আ’লীগ আবারো আবির্ভূত হয়েছে বলে জোরালো প্রমাণ রয়েছে। এই দলের সহিংস রাজনীতির ইতিহাস এবং নির্বাচন- পূর্ব সহিংসতার কথা বিবেচনা করে, আমাদের বিশ্বাস করার কারণ রয়েছে যে- এটি জনজীবনের মূল্যে ফ্যাসিবাদকে সংহত করার জন্য শাসনের সর্বশেষ প্রচেষ্টা। অতএব, আমরা জাতিসঙ্ঘ এবং আন্তর্জাতিক স্টেকহোল্ডারদের জড়িত করে একটি নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানাই।’