তারেক রহমানের শুনানিতে এ জে মোহাম্মাদ আলী : ‘ আমার ৪৫ বছর আইন পেশায় এ অবস্থা আগে দেখিনি‌`

আপডেট: আগস্ট ১০, ২০২৩
0

প্রিন্ট, ইলেকট্রিক ও অনলাইনসহ গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচার বন্ধে করা রিট আবেদনে তারেক রহমানের ঠিকানা ভুল থাকায় তা সংশোধন করে আবেদন করতে বলেছেন হাইকোর্ট।

বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) বিচারপতি মো: খসরুজ্জামান ও বিচারপতি মো: খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ বিষয়ে জারি করা রুল শুনানির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন।

এরআগে আদালতে শুনানির শুরুতে তারেক রহমানের মামলার শুনানি থাকায় হাইকোর্ট বেঞ্চের সামনে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করার বিষয়টি আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তারেক রহমানের আইনজীবী ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী।

তিনি বলেন, ‘আমরা আদালতের অফিসার। এখানে পুলিশ কেন। এখানে আদালতের সামনে পুলিশ আনা দুঃখজনক। আমি এখানে ৪৫ বছর আইন পেশায়, এ অবস্থা আগে দেখিনি।’

এসময় আদালত তার কাছে জানতে চান তিনি কার পক্ষে কিভাবে সাবমিশন করছেন।

জবাবে এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, আমি একজন কোর্ট অফিসার হিসেবে বলছি। এরপর এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, নোটিশ দেয়া ছাড়া একজনের বিষয়ে আদেশ দেয়া যায় না। তিনি আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, ‘তারা এসেছেন রাজনৈতিকভাবে। পলিটিকাল মোটিভেটেড হয়ে এসেছে।’

এরপর ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘তারেক রহমান ৬, মইনুল রোডের বাড়িতে ছিলেন। তারপর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে গেছেন। এরপর চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গেছেন। তিনি পালিয়ে যাননি। এখানে রাজনৈতিক নেতা এসেছেন অরেক রাজনৈতিক নেতার বক্তব্য প্রচার বন্ধে, যা বিশ্বে অস্বাভাবিক ঘটনা।’

অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, ‘তারেক রহমান পলাতক। অতিসম্প্রতি আমরা দেখছি মিটিংয়ে তার ভিডিও বক্তব্য প্রচার করা হচ্ছে। এতে আদালতের আদেশ লঙ্ঘন করা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘এখানে তারেক রহমানের সাজা হবে না। ফাঁসি হবে না।’

এসময় সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘আদালতে রাজনৈতিক কথা বলেন কেন।’

এরপর আইনজীবী সাইদ আহমেদ রাজা বলেন, ‘জারিকারকের রিপোর্ট সামনে এসেছে। আদালতই এটা সংশোধন করে নিতে পারেন।’

তখন আদালত বলেন, ‘আবেদন ছাড়া কি কারেকশন করা যায়? এখানে আইনের দৃষ্টিতে দুই পক্ষ নেই, এক পক্ষ আছে।’

এরপর আদালত ঠিকানা সংশোধন করার জন্য আবেদন দিতে আদেশ দেন।

আদালতে এ বিষয়ে আজ শুনানি করেন বিএনপিপন্থী আইনজীবী ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদীন, সাবেক সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকন, বদরুদ্দোজা বাদল, বিএনপির আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল ও সাবেক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল।

অপরদিকে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আওয়ামীপন্থী আইনজীবী ও সাবেক খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট সানজিদা খানম ও অ্যাডভোকেট সাইদ আহমেদ রাজা। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।

এর আগে গত ৮ আগস্ট এ মামলার শুনানি নিয়ে আদালতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের মধ্যে হট্টগোল হয়। ওইদিন উভয় পক্ষের শুনানি শেষে হাইকোর্ট বলেন, রুলস অনুযায়ী অবশ্যই নোটিশ দিতে হবে তারেক রহমানকে। তবে সেটা কোন প্রক্রিয়ায় তার উপায় খুঁজতে হবে। বিকল্প পদ্ধতি বের করতে হবে। এরপর এ বিষয়ে আদেশের জন্য বৃহস্পতিবার দিন রাখেন।

২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচার নিয়ে এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আবু তাহের মো: সাইফুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রুলসহ অর্ন্তর্বতীকালীন এ আদেশ দেন।

একইসাথে তারেক রহমানের বিদেশে অবস্থানের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানাতে পররাষ্ট্রসচিবকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তারেক রহমানের পাসপোর্টের মেয়াদ বিষয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) একটি প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আদেশ পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে জানাতে বলা হয়েছে।

রুলে তারেক রহমানের বক্তব্য প্রকাশ ও প্রচার নিষিদ্ধ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে কেন বিবাদিদের নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। তথ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, আইনসচিব, পররাষ্ট্রসচিব, আইজিপি, বিটিভির মহাপরিচালক, বিটিআরসির চেয়ারম্যান, একুশে টিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক, দৈনিক কালের কণ্ঠের সম্পাদক ও তারেক রহমানসহ বিবাদিদের চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।