ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী লন্ডনে পেলেন “দেশমান্য” খেতাব

আপডেট: এপ্রিল ২, ২০২২
0


১ লা এপ্রিল,শুক্রবার,লন্ডন স্থানীয় সময় রাত ৯ টায়( লন্ডন)।:

মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বৃটেনের বাংলাদেশীরা অসামান্য ভূমিকা পালন করেছেন ।তারা লাখ লাখ পাউন্ড চাঁদা তুলে মুক্তিযুদ্ধের ফাণ্ডে দিয়েছেন । মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র কিনে দিয়েছেন ,শরণার্থীদের কাপড় চোপড় ও ত্রাণ সামগ্রী প্রদান করেছেন ।বাংলাদেশ সরকার তাদের কখনো ভুলতে পারেনা । তিনি জাতীয় সরকারে প্রবাসীদের প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করার জোর দাবী জানিয়ে বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে সংকট উত্তরণে জাতীয় সরকার গঠন ও তার অধীনে নির্বাচনের কোনো বিকল্প পথ খোলা নাই।

ডা: জাফরুল্লাহ তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশে চলমান সংকট উত্তরণে জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠার ও তার অধীনে অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের দাবী জানান। তিনি মুক্তিযুদ্ধে ও পরবর্তীতে বাংলাদেশের উন্নয়নে প্রবাসীদের ভূমিকার স্বীকৃতি প্রদান ও সকল ক্ষেত্রে তাদের মর্যাদা রক্ষার জোর রাখার আহ্বান জানান। হানাহানি আর দখলদারিত্ব কেউ চায়না। এই সরকার যে অন্যায় করে যে পরিস্থিতি তৈরী করেছে তাতে তাকে বিদায়ের রাস্তা তৈরী করে দিতে হবে। তিনি জাতীয় সরকারে বিএনপি ও আওয়ামীলীগের ২/৩ জন করে নেয়ার পাশাপাশি প্রবাসীদের থেকেও ২/৩ জনকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবী জানান। তিনি বলেন, প্রবাসীদের কারণেই আমাদের অর্থনীতি, উন্নয়ন আর সেই তাদের টাকা নিয়েই লুটপাট সবকিছু হচ্ছে। সুতরাং প্রবাসীদের প্রতিনিধি জাতীয় সরকারে থাকতেই হবে। তিনি দেশে দ্রব্য মূল্যের উর্ধগতি,ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন ও গণতান্ত্রিক দুরাবস্থার জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

১ লা এপ্রিল, শুক্রবার লন্ডন স্থানীয় সময় রাত ৯ টায় পূর্ব লণ্ডনে মাস হেলথ এওয়ারনেস সেন্টার কর্তৃক লণ্ডন এন্টার প্রাইজ একাডেমীতে ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সম্মানে আয়োজিত নাগরিক সম্বর্ধনা সভা ও সেমিনারে তিনি উপরোক্ত কথা বলেন । সংগঠনের চেয়ারম্যান কে এম আবুতাহের চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সাপ্তাহিক সুরমা সম্পাদক শামসুল আলম লিটনের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবীদ ড.হাসনাত এম হোসেন এমবিই ।অনুষ্ঠানে ‘গণস্বাস্থ্য মডেলে সবার জন্য স্বাস্হ্য সেবা :প্রবাসীদের ভূমিকা ও করনীয় ‘শীর্ষক এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয় ।সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিষ্ট এনাম চৌধুরী । সাপ্তাহিক সুরমা সম্পাদক শামসুল আলম লিটন, বার্তা সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম ফুলের তোড়া ও পত্রিকার বেশ কিছু কপি উপহার দেন । এছাড়া হরপ্পা প্রকাশনীর পক্ষ থেকে পিনাকী ভট্টাচার্যের “সং অব রেসিস্টেন্স ইন ডার্ক টাইমস” বইটি উপহার দেন প্রকাশক আহমেদ ময়েজ।

ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে ফুলের তোড়া উপহার দিয়ে বেশ কয়েকটি সংগঠনের পক্ষ থেকে শুভেছা জানানো হয়। এসময় বক্তব্য রাখেন -কমিউনিটি নেতা সিরাজুল হক সিরাজ, লণ্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি এমদাদুল হক চৌধুরী, সাংবাদিক শওকত মাহমুদ টিপু ,কাউন্সিলার ফয়জুর রহমান, বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল এসোসিয়েশনের পক্ষে ডা: গিয়াস উদ্দিন আহমদ ,সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন ,প্রবাসী অধিকার পরিষদের সভাপতি জামান আহমদ সিদ্দিকী, সাবেক শিক্ষিকা বেগম হোসনে আরা ,কমিউনিটি নেতা লোকমান উদ্দিন , পিস্ ফর বাংলাদেশের ডলার বিশ্বাস ,মাসুদুর রহমান, জাতীয় ঐক্যজোট ইউকে’র পক্ষে সাইফুর রহমান পারভেজ প্রমুখ । রেনেসাঁ সাহিত্য মজলিসের পক্ষ থেকে শিহাবুজ্জামান কামাল, “নিরাপদ বাংলাদেশ চাই” সংগঠনের প্রেসিডেন্ট মুসলিম খান ও রোখসানা হক তারিন, ফাইট ফর রাইট ইন্টারন্যাশনালের মুহাম্মদ তরিকুল ইসলাম ও আমিনুল ইসলাম, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম ইউকে’র প্রেসিডেন্ট ব্যারিস্টার আব্দুল মজিদ শাহজাহান ও ব্যারিস্টার হামিদুল হক আফিন্দি লিটন, সুনামগঞ্জের পাগলা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র হাসপাতালের পক্ষে বক্তব্য রাখেন মাহবুব রহমান। অনুষ্ঠানে হাসপাতালটির জন্য ফান্ড রাইজ করা হয়। ডা: জাফরুল্লাহর সম্মানে স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন কবি ও কলামিষ্ট শিহাবুজ্জামান কামাল।

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে লন্ডনে “দেশমান্য” খেতাবে ভূষিত:

সভায় বক্তারা -১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ কালীন সময়ে ও বাংলাদেশে স্বাস্হ্য সেবায় ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরীর ঐতিহাসিক ভূমিকার প্রশংসা করেন । বক্তারা বলেন -তিনি জাতির বিবেক, বাক স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলনে এক অতন্দ্র প্রহরী ।

সম্বর্ধনা সভায় সাপ্তাহিক সুরমা সম্পাদক ও ভয়েস ফর গ্লোবাল বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক পরিচালক শামসুল আলম লিটন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে প্রবাসীদের পক্ষ থেকে উক্ত নাগরিক সম্বর্ধনা সভা ও সেমিনারে ‘দেশমান্য ‘ খেতাবে ভূষিত করেন এবং সভায় উপস্থিত সকলে দেশমান্য খেতাবের প্রতি দাঁড়িয়ে করতালির মাধ্যমে তাঁদের সর্বাত্মক সমর্থন জানান।

নিন্ম উল্লেখিত বিষয়ের আলোকে লন্ডনে নাগরিক সম্বর্ধনা সভায় ‘দেশমান্য ‘ খেতাবে ভূষিত করেন।

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর পুরস্কার ও সম্মাননা:

জাফরুল্লাহ চৌধুরী (জন্ম ২৭ ডিসেম্বর ১৯৪১)। একজন বাংলাদেশি চিকিৎসক, জনস্বাস্থ্য সক্রিয়তাবাদী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং মুক্তিযোদ্ধা। তিনি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র নামক স্বাস্থ্য বিষয়ক এনজিওর প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৮২ সালে প্রবর্তিত বাংলাদেশের ‘জাতীয় ঔষধ নীতি’ ঘোষণার ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

মুক্তিযুদ্ধে অবদান:

বিলেতের রয়্যাল কলেজ অব সার্জনস-এ এফআরসিএস পড়াকালীন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে তিনি চূড়ান্ত পর্ব শেষ না-করে লন্ডন থেকে ভারতে ফিরে এসে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার নিমিত্তে আগরতলার মেলাঘরে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে গেরিলা প্রশিক্ষণ নেন এবং এরপরে ডা. এম এ মবিনের সাথে মিলে সেখানেই ৪৮০ শয্যাবিশিষ্ট “বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল” প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করেন।তিনি সেই স্বল্প সময়ের মধ্যে অনেক নারীকে প্রাথমিক স্বাস্থ্য জ্ঞান দান করেন যা দিয়ে তারা রোগীদের সেবা করতেন এবং তার এই অভূতপূর্ব সেবাপদ্ধতি পরে বিশ্ববিখ্যাত জার্নাল পেপার “ল্যানসেট”-এ প্রকাশিত হয়।
পুরস্কার ও সম্মাননা:

