ডা. জোবায়দা রহমানের জন্মদিন আজ ১৮ জুন

আপডেট: জুন ১৮, ২০২৩
0

ডা. জোবায়দা রহমানের জন্মদিন আজ ১৮ জুন রবিবার। তিনি একাধারে একজন চিকিৎসক, সমাজসেবী ও কবি। চিকিৎসাশাস্ত্রের প্রতি তাঁর কৌতূহল শৈশব থেকেই। বাবার হাত ধরে শৈশবে বলতেন তিনি চিকিৎসক হবেন। জাতীয় বিজ্ঞানমেলায় কৈশোরে প্রথম হওয়া ডা. জুবাইদা বিজ্ঞানকে শিশু-কিশোরদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে তার পরম শ্রদ্ধেয় শ্বশুর শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্মৃতিতে গঠিত জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন (জেডআরএফ)-এর মাধ্যমেও চেষ্টা করছেন। তাঁর জন্মদিনে তিনি তাঁর পিতা রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী খানের স্মরণে প্রবর্তন করেছেন মাহবুব আলী খান স্মৃতি ট্রাস্ট।

ডাঃ জোবায়দা রহমান পারিবারিক এবং শ্বশুরকুলের পরিচয়ের বাইরে স্বীয় মেধা, মনন, কর্মদক্ষতা, সাহস, রুচি এবং ব্যক্তিত্ববোধ দিয়ে তাঁর আক্ষরিক নামের মতোই নিজেকে অনেক উঁচুতে নিয়ে গেছেন। নৌবাহিনীর সাবেক প্রধান, রিয়ার এডমিরাল মাহবুব আলী খানের কন্যা, মহান স্বাধীনতার ঘোষক, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং সাবেক তিন বারের প্রধানমন্ত্রী, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, দেশনায়ক তারেক রহমানের সহধর্মিণী ডাঃ জুবাইদা রহমান শিক্ষাজীবনে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ইতিহাসে ডিস্টিংশনসহ সর্বোচ্চ মার্কস পেয়ে এমবিবিএস পাশ করেছিলেন ।
ডাঃ জুবাইদা রহমান ইমপেরিয়াল কলেজ লন্ডন থেকে সর্বোচ্চ মার্কস পেয়ে মাস্টার্স অব কার্ডিওলজি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। চার বছরের মাস্টার্স অব কার্ডিওলজিতে (এমএসসি ইন কার্ডিওলজি) ডিস্টিংশনসহ শতকরা ৮৩ ভাগ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছিলেন যেখানে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং কমনওয়েলথ ভুক্ত দেশ, নাইজেরিয়া, চীনসহ মোট ৫৫টি দেশের ছাত্র-ছাত্রীরা অংশগ্রহণ করেছিলেন।
বিদেশে আয়েশী জীবনের হাতছানি উপেক্ষা করে দেশের অসহায় মানুষ কে সেবার মহান ব্রত নিয়ে ১৯৯৫ সালে বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে উন্নীত হয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চাকরী পেশা হিসেবে বেছে নেন ডাঃ জুবাইদা রহমান, কিন্তু শুধুমাত্র বৈবাহিক কারণে জিয়া পরিবারের সদস্য হওয়ায় বর্তমান ফ্যাসিষ্ট সরকারের রাজনৈতিক নিগ্রহের শিকার হয়েছিলেন সরকারী চাকরীচ্যুত হওয়ার মাধ্যমে।

১/১১ দুঃসময়ে দেশী বিদেশী আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে জিয়া পরিবারের উপর যখন অত্যাচারের খড়গ নেমে আসে তখন তিনি জিয়া পরিবারকে আঁকড়ে রাখেন , ঐ সময়ে অন্যায়ভাবে অত্যাচারিত নিজের স্বামী, দেবরের চিকিৎসায় অসাধারণ ভূমিকা রেখেছেন , সাথে সাথে অসুস্থ শ্বাশুড়ী বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার সামগ্রিক তদারকি করেছেন । তার অদম্য চেষ্টায় স্বামী তারেক রহমান আজ অনেকটা সুস্থ। শত সমস্যার ভিতরেও মা হিসেবে নিজ সন্তান জাইমা রহমানকে ব্যরিস্টার হিসেবে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন।

