ঢাকার চারপাশের নদনদীর পানি বাড়তে পারে

আপডেট: আগস্ট ২৩, ২০২১
0

পদ্মা নদীর রাজবাড়ী অংশে পানি বাড়ছেই। এতে জেলার ৫ উপজেলার নিম্নাঞ্চলে ৭ হাজারের বেশি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে, সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। যমুনার পানি বিপৎসীমার প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছে, নীলফামারীতে তিস্তার বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও দুর্ভোগ কমেনি।

এমন পরিস্থিতিতে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র দেশের ৮টি জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলে জানিয়েছে। জেলাগুলো হলো কুড়িগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, কুষ্টিয়া, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর ও শরীয়তপুর। এসব জেলার নিম্নাঞ্চলে পানির উচ্চতা বেড়ে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হতে পারে। যমুনা নদীর সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে ও ধলেশ্বরী নদীর টাঙ্গাইলের এলাসিন পয়েন্টে আজ সোমবারের মধ্যে পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে।

রবিবার পর্যন্ত পর্যবেক্ষণে থাকা নদনদীর ১০৯টির মধ্যে ৫৮ পয়েন্টে পানি বেড়েছে, কমেছে ৪৫ ও অপরিবর্তিত রয়েছে ৬টি পয়েন্টের পানি। আর ৮টি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ১০ দিনের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী সপ্তাহে বাড়তে পারে ঢাকার আশেপাশের নদনদীর পানি। তবে তা নদীগুলোর অববাহিকায় বিপদসীমা অতিক্রমের সম্ভাবনা নেই।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের কর্মকর্তারা বলছেন, মূলত উজান থেকে আসা পুঞ্জীভূত পানি ঢল হয়ে ভাটি এলাকা বাংলাদেশের দিকে আসছে। বিশেষ করে গঙ্গা, পদ্মা ও ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় পানি দ্রুত বাড়ছে। আগামী এক সপ্তাহ পানি আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন তারা।

এদিকে ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে কুড়িগ্রাম সেতু পয়েন্টে গতকাল বিপদসীমার ৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর ফলে ধরলা অববাহিকায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে এসব এলাকার রোপা আমন ও সবজি ক্ষেত। জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমারসহ সব নদনদীর পানি বেড়ে এখন স্থিতিশীল রয়েছে। তবে বিভিন্ন স্থানে ভাঙন শুরু হয়েছে। বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছে পাউবো।

এছাড়া পদ্মা নদীর রাজবাড়ী অংশে পানি বাড়ছেই। এতে জেলার ৫ উপজেলার নিম্নাঞ্চলে ৭ হাজারের বেশি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ পয়েন্টে গতকাল ৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে পানি বিপদসীমার ৪৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পাংশা উপজেলার সেনগ্রাম পয়েন্টে ৮০ ও সদর উপজেলার মহেন্দ্রপুর পয়েন্টে বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। যমুনার পানি বিপৎসীমার প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছে। এদিকে পানি বৃদ্ধির কারণে জেলার অভ্যন্তরীণ সব নদ-নদীর পানিও বাড়ছে। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জেলার যমুনা নদীতীরবর্তী এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। কাজিপুর উপজেলার চরাঞ্চলের ৬টি ইউনিয়ন এবং চৌহালী উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে ২০টি বসতভিটাসহ বিস্তীর্ণ ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। নদীর তীর থেকে ঘড়বাড়ি ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন স্থানীয়রা।

পানি বৃদ্ধির ফলে পদ্মা তীরবর্তী বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। রাজবাড়ী সদর উপজেলার বরাট, মিজানপুর, খানগঞ্জ, কালুখালী উপজেলার রতনদিয়া, পাংশা উপজেলার বাহাদুর ও হাবাসপুর ইউনিয়ন এবং গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া, দেবগ্রাম ইউনিয়নের চরাঞ্চলের ২৭টি গ্রামের ৭ হাজার পরিবার পানিবন্দি জীবন কাটাচ্ছে।

নীলফামারীতে তিস্তার বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও দুর্ভোগ কমেনি। গতকাল পর্যন্ত সরকারিভাবে ১৮ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল বলছেন সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরা। ডিমলা উপজেলার পূর্বছাতনাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খাঁন বলেন, আমার ইউনিয়নের প্রায় ১ হাজার ১০০ পরিবার বন্যাকবলিত হয়। এখন পানি কিছুটা কমলেও ইউনিয়নের ঝাড়সিংহেরশ্বর ও পূর্বছাতনাই গ্রামের ৮০০ পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় আছে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া জানান, জুলাইয়ের মাঝামাঝি এক দফা ও আগস্টের শেষদিকে দেশে আরেক দফা বন্যা হয়। এ বছর এখনো বন্যা পুরোদমে শুরু হয়নি। তবে এখন যেভাবে নদনদীর পানি বাড়ছে, তাতে চলতি মাসের বাকি সময়ে উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।

এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস বলছে, আগামী ২ দিন পর দেশের বেশিরভাগ এলাকায় বৃষ্টি বাড়তে পারে, যা পরবর্তী ৩ দিন থাকতে পারে। বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের কারণে মৌসুমি বায়ু কিছুটা দুর্বল অবস্থায় থাকায় বৃষ্টি কম হয়েছে। এখন আবারও মৌসুমি বায়ু সক্রিয় হয়ে ওঠায় বৃষ্টি বাড়তে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে বাগেরহাটের মোংলায় ৩৩ মিলিমিটার। আর সবচেয়ে কম রাজধানীতে ৫ মিলিমিটার।