ঢালিউডে নিষিদ্ধ জায়েদ খান

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২২
0

ঢালিউড সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির বর্তমান সময়ের আলোচিত নাম জায়েদ খান। চলচ্চিত্রে অভিনয় করে তেমন একটা পরিচিতি না পেলেও শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকান্ডের জন্য আলোচনায় আসেন তিনি। সাম্প্রতিক সময়ে শিল্পী সমিতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সবচেয়ে বেশি পরিচিতি পেয়েছেন জায়েদ খান। বিতর্কিত এই ‘সাধারণ সম্পাদক’কে এবার নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো।

চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট ১৮ টি সংগঠনের পক্ষ থেকে জায়েদ খানকে অবাঞ্ছিত আখ্যা দিয়ে আজীবন নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ৮ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) এফডিসিতে এক জরুরি বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেন সংগঠনের নেতারা। ঐ বৈঠকে আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় চলচ্চিত্রের সব মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে এ শিল্পের উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাবেন। প্রযোজক সমিতির স্টাডি রুমে ১৮ সংগঠনের পক্ষে মুখপাত্র চিত্রনায়ক আলমগীরের নেতৃত্বে আয়োজিত ঐ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বরেণ্য নির্মাতা কাজী হায়াৎ, দেলোয়ার জাহান ঝন্টু, খসরু, আবু মুসা দেবু, গুলজার, সোহান, সামছু প্রমুখ।

এর আগেও একবার ১৮ সংগঠনের পক্ষ থেকে বয়কট ঘোষণা করা হয়েছিলো। ২০২০ সালের ১৫ জুলাই এক সাংবাদিক সম্মেলনে এমন ঘোষণা দিয়েছিলেন বাংলাদেশ পরিচালক সমিতির তৎকালিন সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার। এফডিসির জহির রায়হান কালার ল্যাব হলরুমে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে সংবাদ সম্মেলনে জায়েদ খানের বিরুদ্ধে অভিযোগনামা তুলে ধরেন বাংলাদেশ পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার।

ঐ সাংবাদিক সম্মেলণে মুশফিকুর রহমান গুলজার বলেছিলেন, “আপনারা জানেন, চলচ্চিত্র নির্মাণে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি নির্মাণ ব্যয় কমানোর লক্ষ্যে এবং সুষ্ঠ পরিবেশ ও আস্থা ফিরিয়ে আনতে এ বছরের শুরুর দিকে আমরা চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সকল সংগঠন একত্রে মিলিত হয়ে ‘চলচ্চিত্র নির্মাণ সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন কমিটি’ নামে একটি কমিটি গঠন করি। আমাদের সকল সমিতি এই কমিটির নীতিমালার সাথে একমত পোষণ করলেও শুধুমাত্র ব্যক্তি স্বার্থের কারণে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি এর বিরোধীতা করে। আমরা তাদেরকে বোঝানোর জন্য বেশ কয়েকজন শ্রদ্ধেয় সিনিয়র শিল্পীদের নিয়ে সভা করি। যাদের অধিকাংশই আবার শিল্পী সমিতির সম্মানিত উপদেষ্টা। তারাও আমাদের নীতিমালাকে প্রশংসা করেন এবং চলচ্চিত্রের স্বার্থে নীতিমালাটিকে মেনে নেবার জন্য শিল্পী সমিতির নেতৃবৃন্দকে অনুরোধ করেন। কিন্তু তারপরও শিল্পী সমিতির নেতৃবৃন্দ আমাদের সকলের মতামতের ভিত্তিতে তৈরি নীতিমালাকে মেনে নেননি।”

১৮ সংগঠনের পক্ষ থেকে তিনি বলেন, “বিশ্বস্তসূত্রে আমরা জানতে পেরেছি, এই নীতিমালার সবচেয়ে বেশি বিরোধীতা করছেন শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান। তার কারণেই শিল্পী সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদ অন্যান্য সকল সমিতি কর্তৃক প্রণয়নকৃত নীতিমালা মেনে নিতে পারছেন না। এছাড়াও জায়েদ খানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন শিল্পী-কুশলীকে হয়রানি করা, মিথ্যা মামলা দেয়া এবং ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে বিভিন্ন অপকর্ম করার অনেক অভিযোগ এসেছে।”

জায়েদ খান অর্থ আত্মসাত করেছিলেন এমন অভিযোগ তুলে ধরে গুলজার বলেন, “জায়েদ খান ২০১৯ সালের ৩ এপ্রিলের জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস’র সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে খরচের জন্য নগদ ৬ লক্ষ টাকা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কাছ থেকে সরাসরি গ্রহণ করেন। কিন্তু জাতীয় কমিটি কর্তৃক গঠিত অর্থ সংক্রান্ত কমিটির চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ বাচ্চু সাহেব জায়েদ খানকে বারবার চিঠি দিয়ে সভায় উপস্থিত থেকে ৬ লক্ষ টাকার হিসাব বুঝিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করলেও তিনি কোনো সভায় উপস্থিত হননি এবং হিসাবও দেননি।

এসব কারণে গতকাল চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট ১৮ সংগঠনের এক জরুরি সভায় জায়েদ খানকে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকাণ্ড থেকে বয়কট অর্থাৎ বর্জন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এখন থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য তার সাথে কেউ কাজ করবেন না এবং তার সাথে কেউ কোনো কাজে অংশগ্রহণ করবেন না।”

ঐ সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়েছিলো, চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো নিয়ে গঠিত চলচ্চিত্র পরিবারের প্রণয়নকৃত নীতিমালা মেনে যারা কাজ করবেন শুধুমাত্র তাদেরকে নিয়েই এখন থেকে চলচ্চিত্র নির্মিত হবে। যারা এই নীতিমালা মেনে কাজ করতে অপারগতা প্রকাশ করবেন তাদেরকে নিষিদ্ধ করা হবে। নিষিদ্ধ শিল্পী-কুশলীদের নিয়ে যে সকল প্রযোজক অথবা পরিচালক কাজ করার উদ্যোগী হবেন কিংবা কাজ করবেন তাদেরকে তাদের নিজ নিজ সমিতির সদস্যপদ থেকে গঠনতন্ত্র মোতাবেক বহিষ্কার করা হবে, তাদের সদস্যপদ বাতিল করা হবে।