সমাজসেবার আকাঙ্ক্ষা তাঁর রন্ধ্রে রন্ধ্রে। বর্তমান বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দায় শিশু-কিশোররা জর্জরিত, উপেক্ষিত, সমাজে অবহেলিত, ক্ষুধার্ত মানুষের জন্যই কাজ করতে চান ডা. জুবাইদা। তাঁর জন্মদিনে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন ফুড ব্যাংকে খাদ্য বিতরণ করা হবে। পূর্বে সচ্ছল থাকা অনেক পরিবার যুক্তরাজ্যে বর্তমানে ফুড ব্যাংক ও বেবী ব্যাংকের মুখাপেক্ষী। বেবী ব্যাংকে শিশুদের প্রয়োজনীয় সামগ্রী পাওয়া যায়। যুক্তরাজ্যে তিনি বিভিন্ন চ্যারিটেবল সংস্থাকে সহায়তা করে থাকেন- তার মধ্যে ক্যান্সার রিসার্চ ও (Cancer Research, UK) ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশন (British Heart Foundation) ও রেড ক্রস (Red Cross)।
মাহবুব আলী খান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের মাধ্যমে তিনি আর্ত-মানবতার সেবা ও কার্ডিওয়াসকুলার রিসার্চ (Cardiovascular Research) উৎসাহিত করতে চান। যুক্তরাজ্যে হৃদরোগ বিষয়ক অসংখ্য কনফারেন্সে তিনি যোগদান করছেন। বিশ্বে আজ শতকোটি মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাদের জীবন বিপন্ন হচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে হৃদরোগের প্রকোপ ভয়াবহ। হৃদরোগ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য তিনি (জেডআরএফ)-এর মাধ্যমেও কাজ শুরু করবেন। রোগাক্রান্ত, অসহায়, নিপীড়িত মানুষের জন্যেই তাঁর চিত্ত সদা ব্যাকুল। বিশ্বে হৃদরোগের সচেতনতা সৃষ্টি ও গবেষণায় তিনি বর্তমানে মনোনিবেশ করছেন।
যুক্তরাজ্যের বিশ্বখ্যাত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও ইমপিরিয়াল কলেজ লন্ডনে অধ্যয়ন করা ডা. জুবাইদা দেশের অভিভাবক বঞ্চিত শিশু-কিশোরদের পাশে থাকেন সদা। তাঁর উদ্যোগে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের এতিমখানায় শিশু-কিশোরদের সহায়তা প্রদান ও উন্নত খাদ্য বিতরণ করা হয়। তিনি প্রতিনিয়ত তাদের লেখাপড়ার ও স্বাস্থ্যসেবার খোঁজ নেন। ধর্মীয় শিক্ষার প্রতিও তাঁর অগাধ অবদান, শিশু-কিশোরদের তিনি অনেক সময় পবিত্র কুরআন শরীফ ও হাদিস শরীফ উপহার দেন। বগুড়ায় অবস্থিত এতিমখানায় অন্ধ শিশু-কিশোরদের জন্য তিনি চক্ষু চিকিৎসা ও চশমার ব্যবস্থা করেন।


ব্যক্তিজীবনে ডা. জুবাইদা রহমান কবিতা লিখতে পছন্দ করেন। অতি শীঘ্রই তাঁর কবিতাসমগ্র প্রকাশিত হবে। জন্মদিনেও তিনি একটি কবিতা তাঁর পরম শ্রদ্ধেয় পিতা রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী খানের স্মরণে উৎসর্গ করেছেন।
বাবা কেন চলে গেলে এত আগে?
আজ জন্মদিনে বাবা তোমাকে স্মরণ করি,
মনে হয় চোখের সামনে দাঁড়িয়ে আছো তুমি,
বৃষ্টির দিনে জন্মেছি আমি,
তাই হয়তো অশ্রুসিক্ত হয়ে
এত আগে হারিয়েছি বাবাকে।
দুঃখ, কষ্ট, হাসি, আনন্দ,
ভেবেছিলাম সবই বলবো তোমাকে,
কিন্তু তুমি চলে গেলে এত আগে,
কিছুই বলতে পারলাম না তোমাকে।
কত স্বপ্ন, কত আশা, কত আকাক্সক্ষা আমাদের,
সবই থাকতো তোমাকে কেন্দ্র করে,
স্বপ্নগুলি ডানা মেলার এত আগে,
চলে গেলে তুমি আমাদের সকলকে রেখে।
মা শোনায় তোমার শ্রেষ্ঠত্বের গল্প,
স্বল্পভাষী ছিলে তুমি মনে পড়ে আমার,
কাজই ছিল তোমার পরিচয়, তোমার জীবন,
অসমাপ্ত কাজ রেখে এত আগে কেন চলে গেলে তুমি?
তবুও যেটুকু সময় তুমি কাছে ছিলে বাবা,
দিয়েছো জ্ঞান, ভালোবাসা, সুন্দর জীবনের শিক্ষা,
সেই কথাগুলি বলতে চেষ্টা করি আমার ছোট্ট মেয়েটিকে,
বারে বারে মনে হয় নাতনিকে কোলে নিয়ে-
হয়ত দিতে তুমি একই শিক্ষা,
কিন্তু চলে গেলে এত আগে।
সমুদ্রের কাছাকাছি যখনই যাই,
মনে হয় সমুদ্রের মতো তোমার বিরাট মনের সন্ধান পাই,
কত যুদ্ধ জাহাজ ভাসে সমুদ্রের বুকে,
ইচ্ছে করে মাথা রাখি বাবার বুকে
কিন্তু তুমি কেন চলে গেলে এত আগে?

