ড.আসিফ নজরুলের সঙ্গে আ’লীগ যা করেছে তা পাকিস্তান আমলেও ঘটেনি — মীর্জা ফখরুল

আপডেট: আগস্ট ১৯, ২০২১
0

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুলের কক্ষে তালা দিয়েছে ছাত্রলীগ। তাকে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের অনুসারী আখ্যা দিয়ে গণপিটুনির মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ছাড়া করার হুমকিও দিয়েছেন ছাত্রলীদের কেন্দ্রীয় নেতারা।

এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন ,
”আসিফ নজরুল সাহেবকে কীভাবে তালা লাগিয়ে দিয়েছে এবং কিভাবে তাকে কিভাবে থ্রেট করেছে। এটাকে কি কোনো সভ্য গণতান্ত্রিক দেশ বলবেন? এটা তো পাকিস্তানিদের থেকেও খারাপ।”

জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের ৪১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েলকে নিয়ে বেলা ১২টার দিকে বিএনপি মহাসচিব শেরে বাংলা নগরে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে পুস্পমাল্য অর্পন করেন এবং প্রয়াত নেতার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করেন।

এ সময়ে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, স্বেচ্ছাসেবক দলের গোলাম সারোয়ার, সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, ইয়াসীন আলী, সাদরেজ জামান, রফিক হাওলাদার, মনির হোসেন, ফখরুল ইসলাম রবিন, ডা. জাহিদুল কবির, নাজমুল হাসান, সরকার মো. নুরুজ্জামান প্রমূখ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

গত মঙ্গলবার মহানগর বিএনপির নবগঠিত কমিটির নেতা-কর্মীরা সকালে জিয়াউর রহমানের কবরে পুম্পমাল্য অর্পনের কর্মসূচিতে নেতা-কর্মীদের ওপর পুলিশি হামলার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার চন্দ্রিমা উদ্যানে প্রবেশে পুলিশ ব্যাপক কড়াতড়ি করে। স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ ২৫/২৬ জন নেতাকে পুলিশ কবরপ্রাঙ্গনে প্রবেশ করতে দেয়।

বিএনপি মহাসচিব পুলিশের আচরনে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “ গত পরশু আপনারা সাংবাদিকরা সব কিছু দেখেছেন। একটা সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি হওয়ার কথা। চারদিক থেকে নেতা-কর্মীরা এসে যেটা বরাবর করে এখানে মহান নেতার কবরে ফুলের স্তবক দিয়ে, জিয়ারত করে, মোনাজাত করে তারা চলে যায় এবং সেটাই ছিলো উদ্দেশ্য।”

“ নতুন একটা কমিটি হয়েছে কর্মীদের একটা আবেগ ছিলো। সেই আবেগ নিয়ে তারা সেদিন এখানে এসছিলো। এটাকে তারা সহ্য করতে পারেনি। কিছুতেই একটা ভালো বেশি জমায়েত হয় সেটা তারা সহ্য করতে পারে না এবং তখন তারা অস্ত্র নিয়ে আক্রমন করে। ১৮৭ রাউন্ড গুলি করেছে তারা(পুলিশ) নিজেরা স্বীকার করেছে। আমি এফআইআরটা দেখেছি। এফআইআরের মধ্যে বলা হয়েছে যে, ১৮৭ রাউন্ড গুলি করা হয়েছে। এ কিরে ভাই! এটা একটা গণতান্ত্রিক দেশ যে আমরা একেবারে গণতান্ত্রিক একটা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিও করতে পারবো না। এভাবে চলে না।”

তিনি অভিযোগ করে বলেন, “ বিভিন্ন জায়গায় ত্রাণ বিতরণেও বাঁধা দেয়া হচ্ছে। গতকাল নরসিংদীতে, যশোরে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা কিভাবে হামলা চালিয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে বাঁধা সৃষ্টি করছে যাতে বিরোধী দল মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, জনগনের কথা না বলতে পারে এবং জনগনকে সঙ্গে নিয়ে বিরোধী দল যেন এই ভয়াবহ দানবীয় সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে না পারে সেজন্য এই দমনপীড়নমূলক কাজ করছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।”

“আজকেও এখানে আসার আগে আমি শুনেছি, ২৫জনের মতো নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তাদেরকে বাঁধা দেয়া হয়েছে। আমরা গত পরশু এবং আজকে গ্রেপ্তারকৃত নেতা-কর্মীদের মুক্তি দেয়ার জন্য দাবি জানাচ্ছি এবং একই মিথ্যা মামলাগুলো প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।”

ফখরুল বলেন, “ এই সরকারের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে তারা এখানে একটা এক দলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এখানে অন্য কোনো রাজনৈতিক দল থাকবে না, ঠিক যেরকম বাকশাল তৈরি করেছিলো ১৯৭৫ সালে, সেইরকম একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চায় সম্পূর্ণ ফ্যাসিস্ট কায়দায়।”

“ পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো স্বৈরাচারী সরকার, কর্তৃত্ববাদী সরকার, ফ্যাসিবাদী সরকার তারা দীর্ঘকাল এভাবে টিকে আছে কি? থাকতে পারে নাই। এদেরকে(সরকার) পরাজিত করতেই হবে জনগনকে সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকারকে অবশ্যই পরাজিত করতে হবে।”