ঢাকার সবচেয়ে বড় সমস্যা শব্দ দূষণ ,বায়ু দূষণ –বাপার ওয়েবিনারে বিশেষজ্ঞদের মত

আপডেট: জুন ৫, ২০২১
0

“শহরের বাস্তুসংস্থানের উপর বায়ু এবং শব্দ দূষণের প্রভাব” শীর্ষক অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল ওয়েবিনার

বিশ্ব পরিবেশ দিবস-২০২১ উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস), স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ-এর যৌথ উদ্যোগে আজ ৫ জুন, ২০২১ শনিবার সকাল ১১.০০টায় “শহরের বাস্তুসংস্থানের উপর বায়ু এবং শব্দ দূষণের প্রভাব” শীর্ষক এক ওয়েবিনার ‘জুম’ প্লাটফর্মের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়।

বাপা’র সভাপতি; সুলতানা কামাল এর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক, শরীফ জামিল এর সঞ্চালনায় এতে সম্মানিত আলোচক হিসাবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন, সর্বজনাব হুমায়ন কবির, অতিরিক্ত মহাপরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর, বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, ডাঃ এ. এম. জাকির হোসেন, সাবেক পরিচালক, প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা ও রোগ নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর (আইইডিসিআর) ও আহ্বায়ক, পরিবেশ স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মসূচী, বাপা, ড. নীতিশ চন্দ্র দেবনাথ, জাতীয় সমন্বয়ক, ওয়ান হেলথ মুভমেন্ট বাংলাদেশ, ড. গুলশান আরা লতিফা, একাডেমিক উপদেষ্টা, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ স্টামফোর্ড ইউনির্ভাসিটি বাংলাদেশ, ড. মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, অধ্যাপক উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ড. মো. কামরুল হাসান, অধ্যাপক প্রাণীবিদ্যা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার, যুগ্ম সম্পাদক, বাপা এবং পরিচালক, স্টামফোর্ড বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)।

সভাপতির বক্তব্যে সুলতানা কামাল বলেন, প্রকৃতি আমাদেরকে তার সবকিছু উজাড় করে আমাদের হাতে তুলে দিচ্ছে অথচ আমরা প্রকৃতিকে সমুলে উজাড় করে দিচ্ছি। সম্প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রকল্পসমূহের ছাড়পত্র প্রদান সংক্রান্ত একটি মন্তব্যের বিষয়ে আলোকপাত করে তিনি জনস্বাস্থ্য পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর যে কোন প্রকল্প যেন সামনে না এগিয়ে যায়, সে জন্য সময়মত পরিবেশগত ছাড়পত্র/অনুমতি প্রদান কিংবা না প্রদানের সিদ্ধান্ত দৃঢ়তার সাথে গ্রহণ করার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর এবং মন্ত্রণালয়ের প্রতি তিনি আহবান জানান। তিনি বলেন প্রকৃতি যদি ঠিক না থাকে তবে প্রাণীজগতও বিলুপ্ত হয়ে যাবে, প্রকৃতি মানুষের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্দ অংশ তা সরক্ষণের দায়ীত্বও আমাদের রয়েছে।

অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, কোভিড ১৯ এর কারনে প্রকৃতির রি-ইস্টোরেশন হয়েছে। বায়ু ও শব্দ দূষণ শুধুমাত্র বর্তমানে রাজধানী ও শহর অঞ্চলে সীমাবদ্ধ নয়, অনেকক্ষেত্রে দূষণ ছোট ছোট জেলা শহর সহ, উপজেলা ও পৌরসভা অঞ্চলে বিস্তৃতি লাভ করেছে। বড় বড় শহরগুলোতে বায়ু দূষণের মাত্রা বাংলাদেশ জাতীয় আদর্শ বায়ু মানমাত্রা ছাড়িয়ে প্রায় ৩ থেকে ৫ গুন বেশী বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজধানীর কোন এলাকায় দিনের বেলা শব্দ দূষণের মাত্রা জাতীয় আদর্শ মানমাত্রার মধ্যে পাওয়া যায়নি। তিনি মানুষের স্বাস্থ্য, প্রকৃতি, পরিবেশ ও বাস্তুসংস্থানকে রক্ষা ও সমুন্নত রাখার জন্য বায়ু ও শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রনে কার্যকরী ভূমিকা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট আহবান জানান।

