তাইওয়ান সীমানাপার করে নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করল চীন

আপডেট: ডিসেম্বর ২৬, ২০২২
0

ফের তাইওয়ান সীমানাপার করে নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করল চীন। তাইওয়ানের দিকে গত ২৪ ঘণ্টায় ৭১টি যুদ্ধবিমান ও ৭টি জাহাজ পাঠিয়েছে চীন। সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এ দাবি করেছে। খবর আল-জাজিরার।

বিবৃতিতে দ্বীপরাষ্ট্র তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, শনিবার মার্কিন বার্ষিক প্রতিরক্ষা বিলে তাইওয়ান সম্পর্কিত বিধান পাস হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল চীন। যুক্তরাষ্ট্রের ‘সাহস ও উসকানি’র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় তাইওয়ানের প্রতি এটি এখন পর্যন্ত চীনের সবচেয়ে বড় সামরিক শক্তি প্রদর্শন হিসেবে দেখা হচ্ছে।

তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাতে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল-জাজিরা জানিয়েছে, ৭১টি চীনা যুদ্ধবিমানের মধ্যে ছিল ১৮টি জে-১৬, ১১টি জে-১ ফাইটারম ছয়টি এসইউ -৩০ ফাইটার এবং ড্রোন।

তাইওয়ান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, ৪৭টি চীনা যুদ্ধবিমান তাইওয়ান প্রণালীর মধ্যরেখা অতিক্রম করেছে। তারা স্থলভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার পাশাপাশি নিজস্ব নৌবাহিনীর জাহাজগুলির মাধ্যমে চীনা পদক্ষেপগুলো পর্যবেক্ষণ করছেন।

এসব যুদ্ধবিমান মহড়ার বিষয়ে গতকাল রবিবার এক বিবৃতিতে চীন জানিয়েছে, তারা তাদের শাসিত দ্বীপের (তাইওয়ান) ‘চারপাশে সমুদ্র এবং আকাশপথে যৌথ যুদ্ধ প্রস্তুতি টহল এবং যৌথ ফায়ারপাওয়ার স্ট্রাইক ড্রিল’ পরিচালনা করেছে। তবে পিপলস লিবারেশন (পিএল) আর্মি বলেছে, এই মহড়া ছিল ‘বর্তমান মার্কিন-তাইওয়ানের উত্তেজনা এবং উসকানির দৃঢ় প্রতিক্রিয়া’।

পিএলএর ইস্টার্ন থিয়েটার কমান্ডের মুখপাত্র শি ই রবিবার রাতে এক বিবৃতিতে জানান, মার্কিন প্রতিরক্ষা ব্যয় বিলকে চীন একটি কৌশলগত চ্যালেঞ্জ বলে থাকে। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের ক্ষেত্রে ওই আইনে তাইওয়ানের সঙ্গে বর্ধিত নিরাপত্তা সহযোগিতার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে এবং উদীয়মান প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি, প্রস্তুতি এবং সরবরাহের ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে বর্ধিত সহযোগিতার প্রয়োজনের কথাও উল্লেখ করেছে।

বলা হচ্ছে, সম্প্রতি অনুমোদিত মার্কিন প্রতিরক্ষা ব্যয় বিলে তাইওয়ান-সম্পর্কিত বিধানের কারণে বেইজিং ক্ষুব্ধ হয়েছে। গত শুক্রবার তাইওয়ানের সঙ্গে বর্ধিত নিরাপত্তা সহযোগিতা অনুমোদন করে ৮৫৮ বিলিয়ন ডলারের প্রতিরক্ষা ব্যয় বিলে স্বাক্ষর করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এরপরই চীন-তাইওয়ান সম্পর্কে উত্তেজনার পারদ উপরের দিকে উঠছে।

তাইওয়ান ইস্যুতে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর দীর্ঘদিন ধরেই উত্তেজনা চলছে। ১৯৪৯ সালে চীনে কমিউনিস্টরা ক্ষমতা দখল করার পর তাইওয়ান দেশটির মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এরপর থেকে তাইওয়ান নিজস্ব সরকারের মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসছে। যদিও তাইওয়ানকে বরাবরই নিজেদের একটি প্রদেশ বলে মনে করে থাকে বেইজিং।

তাইওয়ানের রাষ্ট্রপতি সাই ইং-ওয়েন সোমবার সকালে একটি সামরিক অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় বলেন, ‘স্বৈরাচারিতার ক্রমাগত সম্প্রসারণের’ কারণে তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা ক্ষমতা বাড়ানোর প্রয়োজন। ’

সমবেত অফিসারদের তিনি বলেন, ‘আমরা যত বেশি প্রস্তুতি নেব, আগ্রাসনের প্রচেষ্টার সম্ভাবনা ততো কমবে। আমরা যত বেশি ঐক্যবদ্ধ হব, তাইওয়ান ততো শক্তিশালী এবং নিরাপদ হবে। তিনি আরও বলেন, চীনা যুদ্ধবিমানের গতিবিধির ওপর নজর রাখতে মিসাইল সিস্টেমের ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া তাইওয়ানের রণতরীও সজাগ রয়েছে চীনা আগ্রাসী পদক্ষেপের আবহে।

উল্লেখ্য, চীনের সামরিক বাহিনী প্রায়শই তাইওয়ানের সীমা লঙ্ঘন করে সামরিক মহড়া করে থাকে। তাইওয়ানের সমর্থনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোনও সরকারি পদক্ষেপ করলে তার পরিপ্রেক্ষিতেও শক্তি প্রদর্শন করতে সামরিক মহড়াকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে চীন।