জরসংখা নিয়ন্ত্রেনের ক্ষেত্রে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি ১৯৭৭ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়াও তিনি ফিলিপাইন থেকে রামন ম্যাগসাইসাই (১৯৮৫) এবং সুইডেন থেকে বিকল্প নোবেল হিসাবে পরিচিত রাইট লাভলিহুড (১৯৯২), মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বার্কলি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ইন্টারন্যাশনাল হেলথ হিরো’ (২০০২) এবং মানবতার সেবার জন্য কানাডা থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি পেয়েছেন। নব্বই দশকে তাঁর লেখা বিশ্বে সফল স্বাস্থ্য কৌশল তৈরী উপর সাড়া জাগানো বই ‘The Politics Of Essential Drugs: The Makings Of A Successful Health Strategy: Lessons From Bangladesh by Zafrullah Chowdhury’। ২০২১ সালে আহমদ শরীফ স্মারক পুরস্কার পান। ১৯৮২ সালে প্রবর্তিত বাংলাদেশের ‘জাতীয় ঔষধ নীতি’ ঘোষণার ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন ও স্বাস্থ্য সেবায় যুগান্তকারী ভূমিকা রাখার জন্য ২০২২ সালে মার্চ মাসে ‘পল্লীবন্ধু স্বর্ন পদক’ লাভ করেন।
করোনাকালে তাঁর প্রতিষ্ঠিত গণস্বাস্থ্য সহয়তা কেন্দ্র সারাদেশে প্রায় ৪০ হাজার পরিবারকে খাদ্য সহয়তা দেন যা এখনো চলমান।। মহান রাব্বুল আলামিনের রহমতে তিনি নিজে করোনা আক্রান্ত হয়ে (জুন,জুলাই ২০২০ ইং) ২ মাস জটিল অবস্থা থেকে সুস্থ্য হয়ে আমাদের মাঝে করোনা বিজয়ী হিরো হিসাবে ফিরে আসেন।

“দেশমান্য” খেতাব :
সাপ্তাহিক সুরমা সম্পাদক শামসুল আলম লিটন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে প্রবাসীদের পক্ষ থেকে ‘দেশমান্য ‘ প্রদানের প্রস্তাবনা উত্থাপন করে বলেন, “উপমহাদেশের দেশগুলোতে বিখ্যাত লোকদেরকে ভালবেসে মানুষ কিছু খেতাব দিয়েছেন। যেমন: মহাত্মা গান্ধী, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস, শেরে বাংলা ফজলুল হক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মজলুম জননেতা ভাসানী, শহীদ জিয়াউর রহমান, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া।
বাংলাদেশ রাষ্ট্রপতিকে মহামান্য বলা হয় কারণ তার চেয়ে ঊর্ধ্বে মানার মতো কেউ নেই বলে ধরা হয়। এইরকম পদে ডাক্তার জাফরুল্লাহ চৌধুরীদের মত মানুষকেই বিবেকবান মানুষ সবসময় দেখতে চায় । আফসোসের বিষয় হল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে বাংলাদেশে যথেষ্ট ব্যবসা হলেও মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান ব্যতীত আর কোনো মুক্তিযোদ্ধা বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতির পদ অলংকৃত করেননি। যাই হোক, ডাক্তার জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে আমরা কখনো মহামান্য পদে দেখব কিনা জানিনা। যদিও জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্য থেকে তিনিই সবচাইতে যোগ্যতম ব্যক্তি। তবে সম্মান অর্জন দিকের দিক থেকে তিনি ইতিমধ্যেই দেশের সকল সাধারণ মানুষের, বিবেকবান মানুষের সম্মান ও মান্যতা অর্জন করেছেন। সেইজন্যে লন্ডনের আজকের মহান সংবর্ধনা অনুষ্ঠান থেকে, দেড় কোটি প্রবাসীদের পক্ষ থেকে,সাধারণ জনগণের পক্ষ থেকে, মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ীদের পক্ষ থেকে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে আমি নাগরকি সম্বর্ধনা সভায় উপস্থিত সভার পক্ষথেকে ‘দেশমান্য’ খেতাবে ভূষিত করিলাম। ‘দেশমান্য’ মানে হল যাকে দেশের সকল লোক মানে। একমাত্র তারাই তাকে মানে না যারা সীমান্তের ওপারের প্রভুদের দাসত্ব করে।
শামসুল আলম লিটন আরো বলেন, এখন থেকে যেকোনো সভা-সমাবেশে দেশে এবং প্রবাসে সকলেই তাঁকে যেন ‘দেশমান্য ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী’ বলে সম্বোধন করেন সেই অনুরোধ করছি।
‘দেশমান্য’ ডাক্তার জাফরুল্লাহ চৌধুরী, আপনাকে জনতার পক্ষ থেকে হৃদয়ের সালাম”।