বাগান করা তাঁর অনেকগুলো শখের মধ্যে একটি। বিভিন্ন দেশের মসজিদের স্থাপত্য দেখতেও তাঁর খুব ভালো লাগে। ২০১৬ সালে সপরিবারে হজ পালন করেছেন। বিবাহপূর্বকালে ওমরাহ করার পূর্বে তিনি মসজিদুল হারামের স্থাপত্য নিয়ে ব্যাপক লেখাপড়া করেন। ‘ক্বাবা’ ঘর প্রথম দেখার অনুভূতি নিয়ে তাঁর লেখা প্রকাশিত হয় তাঁর কলেজ সাময়িকীতে। ক্যামব্রিজের ইকো মসজিদ (Eco Mosque) তাঁর চোখে একটি অভাবনীয় স্থাপত্য কর্ম। তিনি তুরস্কের ব্লু মস্কের অতুলনীয় সৌন্দর্য অবলোকন করেছেন তাঁর পরম শ্রদ্ধেয় শাশুড়ি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আপোসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে।
শৈশবে জাতীয় শিশু সংগঠন ও নতুন কুঁড়ি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছেন। সাংস্কৃতিক মনের অধিকারী হয়ে তাই এই সংস্কৃতি চর্চাকে মানসিক স্বাস্থ্যের সহায়ক মনে করেন তিনি। ছিন্নমূল শিশু-কিশোরদের প্রতিষ্ঠান সুরভি শিশু-কিশোরদের তিনি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড যেমন- সঙ্গীত, ছবি আঁকা, কবিতা আবৃত্তি প্রভৃতি চর্চায় উদ্বুদ্ধ করেন।
করোনাকালীন দুঃসময়ে সমগ্র বিশ্বের মানুষের প্রতি তাঁর মমত্ববোধ প্রকাশ পেয়েছে। Conquer Covid-19, A global initiative স্থাপনের মধ্য দিয়ে তিনি কোভিড সংক্রান্ত যাবতীয় বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার মানুষের কাছাকাছি পৌঁছেছেন। তদুপরি সারা বিশ্বের শিশু-কিশোরদের জন্য আয়োজন করেছেন ছবি আঁকার অন লাইন প্রতিযোগিতা, স্কুল বন্ধ থাকায় শিশু-কিশোররা মনের ভাব প্রকাশ করেছে ছবির মাধ্যমে। যুক্তরাজ্যে বিভিন্ন স্থানে করোনাকাল সময়ে খাদ্য বিতরণ, মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ হয়েছে তাঁর নির্দেশনায়।
ডা. জুবাইদা বিজ্ঞান চর্চা ও উদ্ভাবন ছড়িয়ে দিতে চান। সেই লক্ষ্যে কোভিডকালীন সময়ে ভার্চুয়াল বিজ্ঞান মেলার আয়োজন করেন জেডআরএফ-এর সহযোগিতায়। তিনি মনে করেন বর্তমান বিশ্বের অনেক সমস্যাই বিজ্ঞানের সঠিক প্রয়োগ দ্বারা সমাধান সম্ভব। করোনাকালীন দুঃসময়ে কোভিড সচেতনতা সংক্রান্ত লিফলেট ও প্রয়োজনীয় ওষুধ কিভাবে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছাবে সেগুলো তিনি তদারকি করেছেন।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বিএনপি চেয়ারপারসন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আশু রোগমুক্তি ও সুস্বাস্থ্য কামনা এবং অসাধারণ, সংস্কৃতিমনা বিদূষী নারী ডা. জুবাইদা রহমানের জন্মদিন পালনে মক্কা, মদিনা ও বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্নস্থানে বিশেষ দোয়া, মোনাজাত ও তবারক বিতরণ করা হবে। মালয়েশিয়ায় পুত্রাজায়া মসজিদ, কাতার, জেদ্দা, দুবাই, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্নস্থানে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও সিলেট দরগা শরীফ, বগুড়া বাইতুর রহমান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, শহীদ জিয়ার জন্মস্থান বাগবাড়ী, গাবতলী পদ্মপাড়া মসজিদে আর রহমান, লাঠিগঞ্জ অন্ধ এতিমখানায় বিশেষ দোয়া ও খাদ্য বিতরণ করা হবে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওষুধ ও খাদ্য বিতরণ করা হবে। এছাড়াও যুক্তরাজ্যে ফুড ব্যাংক ও বেবী ব্যাংকে খাদ্য বিতরণ করা হবে।

লেখা সংগৃহিত