হুমায়ন কবির বলেন, দীর্ঘদিন ধরে প্রকৃতিকে ধংসের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এখননি তা বন্ধ করতে হবে। এ নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর কাজ করছে বলেও তিনি জানান। তিনি বলেন, শব্দ ও বায়ুদূষণ বর্তমানে অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে মানুষের মাঝে গনসচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজন। তিনি আরো বলেন পরিবেশ অধিদপ্তর বিআরটিসি, বিআরটিএ এবং দেশের সকল সিটি কর্পোরেশনকে তাদের সকল প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে শব্দ ও বায়ুদূষণের বিষয়টি অন্তভূক্ত কারার অনুরোধ জানান এবং তারা সবাই এ বিষয়ে কাজ করবে বলে নিশ্চিত করেছেন। উদ্ভিদ এর বংশবৃদ্ধি ও প্রাণীজগতের অবাধ বিচরণ ঠিক রাখতে পারলে আমাদের প্রকৃতি ভালো থাকবে আমরা ভালো থাকবো।

ডাঃ এ. এম. জাকির হোসেন বলেন, বায়ু দূষণ ক্যান্সারসহ নানা রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে, অপরদিকে শব্দ দূষণের কারণে বয়স্ক মানুষ, নারী এবং শিশুরা সবচেয়ে বেশী ঝুঁকিতে থাকে। তিনি স্বাস্থ্যগত ক্ষতি এবং ঝুঁকি কমানোর জন্য বায়ু ও শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণের ওপর জোর আরোপ করেন।

ড. গুলশান আরা লতিফা বলেন, আমরা প্রকৃতির কাছ থেকে বেশী বেশী চাহিদা করবো আর প্রকৃতিকে ধবংস করবো এটা হতে পারেনা, সেই জন্য প্রকৃতির ব্যবহারে আমাদের সংযোমী ও মৃতব্যয়ী হতে হবে। বায়ু ও শব্দদূষণের ফলে মানুষ ও অন্যান্য প্রানীর প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

ড. নীতিশ চন্দ্র দেবনাথ বলেন, মানুষ সভ্যতার ক্রমবিকাশের কারণে প্রকৃতি থেকে সরে এসছে। তিনি বলেন গত ৩০ বছরে প্রায় ৩৫টি নতুন রোগের সৃষ্টি হয়েছে প্রকৃতি ও পরিবেশের উপর নির্দয় হওয়ার কারণে। প্রকৃতির সঠিক ব্যবহার না করলে প্রকৃতি আমাদের উপর প্রতিশোধ নিবে এটাই স্বাভাবিক। তাই প্রকৃতিকে সংরক্ষণে আমাদের নিজ নিজ যায়গা থেকে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহবান জানান তিনি।

ড. মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, নগরায়নের দূষণ আমাদের ইকোসিস্টেমের উপর বিরুপ প্রভাব ফেলছে। যেভাবে উদ্ভিদের উপর দূষনের প্রভাব পড়ছে তা অত্যন্ত ভয়ানক। ইকোসিস্টেমের প্রধান উৎস হচ্ছে সবুজ উদ্ভিদ, এই উদ্ভিদগুলো দূষণের ফলে এবং অত্যধিক শব্দদূষণের ফলে গাছে কোন পাখি বসতে পারছে না। তিনি আরো বলেন উদ্ভিদ ও প্রাণীজগত উভয়েরই বংশ বিস্তারে একে অন্যের সাথে কোন না কোন ভাবে সম্পৃক্ত। শব্দদূষনের ফলে পাখির এবং বায়ুদূষণের ফলে উদ্ভিদের বংশ বৃদ্ধিতে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।

ড. মো. কামরুল হাসান বলেন, মাত্রাতিরিক্ত বায়ু ও শব্দদূষণের ফলে প্রাণীকূল মারাত্নকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। তাদের বংশ বৃদ্ধিতে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। সবাই নিজ নিজ যায়গা থেকে সচেতন হলে মানুষ, প্রাণীকূল ও প্রকৃতির সহাবস্থানের মাধ্যমে একটি সুন্দর পৃথিবী গড়ে উঠবে বলে তিনি আশা করেন।